×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বিপর্যয়ের সুযোগে রমরমিয়ে কালোবাজারি

    অর্যমা দাস | 23-05-2020

    নিজস্ব ছবি


    "আমাদের সব শেষ হয়ে গেল গো'। রায়দিঘির বছর 60- এর খেয়া মন্ডলের আর্তনাদ। হাউ হাউ করে কেঁদে বললেন খেয়া মন্ডল, "আমার পুকুরের মাছ নেই। ক্ষেতের সবজি নেই। সব গাছ ভেঙে গেছে। বাড়ির দেওয়াল পড়ে গেছে। আমাদের সব রোজগারের রাস্তা শেষ। এবার আমি কী করে বাঁচব?' খেয়াদের খবর কলকাতায় পাওয়া গেল আমপানের 72 ঘন্টার পর।

     

     

    28 বছরের মানসী দাসের কথায়, "আমাদের দোতলা পাকা বাড়ি। আমাদের উত্তর দিকে আরও দুটো পাকা উঁচু বাড়ি আছে বলে আমাদের বাড়িতে কিছু হয়নি। আমাদের বাড়িতে আশেপাশের লোক আশ্রয় নিয়েছিল আমপানের রাতে। কিন্তু, এখানে এমন কোনও বাড়ি নেই, যার অ্যাসবেস্টস আছে। সব গাছ পড়ে গেছে, যে কটা গাছ বেঁচে আছে সব কেমন পুড়ে যাওয়ার মতো কালো হয়ে গেছে।'

     

     

    বছর 34-এর প্রমীলা সেনের কথায়, "আমাদের পাড়ায় কম করে দু'শোটা বাড়ি, মাত্র দশটা ত্রিপল দিয়ে গেছে পার্টির লোক। আমাদের মাটির বাড়িই ইঁট দিয়ে গাঁথা। ঠাকুরঘরের ডান পাশের দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। বুলবুলের সময়ই আমাদের বাড়ি অর্ধেক ভেঙে গিয়েছিল, প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম বাড়ি মেরামতের জন্য, আজও হয়নি। এই বাড়ি আর ঠিক হবে না।'

     

    আমপানের পর রায়দিঘিতে ক্ষয়ক্ষতির সুযোগ নিয়ে রমরমিয়ে চলছে কালোবাজারি। 150 টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে অ্যাসবেস্টস শিট। 700 টাকার শিটের 850 টাকা দাম চাইছে। আমপানের পরদিন সিমেন্ট-বালির দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভিড় দেখে। তার পরের দিন দোকান খুলে 350 টাকার সিমেন্টের দাম চাওয়া হচ্ছে 650 টাকা। প্রশাসন থেকে স্কুল বাড়িতে এনে রাখা হয়েছিল আমপানের দিন কিছু দুঃস্থ মানুষকে। রাতে চাল, ডাল, আলু দেওয়া হয়েছে তাদের। কিন্তু, গ্যাস কই? রান্না কই? খাওয়া হয়নি সেদিন কারও। ভোরবেলা বাড়ি ফিরে দেখা গেল, সে বাড়ি আর নেই। বাড়িতে সঞ্চয় করে রাখা সব চাল, ডাল, খাবার, সব শেষ।

     

     

    সবিতার বন্ধু, কাজ করেন সিপিএম নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলির বানানো স্কুলে। সেই অঞ্চলে থাকা পরিবার, সেখানকার স্কুল এবং নদীর কাছে থাকা লোকজন সবসময় উপকার পান। সুনামি থেকে বুলবুল, সবসময়ই তাদের উপর নজরটা বেশি। অথচ আরও খানিক ভেতরে থাকা সবিতাদের অঞ্চলের দিকে কেউ কোনও দিন আসেন না। কোনও ক্ষতি পূরণ হয় না। যেখানে প্রচার পাওয়া যায়, সেখানেই সকলে কাজ করেন। যেখানে প্রচার নেই, সেখানে কেউ নেই। সবিতার আরও বক্তব্য, "সকলে জানতে পারে কেবল যে প্রশাসনের এত এত টাকা রায়দিঘির কাজে লাগে। আমাদের এখানে ক'টা বাড়ি মেরামত হয়েছে এতদিনে, দেখাক তো কেউ আগে?'

     

     

    রায়দিঘি হাসপাতালে আমপানের দিন থেকে বেশিরভাগ রোগী একই কারণে ভর্তি হচ্ছেন। অ্যাসবেস্টসের চাল উড়ে এসে কারও মাথা ভেঙেছে, কারও হাত তো কারও পিঠ। প্রচুর মানুষের পা ভেঙেছে দেওয়াল ভেঙে পড়ে। রায়দিঘি আমপানের তাণ্ডবে আজ শ্মশানপুরী। ঘরবাড়ি, খাবার দাবার, রোজগারের রাস্তা হারিয়েছে বহুলোকের। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের সরকারের অনুদান এর আগে কোনও দিনই পায়নি রায়দিঘি কাছারিবাজারের লোকজন। এবার পাবেন কি? সেটাই তাদের প্রশ্ন।

     


    অর্যমা দাস - এর অন্যান্য লেখা


    আমপানের পর রায়দিঘিতে ক্ষয়ক্ষতির সুযোগ নিয়ে রমরমিয়ে চলছে কালোবাজারি।

    ‘সবসময় মনে হচ্ছে আমরা বাঁচব তো শেষ অবধি?'

    পশু চাষের ফার্মগুলিতে অরগ্যানিক চাষ বাড়ালেই কমবে ভারতের খাদ্য সংকট

    রবীন্দ্রভারতীর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী বছর থেকে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে জানিয়েছেন

    বর্তমান থেমে গিয়েছে, ভবিষ্যৎ কী?? আমরা জানি না।

    বিপর্যয়ের সুযোগে রমরমিয়ে কালোবাজারি-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested