×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সব শাসকের এক রা

    বিতান ঘোষ | 19-06-2021

    প্রতিবাদে সামিল ছত্তিশগড়ের বস্তার, বীজাপুরের আদিবাসীরা।

    জল জমি জঙ্গলের অধিকারের দাবিতে সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকেই লড়াই করে আসছেন দেশের আদিবাসীরা। স্বাধীনতার এত বছর পরেও তাদের এখনও সেই অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এবার এই লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে ছত্তিগড়ের বস্তার ও বিজাপুর জেলার মাঝে সিলগার নামক একটি গ্রামে। অতি-সাধারণ বনবাসী মানুষের নিরস্ত্র প্রতিবাদকে বেয়নেট দিয়েই রুখতে চেয়েছে শাসক। শাসকের চরিত্র যে স্থান কাল ও দল নির্বিশেষে অপরিবর্তনীয়, তারও প্রমাণ দিচ্ছে ছত্তিশগড়ের এই বর্বরোচিত ঘটনা

     

     

    কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং ছত্তিশগড় প্রশাসন সেই রাজ্যে মাওবাদী দমনে একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলোর মধ্যে বাসাগুড়া থেকে জাগরগুন্ডা পর্যন্ত 90 কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথ নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। এই সড়ক দক্ষিণ বস্তারের গভীর জঙ্গলকে প্রায় দু'ভাগে বিভক্ত করে সুকমা এবং বিজাপুর জেলার মধ্যে যোগাযোগকে আরও নিবিড় করে তুলবে। যদিও ওয়াকিবহল মহলের মত বস্তারের দুর্ভেদ্য জঙ্গলকে পুলিশ-আধাসেনার চলাচলের উপযোগী করে তুলে, মাওবাদী দমন করাই এই সড়ক নির্মাণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য

     

    আরও পড়ুন: ত্রাসের দেশ উত্তরপ্রদেশ

     

    সিলগার গ্রামের বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি তাঁরা এই সড়ক নির্মাণের বিরোধী নন। কিন্তু গ্রামের অনতিদূরে তৈরি হওয়া পুলিশ ক্যাম্প নিয়ে তাদের আপত্তি আছে। তাদের অভিযোগ ক্যাম্প তৈরি হওয়ার পর পুলিশি অত্যাচার বহুগুণ বেড়েছে। বিনা কারণে গ্রামের বাসিন্দাদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদী মিছিল করতে গিয়েই গত 17 মে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনজন আদিবাসী মানুষ, পদপিষ্ট হয়ে মারা যান একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। এই ঘটনার পর আন্দোলন আরও গতি পায়। বস্তার, বিজাপুর জেলা থেকে হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ পায়ে হেঁটে এসে সিলগার গ্রামে সমবেত হতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক থেকে ছত্তিগড় পুলিশের তরফে জানানো হয়, এই আন্দোলনে মাওবাদী ও নকশালদের মদত আছে। আন্দোলনকারীরা অবশ্য আগাগোড়া বলে আসছেন, এটা একান্তই তাঁদের নিজেদের আন্দোলন। তাঁদের অভিযোগ আন্দোলনে মাওবাদী-যোগের কথা বলে মিথ্যাচার করছে ছত্তিগড় পুলিশ

     

     

    স্থানীয় সাংবাদিক রাজা রাঠৌরের কথায়, আদিবাসীদের এই সংগঠিত প্রতিবাদ আন্দোলনের পিছনে বহুমাত্রিক কারণ আছে। নকশাল দমনের নাম করে সাধারণ আদিবাসীদের ওপর পুলিশি দমন-পীড়ন ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার খনি প্রকল্প নিয়েও আদিবাসীদের ক্ষোভ রয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষিকা, বর্তমানে আদিবাসী নেত্রী সোনি সোরির বক্তব্য, ‘আদিবাসীরা চেয়েছিলেন, যে পুলিশ আধিকারিকরা গুলি চালিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দু'জন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক, যে কমিটির একজন সদস্য আদিবাসী কোনও বিচারক হবেন। এর পাশাপাশি আদিবাসীরা তাঁদের পুরনো দাবি— সিলগার গ্রাম থেকে পুলিশ ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এসবে কর্ণপাত করেনি ছত্তিগড় সরকার।' ল্টে নকশাল খুঁজতে হন্যে হয়ে ওঠা ছত্তিগড় পুলিশ একের পর এক আদিবাসী নেতাকে গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন এমনই এক আদিবাসী নেতা হিদমে মাকরাম

     

     

    এই প্রসঙ্গেই ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকারের ভূমিকা এবং আদিবাসীদের নিয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। দীর্ঘ 15 বছরে বিজেপি শাসনাধীন ছত্তিশগড়ে আদিবাসীদের নানা দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে সেই সময়ের বিরোধী দলের নেতা, আজকের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে। অনেক আদিবাসী নেতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, 2012 সালে সিআরপিএফ-এর গুলিতে 19 জন আদিবাসী নিহত হলে বিধানসভায় এই নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছিল সেদিনকার বিরোধী কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার কিছুদিন পরেই ভূপেশ বাঘেল বলেছিলেন, ‘বন্দুকের গুলি দিয়ে নকশাল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।' সেই বাঘেল এত কিছুর পরও মৌনব্রত অবলম্বন করে রয়েছেন। আর তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা, আদিবাসী বিক্ষোভে মাওবাদী-ভূতখুঁজতে ব্যস্ত। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, চিরায়ত রাজনৈতিক বৈরী ভুলে বিজেপিও কঠিন অবস্থাননেওয়ার জন্য কংগ্রেস সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিক্ষোভকারীদের আক্ষেপ, ‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে আমাদের ন্যূনতম চাহিদাগুলোর কথা জানাতে পারব ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস আর বিজেপির বক্তব্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।' রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী  রবীন্দ্র চৌবে বলেছেন, ‘আদিবাসীদের ভিড়ে কিছু নকশাল ঢুকে গেছে।' পুলিশের দাবি প্রায় 19 জন আরবান নকশাল’-এর হাত আছে এই ঘটনায়!

    আরও পড়ুন: জন আন্দোলনের প্রভাব বিচারের শীর্ষ স্তরেও

     

    আদিবাসীদের নিয়ে দীর্ঘকাল কাজ করা বেলা ভাটিয়াকে আদিবাসী পরগণায় কাজ করতে দেওয়ার দাবিতে একসময় সরব হতে দেখা গিয়েছিল রাহুল গান্ধীকে। সেই বেলা ভাটিয়া, সমাজকর্মী-অর্থনীতিবিদ জাঁ দ্রেজকে গত 20 মে সিলগার যাওয়ার পথে আটক করা হয়। ভাটিয়ার কথায়, "আগের বিজেপি সরকার আদিবাসীদের ওপর দীর্ঘ শোষণ, অত্যাচার চালিয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম কংগ্রেস রাজ্যের শাসনক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আদিবাসীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে কোনও ফারাক নেই।'

     

     

     

    রামায়ণ বর্ণিত দণ্ডকারণ্যই আজকের ঘন জঙ্গলে ঢাকা বস্তার। রাজনৈতিক পালাবদলেও অবস্থার বদল ঘটেনি এখানকার বনবাসী মানুষদের। মৌলিক চাহিদা পূরণের দাবিতে এরা আন্দোলন করলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এদের গায়ে মাওবাদী তকমা সেঁটে দেয়। কংগ্রেস বিজেপির রাজনৈতিক লড়াই, ট্যুইট যুদ্ধ নিয়ে যখন বাকি ভারত মশগুল থাকে, তখন এই সিলগার গ্রামে সমবেত আদিবাসী মানুষরা সবিস্ময়ে দেখেন, দুই সরকারের পুলিশই আন্দোলনকারীদের আরবান নকশালবলে দেগে দেয়। সরকারের কর্তৃত্বে থাকা রাজনৈতিক দল বদল হলেও তার চরিত্র এক বিন্দুও বদলায়নি।


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    পাজি, কাঠিবাজ মিডল ক্লাসকে জব্দ করা মার্ক্সের কম্মো নয়, এই কাজটাও একমাত্র মোদীজিই পারেন!

    মহাভারতের অর্জুন রামায়ণের রামচন্দ্রকে হারিয়ে ফিরে এলেন পুরনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে।

    ঈশ্বরী পাটনি কি মা অন্নপূর্ণার কাছে দুধভাতের আবদার না জুড়ে ফুটেজের আবদার জুড়েছিলেন?

    ভাওয়াল সন্ন্যাসীর ঢঙে সনিয়া বলবেন আমায় তোমরা যেতে দাও, আর বাকিরা পথ আগলাবে— এই হল কংগ্রেসের হাল!

    হঠকারিতায় বিচ্ছিনতাবাদের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে ফেললে তাকে বন্ধ করা মুশকিল।

    শিল্পী মাত্রেই সংশয়ী, সংশয়ী হওয়া মানেই পরশ্রীকাতর হওয়া নয়

    সব শাসকের এক রা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested