বর্তমান ভারতে মুসলমান সম্প্রদায়ের জনসাধারণকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক প্রতিপন্ন করাই হিন্দুত্ববাদী শক্তির উদ্দেশ্য। এই বিভাজনের প্রক্রিয়া, বঞ্চনা চলে প্রতিনিয়ত। ধর্ম জিগির তুলে দাঙ্গা সংঘটিত করে মুসলমান সম্প্রদায়কে একঘরে করে দেওয়া পুরোনো ছক। এছাড়া হাতিয়ার অর্থনৈতিক শোষণ, ক্রমাগত যা একটা সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছে দিচ্ছে।
গুজরাত গণহত্যার সময়ে কিংবা দিল্লির দাঙ্গা পরিস্থিতিতে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছিল অর্থনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পঙ্গু করে দেওয়ার চক্রান্ত। হিন্দুদের দোকানগুলিতে হিন্দু দেবদেবীর ছবি লাগিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয় আগুন লাগার আগেই। লেলিহান শিখা নিভে যাওয়ার পর কেবল ছাই হয়ে যায় মুসলমান দোকানিদের সঞ্চয়, স্বপ্ন। প্রায় একই ঘটনার পুরাবৃত্তি দেখা গিয়েছে 2000এর ফেব্রুয়ারিতে নয়া নাগরিকত্ব বিধির প্রতিবাদে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির দাঙ্গার সময়ে। আক্রান্ত এবং পীড়িত মুসলিমদের বিরুদ্ধেই কর ফাঁকি দেওয়া বা ওই জাতীয় অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ করে তাঁদের হয়রান করা হয়েছে।
2014 থকে শুরু করে ক্রমশ কেন্দ্র ও উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বিজেপির একছত্র অধিপত্য বিস্তারের পর অর্থনৈতিক শোষণ আরও তীব্র হয়েছে। গো-মাংস নিয়ে রেলযাত্রা করার অপরাধে জুনাইদকে হত্যা যেমন ধর্মীয় বিভাজনকে স্পষ্ট করেছিল, তেমন বার্তা দিয়েছিল অর্থনৈতিক পীড়নের। গো-মাংসকে কেন্দ্র করে বিপুল বাণিজ্যে ধসে যেতে শুরু করে। কর্মহারা হন অসংখ্য মানুষ। সামাজিক ন্যায্যতা তৈরি করে আইনি পথে এরপর গো-মাংস বিক্রয় নিষিদ্ধ করে হিন্দুত্ববাদের আঁতুড়ঘর উত্তরপ্রদেশ।
আরও পড়ুন:পীড়নের জবাবেই আল্লাহ্ হো আকবর
শহরাঞ্চলে মুসলমানের 50 শতাংশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বনিযুক্ত। এদের অধিকাংশই ছোট দোকানি, ফল বিক্রেতা, মাংস বিক্রেতা এবং কাপড় বোনা, জরির কাজে যুক্ত। ফলত, ধর্মীয় পরিচয় বহুক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কর্মক্ষেত্রে। কোভিড অতিমারীর সময়কালেও ভাইরাস ছড়ানোর গুজব রটিয়ে একঘরে করা হয়েছে মুসলমান বিক্রেতা, ছোট দোকানিদের। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ হয়েছে ধর্ম পরিচয়ের কারণে। ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষে দিনের পর দিন এভাবেই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল করা হচ্ছে মুসলমান সম্প্রদায়কে, সচেতনভাবে, সংগঠিতভাবে।
উত্তরপ্রদেশের বুনকররা ( কাপড় বোনার কাজে যুক্ত) বাস করেন বেনারসেরই উপকন্ঠে। দুনিয়াখ্যাত বেনারসির নির্মাতা তাঁরাই। আগে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই বিপুল সংখ্যায় যুক্ত ছিলেন এই কাজে৷ বর্তমানে কেবল মুসলমান কারিগররাই বাঁচিয়ে রেখেছেন এই শিল্প, ইতিহাস। কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে ক্রমশ ভেঙে পড়ছে এই শিল্প৷ সরকারি অনুদান তো নেই-ই, ঋণের জালে জর্জরিত বহু কারিগর৷ নতুন প্রজন্ম তাই বেনারসি বোনার কাজ ছেড়ে সুরাট, মুম্বাই যাচ্ছে কাজের সন্ধানে৷ অনিশ্চিত বেনারসি শাড়ির ভবিষ্যৎ, অনিশ্চিত বেঁচে থাকা।
কোভিডের মাঝেই রাম মন্দিরের ভূমিপুজো ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে হত্যা করে। এবার লক্ষ্য রাম জন্মভূমি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ। অযোধ্যার রামমন্দির সংলগ্ন পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ফাঁকা করার কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এলাকার মুসলমান জনসাধারণ। বহু বাড়ি, দোকানঘর বিক্রি অস্পষ্ট নির্দেশিকা ঘুরছে আকাশে-বাতাসে। আগামী পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে ভিটে ছাড়া হওয়াই নিয়তি ভেবে নিয়েছেন। চলছে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। ওঁরা আশাবাদী হারতে পারে যোগী আদিত্যনাথ বাহিনী, কিন্তু সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ কতটা বদলাবে সন্ধিহান সকলেই!
ভারতের মানচিত্র ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে মুছে দেওয়ার প্রকল্প বিপন্ন করছে এদেশের বহুত্বের ধারণাকে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে।
সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রীতির লক্ষ্যে পদযাত্রা
মাধ্যমিকের শূন্য খাতা আরও একবার দেখাল ডিজিটাল ক্লাসরুমের প্রকৃত ছবিটা
প্রতি দিনের রেলযাত্রা যেন এঁকে দেয় জীবনেরই জলছবি। বুনে চলে পাওয়া না-পাওয়ার আখ্যান।
কাজের জগতে ইংরেজির বিকল্প নেই এই সত্যি কথাটা মানতে না পেরে সোশাল মিডিয়ায় ক্ষেপে উঠল সেন্টিমেন্টাল আত
দারাং জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যা ও উচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে রয়েছে একাধারে জমির অধিকারের প্রশ্ন
শ্রীলঙ্কায় কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির এমন তীব্র আকাল কখনও দেখেনি সেই দেশ।