সাধক বামাখ্যাপা তাঁর ভক্তদের কাছে মুশকিল আসান ছিলেন, যার যা সমস্যা সবই তিনি সমাধান করতেন মা তারার কৃপায়। আর সেই চরিত্রে অভিনয় করা সব্যসাচী চৌধুরীও যেন বর্তমানে অনেকের কাছেই একইভাবে মুশকিল আসান হয়ে উঠেছেন।
সাধক বামাখ্যাপার চরিত্রে অভিনয় করার দরুণ তিনি জনমানসে দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, কিন্তু নেট দুনিয়ায় সাড়া ফেলে তাঁর এবং ঐন্দ্রিলার (সব্যসাচীর সহ অভিনেত্রী এবং বান্ধবী) সম্পর্ক। ঐন্দ্রিলা ক্যান্সারে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে সব্যসাচী তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকতেন, খেয়াল রাখতেন। তাঁদের সেই বন্ধুত্বের ছবি, গল্প সবাইকে ছুঁয়ে যায়। বন্ধুত্বের জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে তাঁদের গল্প। এরই মাঝে এসে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এবং আরও একবার সব্যসাচী চৌধুরীকে দেখা যায় নতুন ভূমিকায়।
সব্যসাচী এবং তাঁর দল
সব্যসাচী হাওড়ার বেলুড় মঠের বাসিন্দা, কলকাতার একটি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্স এবং রিসার্চ করতে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। সেখানে পড়াশোনার পাশপাশি রাঁধুনির কাজ করতেন। প্রায় মধ্যরাত অবধি কাজ করে রিসার্চের কাজ নিয়ে বসতেন। কোনও কোনওদিন সোজা লাইব্রেরি চলে যেতেন ওই মাঝরাতে পেপার ওয়ার্ক করতে। পড়াশোনা শেষ করে কলকাতায় ফেরা, এবং অভিনয় জগতে আসা।
29এপ্রিল তিনি অনলাইন অ্যাপে খাবার অর্ডার করেন এবং যে ছেলেটি সেই খাবার তাঁর বাড়িতে পৌঁছতে আসে, সে 20 টাকা টিপস চায়। সব্যসাচী কথায় কথায় জানতে পারেন ছেলেটি মাস্টার্স করছে, একইসঙ্গে ডেলিভারি বয়ের কাজ। তখন তিনি যেন ছেলেটির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান, এবং তখনই ঠিক করেন মানুষের জন্য কিছু করবেন। তাঁর যতটা যা ক্ষমতা তাই দিয়েই করবেন।
আরও পড়ুন: যে বাবার ২২০ সন্তান
এরপর শুরু হয় সব্যসাচীর ‘ফুড ড্রাইভ’। তিনি জানান, ‘ফেসবুকে একটা পোস্ট দিই, যেখানে যাদের খাবার লাগবে জানাবেন, আমরা পৌঁছে দেব। এরপর নানান জায়গা থেকে খাবারের জন্য ফোন আসতে থাকে।' বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে সবটা দেখা এবং করা সম্ভব হচ্ছিল না। ‘তখন আবার সোশাল মিডিয়ায় বলি, কেউ আমাদের পাশে থাকতে চাইলে জানাবেন। সাড়া পাই। তখন আমি আর ঐন্দ্রিলা মিলে একটা ডেটাবেস তৈরি করি অঞ্চল অনুযায়ী। স্থানীয় ভাবে কাজ শুরু হয়’, জানালেন সব্যসাচী। এই কাজে তাঁর সহ অভিনেতা অভিনেত্রীদের পাশাপাশি আরও অনেকে এসে যোগ দেন, যেমন রেড ফ্ল্যাশ বলে একটি এনজিও।
ইয়াসের পর উপকূল এবং সুন্দরবন অঞ্চল যখন বিধ্বস্থ, তখন তাঁরা সেখানেও ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যান। কলকাতার বিভিন্ন জায়গা সহ শংকরপুর, জুনপুট, নামখানা, নয়াচর, তারাপীঠ সহ আরও অনেক জায়গাতেই খাদ্য এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে আসেন সব্যসাচী তাঁর টিম নিয়ে। তিনি জানালেন, ‘গত একমাসে প্রায় 4000 কেজি চাল কিনেছি।' তাঁর এই ফুড ড্রাইভে পাশে থাকতে সম্প্রতি অভিনেতা গৌতম হালদার একটি অনলাইন শো করেন ‘নাটুয়া’ নামে, সেখান থেকে অর্জিত পুরো টাকাটাই সব্যসাচীর ফুড ড্রাইভে ব্যবহার করা হবে।
নাটুয়ার পোস্টার
ভাবছেন শুধুই মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে আজকের বামাখ্যাপা? না। একই সঙ্গে মানুষকে বুদ্ধি দিচ্ছে। কীসের? রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানের, কী করে অর্থ সঞ্চয় করতে হবে তার। সব্যসাচী ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান সুন্দর উদাহরণ দিয়ে তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন, যা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। উপকৃত হন অনেকেই।
আরও পড়ুন: অমৃতার ‘ন হন্যতে’ হয়ে ওঠা
সব্যসাচী যেন পণ করেছেন কাউকেই অনাহারে বা অর্ধাহারে থাকতে দেবেন না। তাঁর যতটুকু সাধ্য, তাই দিয়েই মানুষের সাহায্য করবেন। আগামী দিনে তাঁর এই ফুড ড্রাইভ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বদ্ধপরিকর। আর এরই মাঝে রিল লাইফ হিরো অনেকের কাছেই রিয়েল লাইফ হিরো হয়ে উঠেছেন। ঠিক যেন অতীতের সাধক বামাখ্যাপা নতুন ভাবে তাঁর চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছেন। মা তারা হয়তো তার এই ‘ক্ষ্যাপা পুত্রের’ কার্যকলাপ দেখে অলক্ষ্যে কোথাও বলছেন, ‘পাগল ছেলে আমার!’
জীবনে সফল হয়ে তারা যেন গর্ব ভরে বলে, 'রোল কাকুর জন্যই আমাদের এই সফলতা।'
এই বিপদে জনপ্রতিনিধিরা ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে, নাগরিকরাই একে অন্যের পাশে থেকে কঠিন লড়াই লড়ছে।
নিয়তি আজ সময়ের কাছে, অর্থের কাছে, ক্ষমতার কাছে অসহায়। সে শুধু ধ্বংস খেলা দেখে চলেছে।
ছোটু আর বান্টির স্বপ্ন কি ওদের গিন স্কিন পূরণ করতে পারবে?
মহারাষ্ট্রের ন্যানেঘাট ঝর্নার জল নিচে পড়ার বদলে আপাতদৃষ্টিতে রহস্যময়ভাবে উপরের দিকে উঠে যায়।
হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামকে ছাপিয়ে সিগন্যাল এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।