হাসবেন না; এটা সত্যি ভাববার কথা। নইলে কানপুর আই আই টি’র এক অধ্যাপক ড. ভি এম শর্মা ছাত্রদের গাওয়া একটি গান শুনে তাতে হিন্দুধর্মের অপমান হচ্ছে মনে করে ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯-এ লিখিত অভিযোগ করেন। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ রীতিমত তদন্ত কমিটি বসান যাতে এই সব গান-টানের পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা গভীর চক্রান্তের হদিশ পাওয়া যায়!
এই গীতিকবিতা বা ‘নজম’ উর্দূতে লেখা। লেখক আবার পাকিস্তানি শায়র — গোদের উপর বিষফোঁড়া। আরও আছে, শায়রের নাম হল ফৈজ আহমেদ ‘ফৈজ’। ভদ্রলোক পাকিস্তানের কমুনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। একেবারে ত্র্যহস্পর্শযোগ! এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে।
এই রহস্যের খোঁজে বেরিয়ে আগে দেখা যাক, কবিতাটি কী।
গোড়ায় কবিতাটির নাম দেওয়া হয়েছিল কোরানের একটি বয়েত থেকে, আরবি ভাষায় ‘ওয়া ইবকা ওয়াজ-ও-রব্বিক’। গোদা বাংলায় বললে ‘ঈশ্বরের মুখ’। কিন্তু গোটা কবিতাটি লেখা হয়েছিল উর্দু ভাষায়; এবং এই কবিতাটি এখন সবাই তার ধুয়ো বা ধ্রুবপদের জন্যে চেনে –‘ হম দেখেঙ্গে’ বা ‘আমরা দেখব তো’! এতটা পড়ার পড়েও যদি আপনারা গা-ছমছমে সন্দেহজনক কিছু না পান তো আমি নাচার।
এই কবিতাটি ফৈজ লিখেছিলেন ১৯৭৯ সালে, মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়াউল হকের জমানায়। ফৈজের পরিশীলিত, নম্র কিন্তু দৃঢ় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ইকবাল বানোর গলায় গান হয়ে গমগমিয়ে বেজে উঠেছিল ১৯৮৬ সালে লাহোর শহরে। রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে। সেই থেকে এই গান গত কয়েক দশক ধরে এই উপমহাদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রতিবাদের অন্যতম ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই বর্তমান ভারতে বিভিন্ন ইস্যুতে জনতা এই গান গেয়েছে। জন্তর-মন্তরে, ইন্ডিয়া গেটে, ভোপাল গ্যাসকান্ডের প্রতিবাদে, মহিলাদের মিছিলে, গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ায়, জামিয়ায়, শহীদী ময়দানে, জে এন ইউতে।
আজ ভারতে কোন মিলিটারি ডিক্টেটর নেই; বর্তমান সরকার বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি। তাহলে বিক্ষুব্দ যুব-ছাত্রের দল যদি এই গান গেয়েই থাকে তাতে বিচলিত হওয়ার কি আছে?
কিন্তু এলিট কানপুর আই আই টিতে দেখছি একেবারে বিদ্যাস্থানে ভয়েভ্য চ!
এবার দেখা যাক নালিশ করে বালিশ পাওয়া অধ্যাপকটিকে। উনি ফ্যাকাল্টি মেম্বার ড. ভি এম শর্মা। গত ১৭ ডিসেম্বর আই আই টি’র কিছু ছাত্র সি এ এ আইনের বিরুদ্ধে একটি সভার আয়োজন করে, তাতে এই গানটি গাওয়া হলে ডক্টর শর্মার মনে হল এতে হিন্দুধর্মের অপমান করা হয়েছে। ছাত্ররা এই নালিশের নিন্দে করে বলল একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভাকে খামোকা ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা দেওয়া হচ্ছে।
গানটি হল-
“যব অর্জ-এ-খুদা কে কাবে সে/সব বুত উঠায়ে জায়েঙ্গে
হম অহল-এ-সফা মর্দুদ-এ-হরাম/ মসনদ পে বিঠায়ে জায়েঙ্গে,
সব তাজ উছালে জায়েঙ্গে / সব তখৎ গিরায়ে জায়েঙ্গে,
ব্যস , নাম রহেগা আল্লা কা, হম দেখেঙ্গে”।।
(যেদিন মন্দির থেকে হবে বিদেয়, নকল প্রতিমা ঠুঁটো পুতুল,
বঞ্চিত হতভাগ্যের দল, বসে যাবে সব মসনদে।
ছূঁড়ে ফেলা হবে সব মুকুট, ধুলোয় গড়াবে সিংহাসন,
রবে শুধু ঈশ্বরের নাম, আমরা থাকব সাক্ষী,
সেদিন আমরা থাকব সাক্ষী।।)
এখানে আপত্তিটা কোথায়? ঈশ্বরের জায়গায় আল্লা? নাকি সিংহাসন ভেঙ্গে ফেলার এবং মুকুট ছুঁড়ে ফেলার ডাকে? হিন্দুধর্মের অপমান? আরে এই দেশেই তো বলা হয়েছে ‘ঈশ্বরো আল্লা তেরো নাম’ এবং ‘যত মত তত পথ’! মজার ব্যাপার হল ফৈজ এই কবিতাটি লিখেছিলেন জিয়াউল হকের গোটা পাকিস্তানের বুকে ইসলামাইজেশনের রোডরোলার চালানোর প্রতিবাদে। এখন গ্রহের ফেরে পড়শি ভারতে আরেক রোডরোলার এই কবিতাটিকে পিষে দিতে চাইছে। অধ্যাপক শর্মা দাবি করেছেন, যে এই গান গাওয়ার পেছনে অপরাধী চক্রকে খুঁজে বের করে তৎক্ষণাৎ বের করে দেওয়া হোক ।
এই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচ ডি অধ্যাপকটি কি ‘মেটাফর’ বোঝেন না? এখানে ফৈজ মুকুট/সিংহাসন বলতে ডিক্টেটর জিয়াউল হকের স্বৈরাচার এবং আল্লা কা নাম বলতে ন্যায়ের দুনিয়া বোঝাচ্ছেন তা কি ইনি বোঝেন না? নাকি টেকনোলজি বা বিজ্ঞান পড়লে শিল্পকলা/কবিতার ব্যাপারে একেবারে ‘বিদ্যাস্থানে ভয়েভ্য চ’ হতে হয়?
মন মানতে চায় না। তাই সত্যান্বেষণে পাওয়া গেল ড. শর্মার বয়েস বেশি নয়। কিন্তু উনিশটি বই লিখেছেন। একটাও টেকনোলজি বা বিজ্ঞান নিয়ে নয় । উনি ধর্ম, উগ্রবাদ, ইতিহাস, ভারতে বিদেশি আক্রমণ এবং ইসলামী আতংকবাদের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। হাসবেন না। বিশ্বাস না হয় অ্যামাজনে বিজ্ঞাপন দেখুন, একেবারে মুখ ঢেকে যাবে। উনি কবিও বটেন! এবার ওঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় বইটির নাম শুনুন, -“নেকেড মুঘলসঃ ফরবিডন টেলস অফ হারেম এন্ড বুচারি”। ইয়া আল্লা!
ভাবছি বাংলার প্রফেসর শর্মারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছেন! ‘নেভার সে অপমান, জানলে বিবিজান, হতমান হলেও সে নয়’!
হিন্দু ধর্মের অপমান --আমি লিস্টি করে দিচ্ছি।
এক, নজরুলের ‘ফরিয়াদ’ কবিতাটি। ভগবানের কাছে নালিশ! তাঁর দুনিয়ায় যত অত্যাচার আর অন্যায়ের ফিরিস্তি! তারপর মাইকেলের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। এতে রাবণ-মেঘবাদ হিরো? রাম-লক্ষণ ভিলেন? মেঘনাদের স্ত্রী প্রমীলা বলছে ‘ আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে’!
কেরেস্তান মধুকবি আমাদের ‘মর্য্যাদা পুরুষোত্তম’ রামচন্দ্রকে ভিকিরি বানিয়ে ছেড়েছেন।
কিন্তু তাহলে রবি ঠাকুরই বাদ যাবেন কেন? উনি লিখেছেন ‘চক্ষের নিমেষে, ভিখারি ধরিল মূর্তি দেবতার বেশে।’ উনিও তো ‘প্রশ্ন’ করছেন ভগবানকে, ‘তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো’? ওঁর সন্ন্যাসী লক্ষ টাকায় তৈরি বিশাল উঁচু মন্দির দেখে ফরমান দেয় সে মন্দির শুধু ‘শূন্য নয়, রাজদম্ভে পূর্ণ’। আসলে উনি অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখে যাননি তো!
সাভারকর কি “কুইট ইন্ডিয়া” আন্দোলনের বিরোধিতা করে ব্রিটিশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন?
একদা বিজেপি-ই এই কৃষি সংস্কারের প্রবল বিরোধী ছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সমর্থক ছিলেন। সেই সাভারকরই কালাপানি থেকে ফেরত এলেন কট্টর মুস
সরকার আগে মন্দার কথা অস্বীকার করলেও লকডাউন তাকে চলতি বছরে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে!
কৃষি বিল নিয়ে সরকারি আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না কৃষকরা।
নীরব মোদী, মেহুল চোকসির মতো গুজরাতের স্বর্ণ ব্যব্যসায়ীদের কেচ্ছা তো সর্বজনবিদিত।