×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • খাপের বাপ: সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে এত চর্চার লক্ষ্য আসল ইস্যু চাপা দেওয়া

    4thPillars ব্যুরো | 10-09-2020

    সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত-র সঙ্গে আলোচনায় আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অরুণাভ ঘোষ।

    বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপির সহযোগী ও শাসক দল জনতা দল ইউনাইটেডের স্লোগান, "না ভুলেঙ্গে, না ভুলনে দেঙ্গে।' প্রসঙ্গ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু। মৃত্যুর তদন্ত করতে তিনটি কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা এবং দুই রাজ্যের পুলিশের মধ্যে টানাপোড়েন নিয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া মিডিয়ায় প্রতি দিন নিয়ম করে বসছে খাপ পঞ্চায়েত। অবশ্য খাপ পঞ্চায়েতে দুই পক্ষের বক্তব্য শোনা হয়ে থাকে বলে জানা যায়। এখানে তাও নয়। এটা খাপ নয়, প্রকৃত অর্থেই "খাপের বাপ'দেশের সমস্ত দুর্দশা, অর্থনীতি, চাকরি, জীবিকা, বেকারত্ব, কৃষকের আত্মহত্যা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা - এ সমস্ত কিছু ভুলিয়ে দিতে ঘৃণ্য খেলায় মেতেছে কেন্দ্রীয় সরকারের পদলেহনকারী মিডিয়া। এই বিষয়ে www.4thpillars.com -এর ফেসবুক পেজে সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত-র সঙ্গে লাইভ আলোচনায় ছিলেন দুই বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং অরুণাভ ঘোষ

     

    1. মিডিয়া তার মূল কাজ করছে না। এর পিছনে সুস্পষ্ট রাজনীতি রয়েছে। মিডিয়াগুলি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। যে টাকা দিচ্ছে তার কথায় নাচছে। প্রাদেশিকতাকে জুড়ে দিয়ে রাজনীতির ইন্ধন জোগাচ্ছে বিক্রি হয়ে যাওয়া মিডিয়া। আসল সত্যকে গোপন করতে এ ধরনের ইস্যুকে মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজ করছে ওরা

    2. প্রথমে বলা হল স্বজনপোষণসেটা জনগণ খেল না। পরে 15 কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ। সেটাও প্রমাণ করতে পারল না। পরে মাদকের প্রসঙ্গ টেনে রিয়াকে জেল হেফাজতে নেওয়া হল। যে প্রতিদিন 6-7 ঘণ্টা করে জেরায় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, তাকে জেলে ঢোকানো কেন?

    3. বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তভার রয়েছে সিবিআই এবং আরও অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। সে ক্ষেত্রে তাদের এত সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না। সারদা মামলায় রাজ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু সে মামলা বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে

    4. বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারছে না। শাসক দল বিভিন্ন প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে ভেঙে দেওয়ার কাজ করছে। বিহারের নির্বাচন শেষ হলে সুশান্তের কথা মিডিয়া থেকে সম্পূর্ণ লোপ পেয়ে যাবে

    5. এটা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ভয়ংকর দিন। আলাদা আলাদা প্রদেশের মধ্যে সংঘাত লাগিয়ে ভোটের ফায়দা তোলার রাজনীতি দীর্ঘ দিন ধরে করছে বিজেপি। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক

    6. কৃষক, পরিযায়ী শ্রমিক, জীবিকা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। এখন সোশাল মিডিয়াও নিয়ন্ত্রণ করার কাজ করা হচ্ছে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বিকৃত এবং বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ব্যতিক্রম কিছু নিশ্চয়ই আছে। স্বৈরাচারের পদধ্বনি খুব স্পষ্ট। প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান একই ধারায় চলছে

    7. আদালত মুক্তি দেওয়ার পরেও কাফিল খান উত্তরপ্রদেশে থাকতে পারছেন না। তাঁকে রাজস্থানে থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। যোগী রাজ্যে বা মোদীর দেশে দলিত, নিম্নবর্গ বা মুসলমানদের কোনও নিরাপত্তা নেই। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার

    8. সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন অমিত শাহ। সেই মামলার সিবিআই আদালতের বিচারক বি এইচ লোয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুরও তদন্ত হল না। তাঁর পরিবার পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে বলতে বাধ্য হল, যে আমরা অভিযোগ তুলে নিচ্ছি


