×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • এ আঁধারে মশাল হাতে ওঁরা সব আন্দোলনের নারী

    রাতুল গুহ | 07-12-2021

    নিজস্ব ছবি

    তা হলে কি পৌরুষবিক্রমের দর্শনের মূলে আঘাত করছে দেশের নারীসমাজ? সাম্প্রতিককালে একের পর এক গণআন্দোলনের তরঙ্গ সঞ্চারিত হয়েছে ফ্যাসি-রাজ্যপাটে। শাহিনবাগে, পার্কসার্কাসে এনআরসি, সিএএ বিরোধী (Anti NRC-CAA) লড়াইয়ের রাতগুলি ফিরে এসেছে দিল্লির লড়াইয়ের সড়কে। অসংখ্য নারী ঘর ছেড়ে পথে নেমে আসায় বিভ্রান্তিতে সঙ্ঘ চালিত বিজেপি (BJP) আইন রাষ্ট্রকাঠামোর অপব্যবহার করে তাই তারা ঘরে ফেরাতে চায়' নারীকে। কিন্তু  লড়াই থামে না, তাঁরা ঠিকই চেনেন শত্রুকে। প্রত্যয়ী কণ্ঠে তাঁরা বলছেন, "ওরা আসলে আমাদের নারীশক্তিকে ভয় পেয়েছে, তাই আমাদের সরাতে চাইছে। কিন্তু আমরা এখানে আমাদের ভাইদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ব।'

     

    মোদী-শাহের প্রবল পরাক্রমকে রুখে দেওয়া কৃষক আন্দোলনে (Kisan Movement) রয়েছে বহু সীমাবদ্ধতা, পাশাপাশি সম্ভাবনা। কেবল বড় কৃষক নন, প্রান্তিক সমাজের মানুষেরা তাদের অধিকারের প্রশ্নে এসেছেন আন্দোলনের ময়দানে। জমির অধিকার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সঙ্গে জুড়ে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লিঙ্গবৈষম্য। আদিকাল থেকে কৃষিকাজে যুক্ত নারী কেন পিছিয়ে পড়লেন ক্রমশ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কেন কৃষক বলতেই চোখে ভাসে লাঙল কাঁধে এক পুরুষের ছবি? এই অসমাধিত প্রশ্ন, দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে এই আন্দোলন। ট্রাক্টর চালিয়ে কিংবা হাঁটা পথে টিকরি, সিঙ্ঘু সীমান্তে কিষাণীরা (Women Farmers)  না এসে পৌঁছলে লড়াই শক্তিশালী হত না যেমন, তেমনই এই প্রশ্নগুলি গরহাজির থাকত।

     

    আরও পড়ুন:‘ভাই' ভাইরাল হলে, সংস্কৃতির ‘দাদা'রা ক্ষুণ্ণ হন

     

    বিপুল সংখ্যক নারীর মুষ্ঠিবদ্ধ হাত প্রাণ জুগিয়েছে আন্দোলনে, তেমনই ভেঙেছে বহু প্রথাগত ধারণা-রীতি। এ যুগের অহল্যা-বাতাসীদের লড়াই তাই শাসকের বিরুদ্ধে, সমাজে প্রচলিত লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধেও ( Against Gender inequality) ভারতবর্ষের কৃষি ক্ষেত্রে খাতায় কলমে 30 শতাংশ  নারী যুক্ত, (যদিও বিনা পারিশ্রমিকে 'ঘরের মেয়েরা' হাত লাগান চারা রোপ থেকে, ধান ঝাড়াইয়ের কাজে) কিন্তু জমির মালিকানা রয়েছে মাত্র 13 শতাংশ নারীর অধিকারে। জমির অধিকার থেকে ঐতিহাসিক ভাবেই বঞ্চিত নারী তাই উপলব্ধি করেছেন কৃষি বিলের পরিণতি। কেবল "লাঙল কাঁধে পুরুষ কৃষক' নন, গ্রামের কৃষিক্ষেত্রকে বহুলাংশে আগলে রাখেন কিষাণীরা৷ পরিবারে বেগার খাটার পরে মাঠে শ্রমদান করেও পরিসংখ্যান, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রেই অদৃশ্য তারা! তাই তো শোষণমুক্তির লড়াইতে যুগে যুগে তারা থেকেছে অগ্রণী, আপোষহীন।

     

    আন্দোলনে নারীরা

     

    এই যুদ্ধ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকা লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে, এই যুদ্ধ কর্পোরেট কোম্পানি আর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও। আধুনিক Nation State নিজেকে গড়েছে পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতার আধারে। তার কাছে নারী দুর্বলতা, অসহায়তায় প্রতিমূর্তি। দিল্লির আন্দোলনক্ষেত্রে উপস্থিত ব্যপক সংখ্যক নারীর সক্রিয় উপস্থিতিতে তাই হকচকিয়ে ওঠে রাষ্ট্র। তার সর্বশক্তিমান পৌরুষ চরিত্রে আঘাত হানা নারীদের ফিরে যেতে হবে ঘরের কাজে। গত জানুয়ারিতে আন্দোলনের শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না কেন বয়স্ক ও নারীদের এই আন্দোলনে রাখা হচ্ছে।”

     

    বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুকে একই বন্ধনীতে রেখে আইনের ভাষায় রাষ্ট্র বুঝিয়ে দেয় দুর্বলতর শ্রেণিতে নারীর অবস্থান। ঘরে ফেরেননি লড়াকু কিষাণীরা। ময়দানে থেকেছেন সমানে সমানে। আর আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে কিছুটা হলেও বদলেছে নিত্য দিনের কাজের লিঙ্গগত বিভেদ। দিল্লি-পাঞ্জাব সীমানায় কিষাণ-কিষাণী লিঙ্গভেদ সামলেছেন, সামলে চলেছেন লঙ্গরখানা। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন, ""নারীদের রাখা হচ্ছে কেন?

     

    আরও পড়ুন:ধর্মের সঙ্গে সব কিছু গুলিয়ে যায়, জনসংখ্যাও

     

    আসলে, নিজেদের জীবন সংগ্রামে, অধিকারের প্রশ্নে কিষাণীরা নিজেই এসেছেন। কেবল শ্রোতা নন, সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রাণ সঞ্চার করেছেন আন্দোলনে। পাঞ্জাবের মেয়ে হরিন্দর বিন্দু গ্রামে গ্রামে ঘুরে বছরের পর বছর সংগঠিত করেছেন কিষাণীদের। কৃষক আন্দোলনের বাস্তব প্রেক্ষিতে কিন্তু  প্রথম সারির বাঘা বাঘা নেতার তুলনায় অনেক গ্রহণযোগ্য হরিন্দররা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল সম্ভাবনা নয়, সীমাবদ্তা নিয়েই চলছে আন্দোলন। অনেক কিষাণী আসতে পারেননি দিল্লি পর্যন্ত। তারাও কিন্তু ঘরে বসে নেই, পাঞ্জাব হরিয়ানায় গ্রামেগঞ্জে ছোট ছোট অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন লাগাতার।

     

    বিভিন্ন আন্দোলনে নারীদের অবস্থান অনেকটা "অন্তঃপ্রবাহ'-র মতো। বালিয়াড়ি থেকে সাগরের বহিঃপ্রবাহ দেখা যায়, অতল গভীরে অদৃশ্য থেকে কাজ করে যায় অন্তঃপ্রবাহ। কৃষক আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ বা ভূমিকা কেমন, সে চর্চা চলুক। তারও আগে প্রশ্ন, নারীরা কতটা কৃষকের মর্যাদা পেলেন। ইতিহাসের যাত্রাপথে পরিবেশ আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, এনআরসি অথবা সিএএ বিরোধী আন্দোলন, সকল ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছেন তেভাগা আন্দোলনের লড়াকু নেত্রী ইলা মিত্র, চন্দনপিঁড়ির শহিদ অহল্যার উত্তরসূরীরা।

     


    রাতুল গুহ  - এর অন্যান্য লেখা


    এপ্রিলে দেশের বেকারত্বের হার ছুঁলো 7.83 শতাংশ, কর্মক্ষেত্রে সংকট ক্রমশ উর্ধ্বমুখী 

    সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নয়া ময়দান কুতুব মিনার

    শাসকবিরোধী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলি প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করলেন নির্মল মাজি

    দেশের গড় পরিসংখ্যানের তুলনায় পিছিয়ে বাংলা, 18 বছরের আগেই বিয়ে হচ্ছে 42% মেয়ের

    বেকারত্বে জীর্ণ দেশের যৌবন, বিক্ষুব্ধ কর্মপ্রার্থীরা পথে নামছেন দেশের নানান প্রান্তে

    মিথ্যা ভাষ্য, ঘৃণা ভাষণকে হাতিয়ার করে ধর্ম সভায়, নির্বাচনে মঞ্চে সঙ্ঘ, বিজেপি।

    এ আঁধারে মশাল হাতে ওঁরা সব আন্দোলনের নারী-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested