‘কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্য্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজের অন্নবস্ত্র উপার্জন করুক’ মতিচূর-এর প্রথম খন্ডে বেগম রোকেয়ার এই কথাগুলোকে লালপুর শিবগঞ্জের বাসিন্দা রফিজা পাইক জীবনের ধ্রুব সত্য হিসেবে মেনে নিয়ে এগিয়ে চলছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু যেন বদলে যায়। আঠারোর গন্ডি পার করার সঙ্গে সঙ্গেই রফিজাকে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কারণ রফিজার পড়াশোনা চালানোর সামর্থ্য পরিবারের নেই।
বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সেদিন রফিজাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। উপায় ছিল না আর কিছু। বারবার মনে আসছিল কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সে দিনও ছিল রফিজার বিয়ে। ষোল বছর বয়সী রফিজাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল কিন্তু বাধ সাধে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ নামক একটি সংস্থা। রফিজা নিজেও এই সংস্থার সদস্যা ছিল। কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টায় ছাত্রীদের নিয়ে তৈরী স্বয়ংসিদ্ধা সংস্থা। স্কুলের নাবালিকা পড়ুয়াদের বিয়ে বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই সংস্থার ভূমিকা অনবদ্য। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর রফিজার ইচ্ছা ছিল ইংরেজি নিয়ে কলেজে পড়বে, আরও অনেক রফিজাদের ইংরেজি পড়াবে। এসব যেন তার কাছে এক স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।
দিনমজুর বাবার অভাব অনটনের সংসার ছেড়ে তুলনামূলক ভাল পরিবারে রফিজার বিয়ে হয়। বাবা খাওয়াতে পারবে না দেখে বিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু যেই পরিবারে বিয়ে দেওয়া হল তারাও কি খেতে দেয়? মেয়ে মানুষ সহ্য করে নেয় অনেক কিছু, রফিজাও সহ্য করতে থাকে। বছর ঘুরে রফিজা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার বাড়তে থাকে। গত ডিসেম্বর মাসের 21 তারিখে রফিজাকে ওড়নায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পাড়া-প্রতিবেশী জানাজানি হওয়ার পর কোনওরকমে রফিজাকে তার শ্বশুরবাড়ির লোক ডায়মন্ড হারবারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: অমৃতার ‘ন হন্যতে’ হয়ে ওঠা
দীর্ঘ পাঁচ দিন ধরে রফিজা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে। জ্ঞান ফিরে আসার পর জানতে পারে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার এক বছরের দুধের শিশুটিকে আটকে রেখেছে। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে রফিজা মেয়েকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনে। তবে রফিজার উপর হয়ে যাওয়া অত্যাচারের শাস্তি থেকে রফিজার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এখনও বহু দূরে। এসবে আক্ষেপ হয় রফিজার, তবুও তার ইচ্ছাশক্তি এখনও জীবিত। সে আবার পড়াশোনা শুরু করতে চায়, জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। নিজের মেয়ের জন্য কিছু করতে চায়। রফিজা বলে ‘আমি কিছুতেই নিজের মেয়েকে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে পৃথিবীতে থেকে যেতে দেব না।‘
কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি ও স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা রফিজাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। কয়েক বছর পর হয়তো আমরা এই রফিজাকে অন্য কারও জীবনে রোকেয়া হয়ে উঠতে দেখব। সদ্য মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে, গণনাতীত শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে যে বলতে পারে, ‘আমি পড়াশোনা করব’, সে মেয়েরাই তো রোকেয়া হয়ে ওঠে, অ-সাধারণ হয়ে ওঠে।
খাদ্যের অতিরিক্ত সংরক্ষণ এবং তার ব্যবহারের কারণে মানুষের পাশাপাশি পৃথিবীও অসুস্থ।
হিজাব বা অন্য পোশাক নয়,মৌলবাদী শাসকদের আসল টার্গেট নারীর শিক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতা।
স্বতন্ত্র ভাবনাই জন্ম দেয় নতুন সম্ভাবনার, ভারতে সমষ্টিবাদের রাজত্ব উদ্ভাবন ও নতুন পথের স্বীকৃতি দেয়
সংস্কৃতির নামে মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা জালিকাট্টু চলছে, বিরোধিতা করে না কোনও রাজনৈতিক দলই
গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়ার সপরেও বেঁচে ফিরে রফিজা নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখে মেয়েকে ঘিরে।
সাত বছর পরেও সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা হয়নি, এবার তৃতীয় লিঙ্গের জন্য কারাগারে আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস