শহীদ বরকতের কলেজ বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ। তখনও দুই বাংলার মাঝে সীমারেখা টানা হয়নি। যে গুলি তিনি ঢাকায় খেয়েছিলেন, তা তিনি কলকাতায়ও খেতে পারতেন। ভাষার জন্য আবেগ, আন্দোলন, আত্মবলিদান কোনও সীমারেখা মানে না। বিশ্বায়নের প্রকোপে ইতিমধ্যেই শেষ নি:শ্বাস ফেলেছে বহু ভাষা, ধুঁকছে বহু। সাম্রাজ্যবাদের ভাষা যত ভাষার মাধুর্য মলিন করেছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলা, বলছিলেন অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। উপলক্ষ ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন।
শিশির মঞ্চে সেই অনুষ্ঠানে খানিক রাগ আর অভিমানে নিজের মাতৃভাষার রক্তক্ষরণে বাঙালির সামনে যেন আয়না তুলে ধরছিলেন তিনি। ভাষাদিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু গান, আবৃত্তি, বা বাংলাভাষা নিয়ে গদগদ হয়ে ওঠার দিন নয়। অতীতে হত সে সব। তিনি বলছিলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এখন অনেকেই ‘বিশুদ্ধ’ বাংলা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু, বিশুদ্ধ বাংলা বলে কিছু হয় না। বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, নজরুল সকলেই সংস্কৃত, উর্দু, আরবি থেকে শব্দ ব্যবহার করেছেন। বাংলা ভাষায় এরকম বহু ভাষা থেকে শব্দ আমদানি করার উদাহরণ রয়েছে। কথা হচ্ছে, ভাষার উচ্চারণ বা ব্যবহারের স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। এ বিপন্নতা এমনই যে, আমরা ভাষাগত মতাদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি। আমরা ভাষা দিবস উদযাপন , বাংলায় কথা বলা - সবই করছি, কিন্তু তার প্রতি আন্তরিক হতে ভুলে গিয়েছি।
আরেকটি কথাও মজা করে বলছিলেন যে, আজকাল আমরা একটু বেশি কথাবার্তা বলি। একুশ শতকের আগে আমরা এত কথাবার্তা বলিনি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আমরা, তথাকথিত শিক্ষিতরা, বেশিরভাগ সময়ই কথা-বার্তা বলি ইংরেজি ভাষায়। শুধু তাই নয়, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি মিশিয়ে একধরনের জগাখিচুড়ি ভাষা বলার চল হয়েছে এখন। ‘কেন কি’, ‘আমাদেরকে’, ‘তোমাদেরকে’ –এইধরনের শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে প্রথম সারির সংবাদপত্রে। ইংরেজি নিয়ে আমাদের ভাব-ভঙ্গিমা এমন হয়েছে, যেন রবীন্দ্রনাথ ইংরেজিতে গীতাঞ্জলি রচনা করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন অথবা মধুসূদন মেঘনাদবধকাব্য ইংরেজিতেই লিখেছিলেন। আগে যে ভাষা আমরা প্রয়োজনে ব্যবহার করতাম, সেই ভাষাই আজ সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে, শুধুমাত্র ক্ষমতার দাপটে দখল করেছে আমাদের ঘর-বাহির।
বাংলার এক চারণ কবির গান শুনে ভালবেসে তাঁর হাতে নিজের উপহার পাওয়া উডি গাথরির বারো তারের গিটার তুলে দিয়েছিলেন পিট সিগার। তিনি কবীর সুমন। তাঁর মাতৃভাষা বাংলা। কর্মসূত্রে জীবনের অনেকটা সময় জার্মানি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে কাটানোর সময়ও তিনি মাতৃভাষায় বই লিখেছেন, বিভিন্ন লেখা পাঠিয়েছেন বাংলা পত্র-পত্রিকায়। তিনি শিখেছেন, লিখেছেন, গেয়েছেন বাংলা ভাষাতেই। মাতৃভাষার প্রতি নিজের বাংলা খেয়াল উৎসর্গ করতে ২১শে ফেব্রুয়ারি শিশির মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭২ বছরের তরুণ কবিয়াল। তিনি বলেন,আধুনিক গাইতে আর তাঁর ইচ্ছে নেই। এসময়ে তাঁর প্রতিবাদের ভাষা শুধুই বাংলা খেয়াল। দু’টি বসন্তের রাগে তিনি গাইলেন-বর্ণমালার সুরে বাংলা ভাষায় গান..এ ভাষাতেই খেয়াল গাওয়া আবহমান আবহমান.. পল্লবে পল্লবে সেজেছো তুমি ফাল্গুন..বসন্তের আলোছায়ায় সময়ের গুনগুন..এই বসন্তে শাহিনবাগ জাগে...আজদি অধিকার..আজাদি এ ভাষার...
প্রেমের আকুতিতে, পরম স্নেহে, রাগে, দু:খে, হতাশায়, প্রতিবাদে আমাদের ভিতর থেকে যদি মাতৃভাষা না ধ্বনিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের আবেগে, মননে, মনুষ্যত্বে ফন্দি-ফিকির-ফাঁকিবাজি কব্জা করেছে।
মাতৃভাষা অনেকটা বসন্ত-সন্ধ্যের বাতাস, মায়ের কোলে মাথা রাখা, ভালবাসার নি:শর্ত আলিঙ্গন অথবা প্রথমবার সন্তানকে স্পর্শ করার মতই অতুলনীয়। মাতৃভাষা দিবসে নিজেদের ভালবাসার শহরকে হয়তো একথাই বোঝাতে চেয়েছিলেন দুই প্রবীণ ‘তরুণ’।
সময়টা অস্থির। এই অস্থির সময়কে কেন্দ্র করেই ওপেন উইন্ডো আয়োজন করেছিল ছবি ও ভাস্কর্য প্রদর্শনীর।
নিউ মার্কেট সংলগ্ন মির্জা গালিব স্ট্রীটের ভাইব্রেশন একসময়ে সত্যিই শহরে কাঁপুনি ধরাতো।
পড়া ও মনে রাখার মতো চারটি বাংলা বই নিয়েই এই লেখা
বিচারবুদ্ধিহীন ফাঁপা আবেগ নয়, চাই বিষয়ের উপরে সঠিক ধারনা ও দখল।
ব্রেখট্-এর বিপ্লবী নাটক ‘আর্তুরো উই’-এর বাংলা অনুবাদে তাঁর পরিচালনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হয়েছে ‘ভিট্টন’