×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • বাংলা বনাম ইংরেজি, লেগে যা নারদ নারদ!

    রাতুল গুহ | 05-04-2022

    প্রতীকী ছবি।

    বাংলা মিডিয়ামে পড়ে কর্পোরেট হাউসে চাকরি পাওয়া যায় না, কোনও ইন্টারভিউতে সফল হওয়া যায় না! সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক রেডিও জকি'র এই মন্তব্য। অসম্পূর্ণ ভিডিওটিতে বলতে শোনা যাচ্ছে জনৈক আরজে অয়ন্তিকাকে। আর তাতেই দু'দিন ধরে বাঙালির যাবতীয় ক্রোধের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেন তিনি। দায়হীন হাজার হাজার মন্তব্যও ছুটে এল তাঁর দিকে। সত্যিই তো আত্মসম্মানের প্রশ্ন! প্রশ্ন বাংলার মর্যাদার! আপামর বাঙালি তাই আরও বেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন বেসরকারি সংস্থার এক সাধারণ কর্মীর বিরুদ্ধে।

     

    সত্যিই তো বাংলা মাধ্যমের কত পড়ুয়াই পরবর্তী জীবনে দেশদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে নিজের যোগ্যতায়। উচ্চমেধা থেকে মধ্যমেধা কিংবা গোঁত্তা মেরে পাস করা রত্নরাও দিব্যি করে কম্মে খাচ্ছেন। অধিকাংশই আবার কর্পোরেট হাউসে কর্মরত। বিলম্বিত পুঁজিবাদী বিকাশের আবহে মধ্যবিত্ত বাঙালি আজও বাংলার প্রতি আবেগপ্রবণ, দরদী। আবার কর্পোরেট প্রভুর দয়া দাক্ষিণ্যও তার প্রয়োজন জীবিকার প্রশ্নে। অদ্ভুত দোলাচলে তাই সে আরজে'র বিপক্ষে সপ্তাহান্তে যুক্তিজাল বোনে, কেউ কেউ মিম বানায়। সপ্তাহ ঘুরতে তারাই আবার সন্তানের বেসরকারি স্কুলের ফি জোগাড় করতে ছুটে মরে সেক্টর ফাইভ, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই কিংবা পুনে। সন্তান না পায় ভাষা শিক্ষা, না পায় শিকড়ের খোঁজ।

     

    গেল গেল রব তুলে ফেসবুকে প্রতিবাদী হওয়াই এই যুগের বিশিষ্টতা। চায়ের আড্ডায়, ক্যান্টিনে তর্ক করলে দায় বর্তায় নিজের প্রতিও। কিন্তু ভার্চুয়াল মাধ্যমে সে সবের বালাই নেই। নিজের জীবন যাপনের বিপরীত কোনও ইমেজ গড়ে তুলে জনপ্রিয় হওয়াই আজকের ঝোঁক। আর এই প্রবণতাতে গা ভাসিয়েই ঢিল ছোড়ার লক্ষ্য জনৈক আরজে। বাংলা মাধ্যম সরকারি স্কুলের বেহাল দশার জন্য দায়ী যে আমরাও, সচেতন প্রতিটি নাগরিক, একথা কেন আমরা ভুলে যাচ্ছি? আসলে সুবিধাবাদ। আসলে মুহূর্তের প্রতিবাদেই আমাদের নিজেদের আত্মতৃপ্তি।

     

    আরও পড়ুন: বাংলা বনাম ইংরেজি নয়, বিষয়টা হল ইংরেজি এবং বাংলা

     

    1991 সালে গ্যাটস চুক্তির মাধ্যমে ভারত মুক্ত বাণিজ্যের খাতায় নিজের নাম তুলল, আর সঙ্গে খুলে গেল বিদেশি বহুজাতিক সংস্থার লগ্নির দরজা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঋণ মেটাতে সরকারি খাতে ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন রাষ্ট্রনেতারা। শুরু হল শিক্ষার আঙিনায় বাণিজ্যিকীকরণ। সেদিন কিন্তু আমরা চুপ ছিলাম। নিজেদের সন্তানকে সেরার তকমা পেতে তাকে সামিল করলাম প্রতিযোগিতায়, কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্যে তাদের ইঁদুর দৌড়ে সামিল করালাম আমরা। জানালাম না আমাদের মাতৃভাষার অধিকার ফিরে পেতে শহীদ হয়েছিলেন এই ছাত্রছাত্রীরাই।  

     

    গোটা একটা প্রজন্মকে সমাজ বিমুখ যাপনে অভ্যস্ত করে আজ কীসের এত ক্ষোভ মধ্যবিত্ত শহুরে নাগরিকদের? একের পর এক সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল যখন বন্ধ হচ্ছে, তারা তখন কোথায় ছিলেন! দায়হীন ভাবে মন্তব্য ছুঁয়ে দিয়ে আর যাই হোক এই ব্যবস্থা বদলাবে না, বদলাবে না আঞ্চলিক ভাষাকে হীন ভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও। বিগত দুই দশক নয় গ্লোবালাইজেশনের জাদু আমাদের মোহিত করে রেখেছিল, কিন্তু বর্তমানে রুটিরুজির গভীর সংকট, সংস্কৃতির সংকটের দিনেও কি আমরা বুঝব না নিজেদের ক্রটিগুলো!

     

    বাস্তবেই বাংলা মাধ্যমের সরকারি স্কুলগুলোকে পঙ্গু করে ইংরাজি মাধ্যমের রমরমা। যেখানে বৈশাখ মাসে রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যার রীতি নেই। চল নেই সত্যজিৎ, ঋত্বিকের সিনেমার। শিকড়হীন বলিউডি সংস্কৃতির চর্চা হয় হিন্দি মিশ্রিত বাংলা ভাষায়। এরাই বড় হয়ে নিজের পায়ের তলার মাটিকে অস্বীকার করবে। এর দায়ও কিন্তু আমাদের।

     


    রাতুল গুহ - এর অন্যান্য লেখা


    গবেষক হলেও দলিত তো! বদলায় না নির্মম ইতিহাস।

    সাম্প্রতিক ইউক্রেন সংকট তুলে ধরল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতকেই। 

    ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে গীতার শ্লোক, মোদীজির মহৎ কীর্তি।

    সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রীতির লক্ষ্যে পদযাত্রা

    মরিচঝাঁপির দলিত উদ্বাস্তু গণহত্যার চাপা পড়া ইতিহাস আজও প্রাসঙ্গিক

    বাংলার সাগরতটের কপিলমুনির আশ্রম আর সাগরের মেলায় মিশে আছে বহু সত্য, বহু মিথ, বহুত্বের চেতনা।

    বাংলা বনাম ইংরেজি, লেগে যা নারদ নারদ!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested