×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে কোনও ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ নাই

    মৌনী মণ্ডল | 24-12-2019

    লোকসভার পর ১১ ডিসেম্বর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(সিএবি), প্রতীকী ছবি

    লোকসভার পর ১১ ডিসেম্বর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(সিএবি)। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্পূর্ণ ভাবে মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। তা সত্বেও ভোটাভুটিতে ১২৫টি ভোট পড়েছে বিলের পক্ষে, বিপক্ষে ১০৫টি। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতির সম্মতি-স্বাক্ষরে তা আইনে পরিবর্তিত হল।

    বিজেপি সরকার ২০১৬ সালেও নাগরিকত্ব আইনের এরূপ একটা সংশোধনী এনেছিল। তখন রাজ্যসভায় অনুমোদন করাতে পারেনি তারা সেই সংশোধনী। ওই সংশোধন প্রস্তাবের সঙ্গে এবারের আইনের কিছু পার্থক্য আছে। এবার স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অমুসলমান যাঁরা ভারতে ঢুকেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আইনের ব্যবহার হবে। আবার পূর্বতন সংশোধনীতে পুরো দেশে নতুন বিধানের কার্যকারতার কথা বলা হলেও নতুন আইনে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু কিছু এলাকাকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন আসামের অসমিয়া প্রধান সাতটি জেলায় নতুন আইনের কার্যকারতা থাকবে না বলা হচ্ছে।

    এ মুহূর্তে যেসব হিন্দু ধর্মাবলম্বী নাগরিকত্বহীন অবস্থায় ভারতে বসবাস করছেন, তাঁরাই মূলত সংশোধিত নতুন আইনের প্রধান সুবিধাভোগী হবেন। বিশেষত যেসব হিন্দু দাবি করছেন, তাঁরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে দেশ ছেড়েছেন; তাঁদের ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন আইন সাহায্য করবে বলে বিজেপি প্রচার করছে। অর্থাৎ এই হিন্দুরা ভারতে আর অবৈধ অভিবাসী বিবেচিত হবেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে সেসবও তুলে নেওয়া হবে। একইভাবে ভারতে আসা শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি বা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও সুবিধা পাবেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে যাঁরা ২০১৪-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে এসেছেন, তাঁরাই কেবল এ রকম সুবিধা দাবি করতে পারবেন। আইনে অবশ্য ‘ধর্মীয় নিপীড়ন’-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনা কীভাবে প্রমাণিত হবে, সে সম্পর্কেও আইনে কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। আইনে অমুসলমানদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কিছু শর্তও শিথিল করা হয়েছে। আগে নাগরিকত্ব পেতে বসবাসের সর্বশেষ ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকার শর্ত ছিল। এখন সেটা পাঁচ বছর করা হচ্ছে।

    বিজেপি এমনভাবে বিলটিকে প্রচারে এনেছে, যাতে মনে হয় এই বিলের বিরোধিতাকারীমাত্রই হিন্দুদের বিরুদ্ধে। এই বিল যে ভারতের সংবিধান ও এতদিনকার রাষ্ট্রীয় চরিত্রেরও বিরুদ্ধে যাচ্ছে; সেটা বিরোধী দলগুলো উচ্চকণ্ঠে তুলে ধরতে পারছে না, হয়তো ভোটের ভয়ে তুলে ধরতে চাইছেও না।

    এই আইনের মধ্য দিয়ে বিজেপি দেখাতে চায় ভারত হিন্দুদের জন্য একটা স্থায়ী নিরাপদ আশ্রয়। যেভাবে ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য। এই আইন ভারতের নাগরিকত্বকে স্পষ্ট সাম্প্রদায়িক ভিত্তি দিচ্ছে। নাগরিকতার শর্তগুলো যেকোনো রাষ্ট্রের একটা মৌলিক দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই বছরের ১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে ভারত খোলামেলাভাবে ঘোষণা করেই তার রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্য থেকে সরে গেল।

    ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে রাষ্ট্রগতভাবে ভারতের পশ্চাৎধাবন পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও একটা খারাপ সূচনা। ভারতের এই আইন এই অঞ্চলের অন্য সব রাষ্ট্রকে নীরবে উসকানি দিয়ে যাবে সাম্প্রদায়িকতার পথে। ফলে আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত পুরো অঞ্চলে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারণে ধর্মীয় বিবেচনা বাড়তি গুরুত্ব পাবে। ফলে বঞ্চিত হবে প্রত্যেক অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। এই বঞ্চনার কোনো একক চরিত্র থাকবে না। কারণ হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিষ্টান, শিখ সবাই কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু। ফলে বৃহত্তর অর্থে ভারতের নাগরিকত্ব আইনে কেবল বিজেপিই লাভবান হচ্ছে, কোনো বিশেষ ধর্ম নয়।

    লজ্জা ঘৃণা ভয় তিন থাকতে নয়:

    ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় সমাজের সমগ্র কাঠামোটাই ভেঙে দিয়ে গেছে। সেই ক্ষত পুনর্গঠন সম্ভব হয়নি, তা ফের নির্লজ্জ ভাবে প্রমাণ করছে ক্ষমতার কালো হাত। স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বিভিন্ন দলের সরকার নতুন ও উন্নত সমাজ তৈরির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। বর্তমান ভারতের এহেন দুর্দশা বোধহয় তারই ফলাফল। এই দুর্দশাই মানুষকে নৈতিক অবনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। যার জেরে ভারত তার সমস্ত অতীত, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, নিরপেক্ষ অবস্থান হারাতে বসেছে।

    'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই'। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীর মানবিক ক্ষরণ উপলব্ধি করে বাংলার মধ্যযুগের এক কবি এ কথা রচনা করেছিলেন। আজ বলে নয়, ঘটনাচক্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি বড়ু চন্ডীদাস রচিত মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মানবিক বাণী বার বার আহত হতে হয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক মতাদর্শের কাছে।

    তাই বলিষ্ঠ উচ্চারণে বলার সময় এসেছে- সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে কোনও ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ নাই।
     


    মৌনী মণ্ডল - এর অন্যান্য লেখা


    'ভার্চুয়াল' আর 'একচুয়াল' যেমন 'ইকুয়াল' নয়, তেমনই সংখ্যা কখনওই সাহিত্যের মাপকাঠি হতে পারে না

    এই পরিস্থিতি সকলের কাছেই নতুন। ভার্চুয়াল-ই এখন নিউ নর্মাল। সময়টাকে কীভাবে দেখছেন?

    এ যেন এক অনিবার্য পরিহাস। চলছে তো চলছেই। এর নাম ‘গাফিলতি-ভাইরাস’, যা করোনার থেকে আরও আরও বেশি ভয়াবহ।

    তাঁর সাহিত্য সাধনায় তিনি খুঁজেছেন অখণ্ড মনুষ্যত্বকে এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ককে

    5 এপ্রিল, রাত ন’টা থেকে প্রায় দশটা পর্যন্ত, কিছু দৃশ্য আমাদের দেখানো হয়েছে; একটা খারাপ সিনেমা।

    যা দেখা যাচ্ছে, খাবার ‘বেচা-কেনা-খাওয়া’ই এখন মানুষের সব থেকে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে কোনও ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ নাই-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested