জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, দেশের 25 শতাংশ নারী তাঁর নূন্যতম বয়স, 18 বছরের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। পশ্চিমবঙ্গে 18 এর গণ্ডি অতিক্রম করার আগে 42 শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কখনও বাধ্য হয়ে, কখনও স্বেচ্ছায়।
দেশের গড় পরিসংখ্যানের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি মর্মান্তিক। আশঙ্কিত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, বিশেষত যারা লিঙ্গবৈষম্য বিষয়ে মেয়েদের নিয়ে কাজ করেন, গৃহস্থ হিংসা-নারী নির্যাতন নিয়ে কাজ করেন৷
শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে, সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করছিল কন্যাশ্রী প্রকল্প, এমনই মনে করছিলেন নেতা মন্ত্রী থেকে গবেষক, সমাজকর্মীদের একাংশ। কিন্তু 2019-21 সালের National Family and Health Survey Report- এর পরিসংখ্যা এই যুক্তিকে কার্যত খন্ডন করছে পশ্চিমবাংলার প্রেক্ষিতে।
বাংলায় 18 অনুত্তীর্ণ মেয়েদের বিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রবীণ অর্থনীতিবিদ নির্মলা ব্যানার্জি বলেন, “অর্থনৈতিক সংকটই এর প্রধান কারণ। কোভিড পরিস্থিতিতে এই আয় কমে যাওয়ায় এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। নির্মলা ব্যানার্জির মতে, “একটি ছেলে ও মেয়ে পরিবারে থাকলে, মেয়েটিকেই বিয়ে দিয়ে বোঝা কমাতে চান বাবা-মা। ছেলে বড় হয়ে চাকরি করবে, কিন্তু মেয়েটি চাকরি পাবে না, এমন ধারণা আছে বহু পরিবারের।” বিয়ের নামে বহু মেয়ে 12-13 বছর বয়সেই পাচার হয়ে যায়, এ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, “বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণের সুযোগ কম, বিশেষত মেয়েদের জন্য। লেখাপড়ার বাইরে তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না মেয়েরা।”
বাংলায় নারীরা উত্তর ভারতের বহু রাজ্যের তুলনায় সুরক্ষিত, এমন মানসিকতা এরাজ্যের জনমানসে হাজির থাকলেও বাস্তব যেন করাঘাত করছে সেই ভাবনায়। নারী আন্দোলনের কর্মী আফরোজা খাতুন তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন 4th Pillar -এর সাথে। বিয়ের জন্য পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল স্নাতক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে। সেই মেয়েটি জানায়, কন্যাশ্রীর টাকা সে নিজে হাতে পায় না, দাদারা সেই টাকা জমিয়ে গয়না বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ সমাজে কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়, নেই সামাজিক ন্যায্যতাও। যে বিয়ে আটকানো কন্যাশ্রীর অন্যতম উদ্দেশ্য, সেই প্রকল্পের টাকাই ব্যবহৃত হচ্ছে বিয়ের উপঢৌকনের জন্য! “কেবল কন্যাশ্রী প্রকল্পের অর্থ প্রদানেই কোনও সমাধান নেই, সচেতনতা গড়ে তোলা না গেলে এমনই চলবে” আক্ষেপের সঙ্গে বললেন আফরোজা খাতুন। লকডাউনে মেয়ের স্কুলছুট, অল্প বয়সে বিয়ের প্রবণতা আরও তরান্বিত, মনে করছেন তিনি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির দুই অধ্যাপক অরিজিতা দত্ত ও অনিন্দিতা সেন ‘Kanyashree Prakalpa in West Bengal, India, Justification and evaluation’ নামক একটি রিপোর্টে অনুসন্ধান করেছেন কন্যাশ্রীপ্রকল্পের বিভিন্ন দিকগুলি৷ কন্যাশ্রীর স্বল্পকালীন প্রভাব ইতিবাচক হলেও দীর্ঘকালীন কোনও সমাধান এই প্রকল্প থেকে সম্ভভ নয়। শেষ দুই বছরে লকডাউনের কারণে সঠিক সময়ে, নিয়মিত এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্তিকরণ সম্ভব হয়নি, সেইও একটা সমস্যার দিক। অনেকক্ষেত্রেই এই সহায়ক ভাতার সঠিক ব্যবহার হয়না। বাস্তবে দরিদ্র পরিবারের মাসিক আয়ের খাতায় যুক্ত হয় কন্যাশ্রীর অর্থ৷ মেয়ের কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকায় বাবা মদ খাচ্ছে, এমন ঘটনাও ব্যতিক্রমী নয়। ফলত, মেয়েদের শিক্ষা ও স্বনির্ভরতার লক্ষ্য নিয়ে যে কন্যাশ্রীর যাত্রা শুরু, তা হারিয়ে যাচ্ছে বাস্তবিক জটিলতায়।
আরও পড়ুন:নাগরিকত্ব নিয়ে নয়া "ক্রোনোলজি' শাহের
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাধীন থেকেও বিপুল অংশের মেয়েরা স্কুলছুট হয়েছে অথবা বিয়ে করেছে, বলছে রিপোর্ট। হাওড়া, মুর্শিদাবাদ ও কোচবিহার জেলায় এর শতকরা হার যথাক্রমে 22.96, 26.17 ও 17.07 শতাংশ। এক্ষেত্রে স্কুলছুট সমস্যার সমাধান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হতে পারে৷ বহু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মেয়েরা, অনেকক্ষেত্রে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় আগ্রহ হারায় ব্যর্থতার বোধ থেকে। অনেকক্ষেত্রে ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের সাথে সংঘাতে যেতে পারেনা তারা।
দক্ষিণ 24 পরগণা জেলায় দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠা সংস্থার মাধ্যমে মেয়েদের নিয়ে কাজ করছেন মীনা দাস। তাঁর কথায়, “স্কুলছুট আর বাল্যবিবাহ কয়েনের এপিঠ আর ওপিঠ।” চিরাচরিত সমস্যাগুলি ছাড়াও লকডাউন ও স্কুলবন্ধ থাকাকে বিশেষভাবে দায়ী করছেন মীনা দাস৷ স্কুলছুট মেয়েদের ক্ষেত্রেই নারীপাচার, বাল্যবিবাহের মত ঘটনা দেখা যায়। “ লকডাউনের ফলে কয়েক ধাক্কায় অনেকটা পিছিয়ে গেলাম আমরা, এই অবস্থার পরিবর্তন করা সহজ হবে না” আক্ষেপের সুরে বলছিলেন তিনি। বছর বছর আয়লা, আম্পান, ইয়াসের মত সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়ায় আর্থসামাজিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়েছে দুই 24 পরগণাতেই। কর্মহীনতা, আর্থিক সংকট বৃদ্ধির সাথে সাথে নারীপাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে, অল্প বয়সের মেয়েদের বিয়ের প্রবণতা বেড়েছে, বেড়েছে বিয়ের নামে প্রতারণা ও নারীপাচারের ঘটনাও।
মানিকতলা খালপাড়ের ঝুপড়ির ছেলেমেয়েরা সামিল হল মাতৃভাষা দিবসের প্রভাতফেরিতে।
কৃষক আন্দোলনের নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পথ দেখাচ্ছে লিঙ্গসাম্যের ভাবনাকে।
শ্রীলঙ্কায় কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির এমন তীব্র আকাল কখনও দেখেনি সেই দেশ।
গবেষক হলেও দলিত তো! বদলায় না নির্মম ইতিহাস।
কাজের জগতে ইংরেজির বিকল্প নেই এই সত্যি কথাটা মানতে না পেরে সোশাল মিডিয়ায় ক্ষেপে উঠল সেন্টিমেন্টাল আত
বাংলায় রাজনীতিতে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনাবলীল তার চিরায়ত অহিংসার ধারণার সঙ্গে একেবারেই মেলে না।