×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মির্জা গালিব স্ট্রীটের হারানো সুর

    মৌনী মন্ডল | 27-02-2020

    প্রতীকী ছবি

    উর্দু, পার্সি ভাষার কবি আসাদুল্লা বেগ খান। পীড়িত জীবন, মানবিক আবেগ আর চেতনার যে অক্ষর, তা দিয়েই তিনি বুনে গিয়েছেন তাঁর শায়েরমালা। ‘মির্জা গালিব’, এ নামেই পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তাঁর সফর এ কলকাত্তাহ-তে তিনি লিখেছিলেন, কলকাতার মতো এমন মন জয় করা জমি তামাম দুনিয়ায় নেই। অধুনা ‘আধুনিক’ কলকাতায় তাঁর নামাঙ্কিত রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ‘ভাইব্রেশন’-এর সামনে থমকে দাঁড়িয়ে এ কথাই মনে পড়ছিল।

    নিউ মার্কেট সংলগ্ন মির্জা গালিব স্ট্রীটের ভাইব্রেশন একসময়ে সত্যিই শহরে কাঁপুনি ধরাতো। কারণ এই ভাইব্রেশনই এককালে ছিল সাধারণ শ্রোতা থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় শিল্পীদের ‘কমন ট্রেজারি’। বাছাই করা কিছু গান-বাজনা-সিনেমার কালেকশন পাওয়া যেত শুধুমাত্র এই নির্ভরযোগ্য ঠিকানাতেই। এমনকি এখনও দোকানের বাইরে সাজানো থাকে ‘নস্ট্যালজিয়া’- গ্রামোফোন, পেল্লায় সব রেকর্ড। কলকাতায় বসে আন্তর্জাতিক কিছু ‘মাস্টারপিস’-এর হদিশ মিলত গুড্ডুভাইয়ের পূর্বপুরুষদের কাছেই. এইমুহূর্তে ভাইব্রেশন-এর দেখভাল করেন গুড্ডু ভাই। চৌরঙ্গি চত্বরে ‘ভাইব্রেশন’-এর থেকে ‘গুড্ডু ভাইয়ের দোকান’ নামটাই বেশি সড়গড় সকলের।

     ‘পুরনো’ সে সব কথা উঠতেই চোখমুখ উজ্জ্বল করে সেই গুড্ডু ভাইই বলছিলেন ৭-৮ দশকের কথা, “আমি তখন খুব ছোট। আমার ঠাকুরদার পরে বাবা দায়িত্ব নিল, বাবার সঙ্গে আমি প্রায়ই দোকানে এসে বসতাম। দেখতাম অঞ্জন দত্ত, সুমন, নচিকেতা, এ শহরেরই আরও কত গুণী মানুষ এসে কিনে নিয়ে যেতেন রেকর্ড। তখন বাছাই করা কিছু রক কনসার্টের কালেকশন শুধুমাত্র আমাদের কাছেই পাওয়া যেত। শুধু কি গান? বার্গম্যান, ফেলিনি, ত্রুফো, গোদার, কিয়োরস্তামি, কুরোসওয়া, সব ‘এক সে বড় কর এক’ পরিচালকের সিনেমা আমরা রাখতাম। কারও কাছে পাওয়া যেত না. কে আগে পাবে, এই নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত. তারপর আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে সবই বন্ধ হয়ে গেল। গ্রামোফোন রেকর্ড, ভিসিআর, ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি একে একে সবই হারিয়ে যেতে দেখলাম আমি। এখনও বাড়িতে এত কালেকশন, রাখার জায়গা নেই, ভাঙাড়িতে দিলেও নেয় না। গান দিয়েই আমাদের পারিবারিক ব্যবসা শুরু হয়েছিল তাই এখন ‘গান রিলেটেড’ জামাকাপড়, অ্যাকসেসরিজ এর বিজনেস করি, গানটা ছাড়তে পারিনি।”

    শুধু গান নয়, গুড্ডু ভাই ছাড়তে পারেননি অনেককিছুই। ছাড়তে পারেননি পারিবারিক মূল্যবোধ, পুরনো রুচি, ভালোলাগা, ভালোবাসা। দীর্ঘদিন খিদিরপুর নিবাসী হিন্দিভাষী খাঁটি বিহারী মুসলমান হয়েও, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি তিনি এত ভালো চেনেন বোঝেন, যা হার মানাবে অনেক প:বঙ্গবাসীদেরকেই। রাস্তার পাশে দোকানের অবস্থানে ধুলোবালির বেশ বেশি, তাই ক্ষণে ক্ষণে হাত বুলিয়ে নরম কাপড়ে মুছে নেন পুরনো সামগ্রী। এখনও নাকি বিক্রি হয় সেসব। কালেভদ্রে হলেও পুরনো জিনিসের অর্ডার পান গুড্ডু ভাই। তাতেই দিল খুশ তাঁর।


    মৌনী মন্ডল - এর অন্যান্য লেখা


    রামকিঙ্কর লকডাউন দেখে যাননি। তিনি দেখে গিয়েছেন বিশ্বযুদ্ধ, দুঃখ, দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, খরা।

    ব্রেখট্-এর বিপ্লবী নাটক ‘আর্তুরো উই’-এর বাংলা অনুবাদে তাঁর পরিচালনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হয়েছে ‘ভিট্টন’

    টক ফুচকা, মিষ্টি ফুচকা, দই ফুচকা, বিবেকানন্দ পার্কের ফুচকা, হেদুয়ার ফুচকা

    বিচারবুদ্ধিহীন ফাঁপা আবেগ নয়, চাই বিষয়ের উপরে সঠিক ধারনা ও দখল।

    সময়টা অস্থির। এই অস্থির সময়কে কেন্দ্র করেই ওপেন উইন্ডো আয়োজন করেছিল ছবি ও ভাস্কর্য প্রদর্শনীর।

    মির্জা গালিব স্ট্রীটের হারানো সুর-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested