×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বাবা রামদেবের ম্যাজিক

    রঞ্জন রায় | 06-07-2020

    ম্যাজিকের স্টেজ নির্মাণ

     

    গত 28 মে, 2020 তারিখে ইকনমিক টাইমসে একটি খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছিল যে, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর জেলার কালেক্টর চুপচাপ বাবা রামদেবের পতঞ্জলি রিসার্চ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের তৈরি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোভিড-19 রোগীদের উপর পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু খবরটা চাউর হয়ে যায়। এই নিয়ে কিছু এনজিও এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিং দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেলের অনুমতি ছাড়া এবং নতুন কোনও ওষুধ মানুষের উপর পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত আইনি প্রোটোকল পালন ছাড়া এমন অনুমতি দেওয়া যায় কিনা সেই প্রশ্ন তোলেন। ফলে 22শে মে সেই অনুমতি বাতিল করা হয়। এই নিয়ে পতঞ্জলি ট্রাস্টের 96% শেয়ারের মালিক আচার্য বালকৃষ্ণ বলেন– “ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা আয়ুর্বেদ নিয়ে কোনও নতুন এক্সপেরিমেন্ট করছি না। যে ওষুধগুলো বহু লোক নিয়মিত ব্যবহার করছে, তা করোনা রোগীদের দিলে কতটুকু লাভ হয় দেখতে চাইছি।''[1]

     

     

    অতঃপর স্টেজে ম্যাজিক শো

     

    23 জুন সন্ধ্যেবেলা। করোনা মহামারীতে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় 5 লক্ষ ছুঁতে চলেছে। গোটা দেশ উৎফুল্ল। সমস্ত চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে, বাবা রামদেব আচার্য বালকৃষ্ণকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছেন। সামনের টেবিলে রয়েছে করোনিল, শ্বাসারি এবং অনুতৈল নামক নাকে দেওয়ার জন্য একটি তেল। বাবা রামদেব জানালেন যে, উনি রাজস্থানের জয়পুরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউট নামের একটি হাসপাতালে 100 জন রোগীর উপর রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালের নিয়ম মেনে পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে 3 দিনে 66% এবং 7 দিনে 100% রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। অতএব মাভৈ!

     

    সন্ধ্যেয় ইন্ডিয়া টিভি নামের হিন্দি চ্যানেলকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উনি জানালেন যে, কোভিডের চিকিৎসার জন্য কোনও এলোপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। প্রায় 545 টাকার এই তিনটে ওষুধ খাওয়াই যথেষ্ট। সাতদিনে একশো শতাংশ সাফল্য! দুনিয়ায় কোনও দেশ এখনও অবধি যা পারেনি অক্সফোর্ড হোক বা আমেরিকা কিংবা চিন বা জার্মানি তা নাকি প্রাচীন আয়ুর্বেদ পারল! সমস্ত টিভি চ্যানেলে বাবাজির যোগ-প্রজ্ঞা এবং গবেষণার জয়জয়কার। যারা এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন করার সাহস করছে, তারা দেশদ্রোহীএবং বিলিতি সাহেবদের পা-চাটাঅভিধা পেল।

     

    কেউ কেউ প্রশ্ন করল, ওষুধটি বাজারে ছাড়ার বা বিজ্ঞাপিত করার আগে উনি আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ) থেকে অনুমতি নিয়েছেন তো? হেসে জবাব দিলেন, কোনও বেআইনি কাজ করিনি। দরকারি অনুমতি এবং কাগজপত্র সবই আছে।

     

     

    অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স

     

    কিন্তু সেদিন রাত্রে আয়ুষ মন্ত্রক পতঞ্জলি আয়ুর্বেদকে নোটিস ধরিয়ে জানাল যে, মন্ত্রকের তরফে সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে নিশ্চিন্ত হয়ে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত যেন করোনিলের বিক্রি এবং প্রচার বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু কেন?

     

    কারণ, 21 ডিসেম্বর 2018-তে ভারত সরকারের গেজেটে ড্রাগস এন্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট-এর কিঞ্চিৎ সংশোধন করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, কোনও আয়ুর্বেদিক[2], সিদ্ধ, ইউনানি বা হোমিওপ্যাথি ওষুধের নামে কোনও রোগ নিরাময়ের বা চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া বা প্রচার করা নিষিদ্ধ।[3]

     

    মার্চ 2020 থেকে দেশে করোনার ভীতি ছড়িয়ে পড়ল। তার সঙ্গে শুরু হল  গোমূত্র সেবন, নাকে সরষে অথবা আয়ুর্বেদিক তেল লাগিয়ে করোনা ঠেকানোর বিপত্তারণ মন্ত্র। এমন সময়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত 1 এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হল যে, কেউ যদি আয়ুর্বেদ, ইউনানি কিংবা সিদ্ধ পদ্ধতিতে রোগ নিরাময়ের দাবি সংবাদপত্র, টিভি বা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত করেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।[4] এদিকে দেখা যাচ্ছে হরিদ্বারে এই ওষুধ উৎপাদনের জন্য লাইসেন্সের আবেদনে কোথাও করোনা চিকিৎসার নামগন্ধ নেই। অনুমতি নেওয়া হয়েছিল ইমিউনিটিবা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে।[5]

     

    গবেষণার নামে যা হয়েছি তা খতিয়ে দেখে জানা গেল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস রেজিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ার রেকর্ডেও এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে পতঞ্জলির নাম আছে, কিন্তু করোনিল বা শ্বসারির নাম নেই। রিসার্চের স্থান এবং ফলাফলের জায়গা খালি।

     

    95 জনকে বেছে নিয়ে 45 জনকে (ট্রিটমেন্ট গ্রুপ) ওষুধ দেওয়া হয় এবং বাকি 50 জন প্লেসিবোগ্রুপ, অর্থাৎ যাদের ওই ওষুধ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এতে শুধু 20 থেকে 40 বছরের লোককেই নেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলে উপসর্গবিহীন, বা সামান্য কিছু উপসর্গযুক্ত। পুরো গবেষণা ঠিকমতো করলে অর্থাৎ চিকিৎসার পর ফলো-আপ পিরিয়ডের উপসর্গ, সাইড এফেক্ট এসব দেখতে গেলে দুমাস লাগে। অথচ এঁরা একমাস পুরো হতে না হতেই ওষুধ বানিয়ে ফেললেন। কোনও মেডিকেল জার্নালে রিসার্চের ফল এবং রিপোর্ট প্রকাশ করা দরকার মনে করেননি। রোগীদের ক্লিনিক্যাল রিপোর্টে কো-মর্বিডিটিস আছে কিনা, চিকিৎসার সময় এবং ডোজের পরিমাণ, নারী-পুরুষ এসব কোনও রেকর্ড নেই। ফলে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই রাজ্যে আয়ুষ মন্ত্রকের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত করোনিলের বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিলেন। মুজফফরপুর এবং জয়পুরে বাবা রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণের বিরুদ্ধে এফআইআর হল। রাজস্থানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুঙ্কার দিলেন এবং মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অপরাধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন বলে জানালেন।[6]

     

     

    ফের ম্যাজিক: এবার শীর্ষাসন বা পুরো পাল্টি

     

    সাতদিন গেল না। এবার 30জুন তারিখে রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণ আবার সাংবাদিক বৈঠক করলেন। বললেন, উনি আয়ুর্বেদকে বদনাম করার জন্য এক ষড়যন্ত্রের শিকার। উনি নাকি কখনওই দাবি করেননি যে, পতঞ্জলির নতুন ক্লিনিক্যালি ট্রায়ালডওষুধ করোনিল করোনা সারাতে পারে বা এই ওষুধ খেয়ে করোনার রোগী সেরে গেছে।

     

    তার ঘোষণা অনুসারে আয়ুষ মন্ত্রক তাদের তিনটি ওষুধের প্যাকেজ দিব্য করোনিল, দিব্য শ্বাসারি বটি এবং দিব্য অনুতৈল-কে প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধির ওষুধ হিসেবে বিক্রি করার ছাড়পত্র দিয়েছে।[7]

     

    কিন্তু আইনজীবি তুষার আনন্দ দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছেন যে, উচ্চ আদালতের কাছে মিথ্যা দাবি করে লোকের প্রাণ নিয়ে খেলা করার অপরাধে বাবা রামদেবের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হোক।[8]

     

     

    বাবার ব্যবসা বাণিজ্যের ট্র্যাক রেকর্ড

     

    বাবা রামদেবের ওষুধ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগে উনি ক্যান্সার, এইডস (এইচআইভি), এমনকি সমকাম (!) সারানোর দিব্য ওষুধের দাবি করে হইচই ফেলেছিলেন। এনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের 94% শতাংশের মালিক আচার্য বালকৃষ্ণও বিতর্কিত চরিত্র। তার হাইস্কুল এবং সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করার কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও শোনা যায়। সিবিআই বালকৃষ্ণের বিরুদ্ধে নকল ডিগ্রির ভিত্তিতে পাসপোর্ট নেওয়ার অভিযোগে মামলা করে।[9]পাসপোর্ট 2011 সালে বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। সাত বছর পরে হাইকোর্ট শর্ত সহ পাসপোর্ট  ফেরত দেওয়ার আদেশ দেয়।[10]

     

    ন্যাশনাল অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিং অথরিটি (এনএএ) গত মার্চ 2012 তারিখের এক রায়ে বাবা রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডকে 75.08 কোটি টাকা জরিমানা জমা করতে  বলে। তার অপরাধজিএসটির (পণ্য এবং সেবা কর) পরিমাণ কম হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তার কোম্পানির ওয়াশিং পাউডার বিক্রির সময় দাম কমানো উচিত ছিল। উনি তা না করে প্রোডাক্টের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা কেন্দ্রীয় জিএসটি আইনের উল্লঙ্ঘন। এই পণ্যটির উপর জিএসটি আগে 28% ছিল। পরে কমে প্রথমে 18%, তারপরে 12% হয়ে যায়। তাহলে পতঞ্জলির উচিত ছিল সেই হিসেবে দাম কমিয়ে দেওয়া, যাতে করহ্রাসের সুফল গ্রাহক পায়। রায়ে বলা হয়েছে ওই অর্থ এবং 18% জিএসটি যোগ করে আগামী তিনমাসের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গ্রাহক কল্যাণ ফান্ডে জমা করতে হবে।[11] ডায়রেক্টর জেনারেল অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিংকে (ডিজিএপি) আগামী চারমাসের মধ্যে অনুপালন / কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

     

    বিগত 17 ফেব্রুয়ারি, 2018 তারিখে ডায়রেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স চিনে রপ্তানি করার বাবা রামদেবের সময় 50 টন রক্তচন্দনের কাঠ বাজেয়াপ্ত করে।[12] এর বিরুদ্ধে গত 15 ফেব্রুয়ারি 2018 তারিখে রামদেব দিল্লি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে বলেনতার কাছে ডায়রেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের বৈধ অনুমতি আছে। আর এই কাঠ অন্ধ্রপ্রদেশের বনবিভাগের থেকে নিলামের মাধ্যমে কেনা।

     

    বাবার পারমিট ছিল সি-গ্রেড রক্তচন্দনের কাঠ রপ্তানি করার। রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স ওনার চুক্তিপত্র এই সন্দেহে বাজেয়াপ্ত করে যে, এতে গ্রেড-এ এবং গ্রেড-বির কাঠ রয়েছে। ওই দুটো গ্রেড রপ্তানি করা নিষিদ্ধ।

     

    ইকনমিক টাইমসের খবর অনুসারে, 2014-তে বিশ্ববাজারে এ-গ্রেড রক্তচন্দনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তার দাম টন প্রতি 30 লাখ টাকা থেকে বেড়ে ২ কোটিতে পৌঁছে যায়। হাইকোর্ট আগামী শুনানির তারিখ 18ই এপ্রিল ঠিক করেছিল। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও ডিআরআই-এর জবাবও চেয়ে পাঠিয়েছিল।[13] ব্যাপারটা তখনই মেটেনি। ডায়রেক্টর অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডি আর আই) 1 অগাস্ট, 2018 তারিখে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ, এবং তার চিফ ফিনানসিয়াল অফিসার সমেত আরও আটজনকে শোকজ নোটিস জারি করে বলে কাঠের গুঁড়িগুলোর সঙ্গে কাগজে বলা কোড মিলছে নাঅর্থাৎ চোরাচালানের ইঙ্গিত।[14]

     

    হরিদ্বার কোর্ট বাবা রামদেবের কোম্পানি পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডকে মিসব্র্যান্ডিংএবং মিসলিডিং অ্যাড’-এর জন্য 11 লক্ষ টাকা জরিমানা  করেছিল।[15] অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মতে অন্য কোম্পানির তৈরি দ্রব্য নিজেদের লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড (প্যাকেজিং অ্যান্ড এবং লেবেলিং রেগুলেশনস 2011) আইনের ধারা 52 (মিসব্র্যান্ডিং) এবং ধারা 53 (মিস্লিডিং অ্যাড)-এর উল্লঙ্ঘন।

     

    এছাড়া পতঞ্জলির মধু, নুন, সরষের তেল, জ্যাম এবং বেসনের মান নিয়েও অভিযোগ ছিল। তার ভিত্তিতে 16 অগাস্ট, 2012 তারিখে কিছু স্যাম্পল বাজেয়াপ্ত করে পরীক্ষা করা হয়, যা নির্ধারিত মানের চেয়ে কম পাওয়া যায়।  পরীক্ষাটি উত্তরাখন্ডের একমাত্র অনুমোদিত রুদ্রপুর ল্যাবে করা হয়। আলাদা আলাদা করে জরিমানা করলে মোট 18 লাখ টাকা ফাইন হত। ম্যাজিস্ট্রেট একসাথে 11 লাখ টাকা ফাইন করে একমাসের মধ্যে জমা দিতে আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন আবার যদি গুণগত মানে খামতি থাকে, তাহলে আরও কড়া শাস্তি হবে।

     

    2017 সালে একটি আরটিআই পিটিশনের উত্তরে জানা যায় যে, পতঞ্জলির দিব্য আমলা জুস এবং শিবলিঙ্গি বীজ সরকারি পরীক্ষায় ফেল করেছে। শিবলিঙ্গি বীজে 31.68% ‘ফরেন ম্যাটার’ (অন্য পদার্থ) পাওয়া গেছে। আর আমলার জুসের পিএইচ ভ্যালু নির্ধারিত মান 7-এর চেয়ে কম পাওয়া গেছে। এর ফলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।

     

    এর একমাস আগে পশ্চিমবঙ্গের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় পতঞ্জলির আমলা জুস গুণমানের বিচারে পাস না করায় সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন স্টোর্স ডিপার্টমেন্ট (সিএসডি) ওখানে এক ব্যাচ আমলা জুস বিক্রি স্থগিত রাখে।[16]

     

    সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাত 3 জানুয়ারি, 2006 তারিখে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিব বসন্তের  একটি চিঠি নিয়ে দাবি করেন যে, বাবা রামদেবের আয়ুর্বেদিক দিব্য ফার্মেসিতে তৈরি ওষুধে জড়িবুটি, ভেষজ উপাদান ছাড়া মানুষের হাড়ের গুঁড়ো এবং পশুর শরীরের অংশও মেশানো রয়েছে। কারাতের ইউনিয়নের সদস্য শ্রমিকেরা মে মাসে হরিদ্বারে দিব্য ফার্মেসির প্রেসক্রিপশন এবং ওদের কাউন্টার থেকে কেনা ওষুধের রসিদ সহ স্যাম্পল নিয়ে সরকারি পরীক্ষার জন্যে জমা করে। ওরা জানায় যে, একটি মৃগী সারানোর ওষুধে মানুষের খুলির হাড়ের গুঁড়ো এবং যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধে (দিব্য যৌবনামৃতবটি) ভোঁদড়ের অন্ডকোষের পাউডার মেশানো হয়।[17]

     

    তখন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা, যথা শরদ পাওয়ার, লালুপ্রসাদ, মুলায়ম সিং, প্রকাশ জাভড়েকর, রাম মাধব এবং সুভাষ চক্রবর্তী প্রমুখ, বাবার পক্ষে দাঁড়িয়ে যান;[18]  বৃন্দা কারাতকে মাল্টিন্যাশনালের পয়সা খাওয়া দালাল বলে আক্রমণ করা হয়। তার ইউনিয়ন অফিসে হামলা হয়। এদিকে বাবা রামদেব বৃন্দার দেওয়া স্যম্পলের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেন, কেননা ওই স্যাম্পল কোনও সরকারি কর্মচারি বাজেয়াপ্ত করেননি। উনি নিজে কিছু স্যাম্পল দেন, তাতে ভেষজ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায়নি।

     

    তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অম্বুমনি রামদাস সংসদে জানান যে, হায়দ্রাবাদের সরকারি ল্যাবে মানবদেহের ডিএনএ পাওয়া গেছে, অন্যগুলিতে পাওয়া যায়নি। আরও অনুসন্ধান দরকার। একমাস বাদে উত্তরাঞ্চল সরকার বাবাকে সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।[19]

     

    উইকিপিডিয়া বলছে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেড একটি ভোগ্যপণ্য উৎপাদক এবং বিতরক সংস্থা। এর 2016-17 সালে ঘোষিত টার্নওভার (1 বছরের ব্যবসা) 10,216 কোটি টাকা এবং 2019 সালের হিসেবে এর সম্পদের মূল্য 3,000 কোটি টাকা।[20]

     

     

    তবু তিনি বাবা বলে কথা

     

    ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা সাত লক্ষ ছুঁতে চলেছে। তবু বর্তমানে সর্বত্র শান্তিকল্যাণ বিরাজ করছে, কারণ আইসিএমআর ঘোষণা করেছে যে, হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন 15ই আগস্ট, 2020 নাগাদ বাজারে আসবে। এই ভ্যাকসিন 29শে জুন মানব স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু ২রা জুলাই তারিখে এদের এক কর্তাব্যক্তি বিজ্ঞানীদের চিঠি ধরিয়েছেন- মানুষের ওপর পরীক্ষার তিনটে স্টেজ (যা প্রোটোকল হিসেবে মানলে ছমাস লেগে যায়) টপাটপ ছসপ্তাহের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। যাতে ঘোষণা অনুযায়ী 15ই আগস্ট নাগাদ বাজারে ভ্যাকসিন ছাড়া যায়। যদিও 5 জুলাই  রবিবার ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে এই ভ্যাকসিনের ঘোষিত সময়সীমা অযৌক্তিক এবং অভুতপূর্ব।[21]

     

     

    তথ্যসূত্র:
    ==================================

    1 ইকনমিক টাইমস, এবং পিটিআই, 28 মে, 2020

    2 দ্য ওয়্যার, 24 জুন, 2020

    3 গেজেট অফ ইন্ডিয়াঃ এক্সট্রাওর্ডিনারি, ভাগ-2, খন্ড-3; 24 ডিসেম্বর, 2020

    4 ভারত সরকারের গেজেট ক্রমাংক জেড 25023/09/2018-2020-ডিসিসি (আয়ুষ) 1 এপ্রিল, 2020

    5 দি হিন্দু, এবং ফ্রন্টলাইন, 24 জুন, 2020

    6 এনডিটিভি, 24 জুন, 2020

    7 ইকনমিক টাইমস, 2 জুলাই, 2020

    8 ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, 2 জুলাই, 2020

    9 দ্য কুইন্ট, 30 জুন, 2020

    10 প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, 18 জুলাই, 2018

    11 ইকনমিক টাইমস, 17ই মার্চ, 2020

    12  বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, এবং ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস 23 ফেব্রুয়ারি, 2018

    13 ইকনমিক টাইমস, 23 ফেব্রুয়ারি, 2018

    14 সিএনবিসি টিভি 18-এর নিউজলেটার, 11 সেপ্টেম্বর, 2018

    15  টাইমস অফ ইন্ডিয়া, 2016

    16  হিন্দুস্থান টাইমস, 30 মে, 2017

    17 ফ্রন্টলাইন, 21 এপ্রিল, 2006

    18 উইকিপেডিয়া এবং ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস, 6 জানুয়ারি, 2006

    19 পিটিআই এবং রিডিফ ডটকম; 22 ফেব্রুয়ারি, 2006

    20  উইকিপিডিয়া

    21 ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, 5 জুলাই, 2020

     

     


    রঞ্জন রায় - এর অন্যান্য লেখা


    সাভারকর কি “কুইট ইন্ডিয়া” আন্দোলনের বিরোধিতা করে ব্রিটিশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন?

    ভারতের কিসানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গোটা সমাজ

    বিজ্ঞানের নবতম শাখা কামধেনু গৌ-বিজ্ঞানের জন্ম হল!

    নোট ছাপিয়ে গরিবের হাতে টাকা, নাকি সহজ ঋণে শিল্প চালানোর সুবিধা?

    মনু যাদের পূজ্য তাদের পক্ষে জন্মভিত্তিক জাতিভেদের উপরে ওঠা অসম্ভব।

    দাঙ্গার সময় গান্ধীজির মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্যে হিন্দু যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বানে খেপেন সাভারকর।

    বাবা রামদেবের ম্যাজিক-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested