×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • যোগীর কোপে কবিই বাদ

    বিতান ঘোষ | 22-07-2021

    প্রতীকী ছবি।

    সেদিন গুনগুন করে গাইছিলাম, ‘একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে, রাজার দোহাই দিয়ে, এ যুগে তারাই জন্ম নিয়েছে আজি, মন্দিরে তারা এসেছে ভক্ত সাজিসংঘের সাপ্তাহিক অনুশীলনে নিয়মিত মুগুর ভাঁজতে যাওয়া বন্ধু বলল, এসব ইডিওটিক লাইন। কিন্তু হাজার সাধ্যসাধনা করেও জানা গেল না, এটা লিখে কোন বোকামিটা রবীন্দ্রনাথ করলেন। ভক্তের ভক্তি ভীষণরকম টেম্পোরারি এবং আপেক্ষিক, আর ভক্ত তার আরাধ্যকে সামনে খাড়া করেই অস্বাভাবিক রকমের ভক্তি দেখায়। যেমন কেপমারি হওয়ার পর দেখবেন, কেপমারই প্রথম আপনার কাঁধে হাত দিয়ে বলে, ‘কী করে এমন হল দাদা’? তাই ভক্তের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে পড়লে ভক্তরা রাগবেই। তবু তো তিনি রবীন্দ্রনাথ। গিরিশ কারনাড যেভাবে "রক্তকরবী’-র সমালোচনা করেছেন, বুদ্ধদেব বসু যেভাবে চোখের বালি’-র সমালোচনা করেছেন, সেভাবে তো রবীন্দ্রনাথকে ভক্তরা কাল্টিভেট বা অ্যানালিসিস করতে পারবে না। সুতরাং, রবীন্দ্রনাথকেই পাঠ্যসূচি থেকে উড়িয়ে দেওয়া যাক

     

     

    রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বঙ্গসমাজে একটা অদ্ভুত প্যানপ্যানানি আছে। শীতের হাওয়ার লাগল নাচন, আমলকীর ওই ডালে ডালেলিখেই যদি লোকটা ক্ষান্ত থাকত, অসুবিধার কিছু ছিল না। কিন্তু তিনি উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মান্ধতা এসব নিয়েও নাক নেড়েছেন। স্বস্তির বিষয় অনেকেই সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করেনি, ভক্তরা তো নয়ই। কিন্তু ভক্তদের মধ্যেও যারা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটু পড়াশোনা করেছেন, সেইসব লোকেরা দেখলেন, এ তো মহাবিপদ। মানুষে মানুষে ব্যবধান যত অনতিক্রম্য করা হচ্ছে, একটা রবীন্দ্রনাথ সেখানেই সাঁকো হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। পাঠ্যসূচিতে গদ্যাংশের নাম আবার ছুটিকীসের ছুটি, কোথা থেকে ছুটি? শেষে রবীন্দ্রনাথও কি জেএনইউ-র পড়ুয়াদের মতো আজাদি-র স্লোগান দিয়ে গেছেন নাকি? অতএব, বেনিফিট অফ ডাউট শাসকের পক্ষেই যাবে। সিলেবাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ আউট, ‘কানফাটানাথদের গুরু আদিত্যনাথ ইন

     

     

    শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, বাদ পড়েছেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনও। অন্যের পিএইচডি থিসিস দেখে বিনা অনুমতিতে অনুপ্রাণিতহওয়া ব্যতীত এই মানুষটির বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। ধর্মকর্মে অবিচল, সুতরাং ভক্তদের বিরাগভাজন হওয়ার চান্স তেমন ছিল না। কিন্তু তিনি এমন একটি বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখলেন, যাকে ভক্তরা সোনার পাথরবাটি মনে করেন— উইমেন এডুকেশন! আর পাশ্চাত্য থেকে উড়ে আসা এসব এডুকেশন মানে তো ব্যভিচার! মঙ্গলবারে কী খেলে স্বামীর মঙ্গল হয়, বুধবারে ঈশান কোণে খোঁপা বেঁধে ঘোমটা টানলে একাধিক সন্তানলাভ হয়— এসব শিক্ষা তো মনুর মতো আমাদের দেশের কত মহাপুরুষই দিয়ে গেছেন। মুশকিল হচ্ছে, দেশে কিছু কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন মানুষ আছেন, যারা দেশের ভাল জিনিসগুলো না খুঁজে, বিদেশি জিনিস নিয়ে বেশি মাতামাতি করেন। বুকে চে গেভারাকে রাখা এক জিনিস, ওসব সবাই পারে। কিন্তু সাচ্চা ভক্ত যিনি হবেন, তিনি বুকে নাথুরাম গডসেকেও রাখতে পারেন! এমনই তাঁদের এলেম। তবে এর মধ্যে আমি সরল মনে ভক্ত বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম, এয়ার ইন্ডিয়া, ভারত পেট্রোলিয়ামে 100 শতাংশ বিলগ্নীকরণের সিদ্ধান্ত কি বিদেশি কালচারকে মদত জোগানো নয়? ভক্ত বন্ধু প্রত্যুত্তরে বলেছে, বেসরকারি হলে পরিষেবা ভাল হবে। তাই স্বদেশি স্বদেশি করে বেশি ‘HAL’ না খেয়ে ফরাসি সরকারের আজ্ঞাবহ দাসোহয়ে, রাফালে অর্ডার করা হয়েছে

     

    আরও পড়ুন: পেগাসাসের প্রযুক্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করাই একমাত্র সমাধান

     

    ভক্তরা সিলেবাস থেকে মুলক রাজ আনন্দের দ্য লস্ট চাইল্ড’-কেও বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এমন মরমি গল্পেও আপত্তির কী আছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মুলকরাজের জন্ম পাকিস্তানের পেশোয়ারে, তাই হয়তো তার নামও বিয়োগের পাতায় গেছে। বাদ গেছেন সরোজিনী নাইডু। এটা খুব সম্ভবত তাঁর অবিমিশ্র গান্ধী-অনুরাগের জন্য। শেলি-কিটস তো বিদেশি সংস্কৃতির প্রতিভূ, তাই তাঁদের সরিয়ে এসেছেন রামদেব এবং আদিত্যনাথ। একজন যোগ শেখাবেন, আর একজন হঠযোগ শেখাবেন। এই দুই দার্শনিকসাংখ্য-যোগ-চার্বাক-অদ্বৈত সমৃদ্ধ ভারতীয় দর্শনের প্রতিনিধিত্ব করছেন জানতে পারলে, দর্শন-গুরু সক্রেটিস নিশ্চয়ই হেমলক বিষটা স্বেচ্ছায় খেতেন, জোর করে খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ত না

     

     

    লেখার শুরুতে বলেছিলাম ভক্তের ভক্তি ভীষণ টেম্পোরারি আর আপেক্ষিক। তাঁর আরাধ্য ব্যক্তি ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। আর সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকেই বাঙালিদের একাংশের মধ্যে হাত কচলে, দেঁতো হাসি হেসে জো হুজুর বলার একটা অভ্যাস আছে। ক্লাস এইটের ইতিহাস বইটা নাড়াঘাঁটা করতে গিয়ে আর একবার চমৎকৃত হলাম। বইয়ের শেষ পরিচ্ছদে উল্লিখিত সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের নেতৃবর্গের নামগুলো গড়গড় করে পড়ে গেলাম। গাঁট গুনে দেখলাম এঁদের মধ্যে প্রায় 40 শতাংশ, বিধানসভায় টিকিট না পেয়ে ভক্তিকে সম্পূর্ণ অন্য খাতে বইয়েছেন। মাথার ওপর এতকালের আরাধ্য ব্যক্তির ছবি বদলে গেছে। সেখানে ঝুলছেন আর এক আরাধ্য ব্যক্তি। এর মধ্যে একজন আবার সুযোগ বুঝে আরও একবার আন্দোলন-পর্বের আরাধ্য ব্যক্তির কাছেই ভক্তিতে নতজানু হয়েছেন। ভক্ত চেনা কি সহজ কম্ম! রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানসচোখে এদের ছলচাতুরী সঠিকই বুঝেছিলেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকারের নতুন সিলেবাসে চোখ বুলিয়ে কবি হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, ‘নোতন জুগের ভোর'-এ তিনি আর নেই! কবির সংশয়ী মন বলে উঠল, ‘তখন কে বলে গো, এই প্রভাতে নেই আমি


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    কাজ দেয় না সরকার, চাকরি হবে কীসে?

    গদ্দারদের সঙ্গে কিভাবে ট্রিট করা হয়, তার একটা নমুনা দেখানো হয়েছিল ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮-এ।

    ‘আসিতেছে বিপদের দিন, চাষিরা করিতেছে হম্বিতম্বি, চোখ রাঙাইছে চিন!’

    পরিকাঠামো নেই, নেই মেধার যাচাইও, চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দেবে কে?

    আমাদের 70 লক্ষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। তাই, আমরা যে কোনও মিথ্যা খবরকে সত্য করতে পারি

    বিশ্বের পুরুষ প্রধানরা আজ সঙ্কটের দিনে যখন দিশাহীন, তখন সঠিক পথ দেখাচ্ছেন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানই।

    যোগীর কোপে কবিই বাদ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested