দেশের প্রধান শাসক বলেছিলেন, ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’। বাস্তবে কিন্তু ‘খাওয়া এবং খেতে দেওয়া’ দুটোই পুরোদমে চলছে। আপনি যদি কোনও রকম হয়রানি ছাড়াই রেশন বা আধার কার্ড করাতে চান, তবে এই অভিজ্ঞতা সম্ভবত আপনার হয়েছে। মনে মনে অনেকেই হয়তো ভাবি যদি আমাদেরও একটা মুন্নাভাই থাকত! বাস্তবে মুন্নাভাই নেই, আছে হাঁ করে থাকা এলাকার ‘দাদারা’!
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিশুদের পুষ্টি ইত্যাদি নানান নিরিখে পিছিয়ে পড়লে কী হবে, দেশ কিন্তু তরতরিয়ে এগোচ্ছে, দুর্নীতির মাপকাঠিতে । 180টি দেশকে নিয়ে করা দুর্নীতি বিষয়ক প্রামাণ্য আন্তর্জাতিক সমীক্ষা থেকেই এই চিত্র বেরিয়ে আসে। 1995 সাল থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রত্যেক বছর এই সূচক প্রকাশ করে। মে 2020 থেকে মে 2021পর্যন্ত সময়ে সমীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট প্রকাশিত হয় 2022 জানুয়ারিতে। এই সূচক অনুযায়ী 2020 ও 2021 এই দুবছরে ভারতের অবস্থান যথাক্রমে 86 ও 85 যা খুবই উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, 2014 সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন ক্ষমতায় আসে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করে, তখনও সারা বিশ্বের দুর্নীতির ক্রম তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল ৮৫। অর্থাৎ মোদী জমানায় এই নিরিখে কোনও উন্নতি হয়নি। স্বনির্ভর ভারত গড়তে দুর্নীতি যে একমাত্র বাধা তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেমন স্বীকার করেছেন তেমনই সব রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরাই জানেন যে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় কাঁটা এই দুর্নীতি।
দুর্নীতি করাপ্শান পারসেপশন ইনডেক্সকে (corruption perception index) নির্দিষ্ট অবস্থান সূচিত করার জন্য একটি স্কেল ব্যবহার করা হয় যার নিম্নমান 0(উচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত) এবং সর্বোচ্চ মান 100(সম্পূর্ণ স্বচ্ছ)।ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি অনুযায়ী সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকায় ডেনমার্ক, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকায় রয়েছে সিরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান। ভারতের(40) মতো চিন(45), পাকিস্তান(28), বাংলাদেশ(26) ও ইন্দোনেশিয়া (38) স্কোরও 50 নীচে যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন:হলোকস্ট: বিদ্বেষ-সেতুতে জোড়ে ভারত ও জার্মানি
করাপ্শান পারসেপশন ইনডেক্স মূলত সরকারি ক্ষেত্র ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মূল্যায়ন করে।সাধারণ কথায় দুর্নীতি বলতে আমরা বুঝি সরকারি পদের সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে ঘুষ নেওয়াকে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও বিচারবিভাগের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা খুব একটা থাকে না।
সিপিআই বা করাপ্শান পারসেপশন ইনডেক্সের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে কিছু প্রশ্নও অবশ্য রয়েছে। সারা বিশ্বে দুর্নীতির মাত্রা বার্ষিকভাবে পরিমাপের জন্য ইউরোপিয়ান ব্যাঙ্ক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট,ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক বিজনেস এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ পারফরম্যান্স সার্ভে, ফ্রিডম হাউজ নেশন ইন ট্রানজিট ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য সূত্রের ওপর নির্ভর করা হলেও সবসময় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না,আবার একই দেশের বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তবে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টই সাধারণভাবে প্রামাণ্য বলে মনে করা হয়।
প্রচারের বিপুল ঢক্কা নিনাদ সত্ত্বেও মোদী জমানায় সাত বছরে ভারত দুর্নীতির নিরিখে একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে
পূর্ব কর্ণাটকে মাটির জলে ইউরেনিয়াম!
ম্যানুয়াল স্ক্যাভেন্জারদের জীবনযুদ্ধের অমানবিক ও অবর্ণনীয় সংগ্রাম।
উবার ইটসের মহাকাশ অভিযান
ভারতে অপুষ্টি দূরীকরণে খাদাসংক্রান্ত বিল ও প্রকল্পগুলি কতটা কার্যকর?