ধরুন, ‘হে ঈশ্বর মারণ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করো’ বলে নিজেকে আপাদমস্তক জীবাণুমুক্ত করে শান্তিতে ঘুমাতে গেলেন, পরদিন সকালে পরিবার-প্রতিবেশী এবং আপনি নিজে আর কোনও দিনই ঘুম থেকে উঠতে পারলেন না। কারণ, আপনার যাবতীয় রক্ষাকবচের সিঁধ কেটে অজান্তেই শরীরের ভিতর সুড়সুড় করে ঢুকে পড়েছিল অদৃশ্য প্রাণঘাতী রাসায়নিক যৌগ। অথবা, অভুক্ত অবস্থায় অনেকদিন ধরে পথ হাঁটছেন... কিন্তু পথের শেষ কোথায় বুঝতে পারছেন না, সারাদিন হেঁটে রাতের বেলা ক্লান্তিতে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন পথেই। পরদিন সকালেই খবরের কাগজে ‘পথদুর্ঘটনায় মৃত’ শিরোনামে আপনার মৃত্যুর নৃশংস বিবরণ পড়ে চমকে উঠল দেশবাসী।
ঘটনা দু’টি একেবারেই কাল্পনিক গপ্প নয়, তা আমরা জানি। আপনার, আমার বদলে ঘটনাগুলো অন্য কারও সঙ্গে ঘটেছে এই যা! বৃহস্পতিবার ভোররাতে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের আর ভেঙ্কটাপুরম এলাকার পলিমার কারখানায় স্টাইরিন গ্যাস লিকের ঘটনা এবং শুক্রবার ভোরে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে 16 জন পরিযায়ী শ্রমিকের ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা আবারও প্রমাণ করল জীবন ঠিক কতটা অনিশ্চিত, ঠুনকো এবং ভয়াবহ।
বিশাখাপত্তনমের ঘটনার আগে-পরে 1984 সালে ঘটা ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি উস্কে দেওয়া হচ্ছে সর্বত্র। তবে, স্মৃতি শুধুমাত্র মাথা হেঁট করে স্মরণ অথবা শোকজ্ঞাপনের জন্য নয় বোধহয়, স্মৃতি শিক্ষারও বটে, যে দিকটা বারবার মার খেয়ে যায়। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা কি শিক্ষণীয় ছিল না? পলিমার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তরল রাসায়নিক টাইরিন মনোমার এবং রাসায়নিকটি 17 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় রাখার কথা। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি কারণ, কারখানাটি লকডাউনের জেরে 40 দিন ধরে বন্ধ ছিল। গরম ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্টাইরিন গ্যাস উৎপন্ন হয়, আর সেটাই ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। যে কারখানায় এই ধরনের রাসায়নিক উৎপন্ন হয় এবং সামান্য অসাবধানতার জেরে মৃত্যুর ঢল নেমে যেতে পারে, সেই কারখানার কর্তৃপক্ষ সব জেনেশুনে লকডাউনের দোহাই দিয়ে টানা 40 দিন রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া কারখানা ফেলে রাখলেন, কেন প্রশাসনের সাহায্য নিলেন না তাঁরা! এইধরনের কারখানার আশেপাশে জনবসতি থাকার কথা নয়, কিন্তু এলজি পলিমারের এই কারখানার পাশে একাধিক জনবসতি থাকার ফলে একাধিক মানুষের প্রাণ চলে গেল; বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসে আশপাশের তিনটি গ্রাম খালি করে দেয়। প্রশ্ন হল, প্রশাসনের তরফে কীভাবে ছাড়পত্র পেয়েছিল কারখানাটি?
‘স্টাইরিন’-এর প্রকোপে সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা যা, তা আরও বাড়বে বৈ কমবে না। শুধু তাই নয়, দুশ্চিন্তার আরও অনেক কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্প সময়ের জন্য এই বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এলে কাশি, চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, বমি হতে পারে। দীর্ঘ সময় থাকলে স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 800 পিপিএমের বেশি পরিমাণ স্টাইরিন শরীরে প্রবেশ করলে মানুষ কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি জটিল করে তুলে বাড়তে পারে কো-মর্বিডিটির সংখ্যা।
অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে, লকডাউনে 40 দিনেরও বেশি সময় ধরে মহারাষ্ট্রে আটকে পড়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের যে সব শ্রমিকরা, হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের বাড়ি ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে রেল লাইনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। ঘুমের মধ্যেই শ্রমিকদের পিষে দিয়ে চলে যায় খালি তেল বহনকারী একটি ট্রেন। মহারাষ্ট্রের জালনা থেকে ভূস্বাল যাচ্ছিল পরিযায়ী শ্রমিকরা। রেল ট্র্যাকে বেশ কয়েকজন মানুষকে ঘুমোতে দেখে হর্ন দেন মোটর ম্যান। ট্রেনটি থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। ফলে এড়ানো যায়নি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অবশ্য বলেছেন, কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তলিয়ে দেখবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হয়তো ক্ষতিপূরণও দেবেন। কিন্তু...
এ যেন এক অনিবার্য পরিহাস। চলছে তো চলছেই... এর নাম ‘গাফিলতি-ভাইরাস’, যা করোনার থেকে আরও আরও বেশি ভয়াবহ।
5 এপ্রিল, রাত ন’টা থেকে প্রায় দশটা পর্যন্ত, কিছু দৃশ্য আমাদের দেখানো হয়েছে; একটা খারাপ সিনেমা।
'ভার্চুয়াল' আর 'একচুয়াল' যেমন 'ইকুয়াল' নয়, তেমনই সংখ্যা কখনওই সাহিত্যের মাপকাঠি হতে পারে না
মাতৃভাষার জন্য তরুণদের আত্মবলিদান পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের যে কোনও ভাষার মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার।
‘বাঙালি-ভুলানো ছড়া’ই তাহলে এবার বাংলার মসনদের চাবিকাঠি?
লোকসভার পর ১১ ডিসেম্বর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল(সিএবি)
তাঁর সাহিত্য সাধনায় তিনি খুঁজেছেন অখণ্ড মনুষ্যত্বকে এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ককে