    9. সুশান্ত একজন অভিনেতা যিনি এখন বেঁচে নেই। হত্যা না আত্মহত্যা সেটা পরের প্রশ্ন, কিন্তু মৃত অভিনেতাকে যখন পোস্টারবয় করতে হয় একটি জাতীয় দলকে, তা হলে বুঝতে হবে তার পিছনে গভীর অভিসন্ধি রয়েছে। ভোটের রাজনীতির জন্য সুশান্তের জীবনের অন্ধকার দিকটা বার বার সামনে আনছে, সেটাকে পণ্য করছে বিহারের ভোটের জন্য

    10. পেট্রোলের দাম বাড়ছে কেন এই নিয়ে মামলা করায় মামলাকারীকে জরিমানা করা হচ্ছে। এটা কি বিচারকদের কাজ? মামলা গ্রহণযোগ্য না হলে খারিজ করতে পারেন, কিন্তু এটা করার কারণ ভয় দেখানো। সঙ্গত প্রশ্ন তোলা যাবে না

    11. বারো কোটি মানুষ বেকার। বহু সাংবাদিকের চাকরি গিয়েছে। বহু পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। তা নিয়ে কেউ লিখছে না, কেউ খবর করছে না

    12. কঙ্গনা রানাওয়াতের সঙ্গে মুম্বই কর্পোরেশন যা করল সেটাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদাহরণ। সুশান্তের মৃত্যু তদন্ত মুম্বই পুলিশ করুক বা বিহার পুলিশ, আইন তো একই পথে চলবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মেরুদণ্ডহীন হয়ে রাজনৈতিক নেতারা যা বলছেন তাই চোখ বুজে করছে পুলিশ। অপরাধী হোন বা না হোন, গুলি করে মেরে ফেলাই এখন রীতিতে পরিণত হচ্ছে। আইনের শাসনের বদলে পেশির শাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হচ্ছে দেশে

    13. ছয়বার পোশাক পাল্টে প্রধানমন্ত্রী ময়ূর খাওয়ানোর ছবি বাজারে বিক্রি করছেন। এ দিকে দেশের অর্থনীতি তলানিতে। চাকরি নেই, সাধারণ মানুষের খাবার নেই, সে দিকে কোনও হুঁশ নেই। এটা নির্লজ্জতার কত বড় উদাহরণ!

    14. এত কৃষক আত্মহত্যা করেছে, একজনকে নিয়েও কোনও খবর করেছে মিডিয়া? আত্মহত্যার কারণকে চাপা দেওয়ার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হওয়াকে দেখানো হচ্ছে। আজকের মিডিয়ার ভূমিকা এতটাই ঘৃণ্য

    15. সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে এত আলোচনা অথচ এর মধ্যে নতুন লেবার আইন পাস হয়ে গেল। শ্রমিকদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হল সেই আইনেবেতন কমানো, ছাঁটাই, ট্যাক্স সব ক্ষেত্রেই মালিক পক্ষকে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হল। এ নিয়ে একটিও কথা নেই। প্যান্ডেমিকের সুযোগ নিয়ে যা খুশি তাই করছে কেন্দ্রীয় সরকার

    16. বেঙ্গল কেমিক্যালকেও বন্ধ করার চক্রান্ত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মামলা করা হয়েছে। সে মামলা ঝুলে রয়েছে। একের পর এক সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে

    17. আগে সমস্ত শিক্ষানীতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। মহামারীর সুযোগ নিয়ে ঘরে বসে কয়েকজন সারা দেশের শিক্ষানীতি ঠিক করে দিচ্ছে। এটাও স্বৈরাচারের বড় উদাহরণ। অনলাইনে শিক্ষা চালু করে বহু মানুষকে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে

    18. সারা দেশে প্রতিদিন মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে। কিন্তু কঙ্গনা, সুশান্ত-রিয়া, অনুষ্কার মা হওয়া ইত্যাদি নিয়ে মাতিয়ে রেখে সব কিছু ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন করার কালচারেই আপত্তি সরকারের। সংসদের প্রশ্নোত্তর বাতিল করলসেই সংস্কৃতিকেই প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে সাহায্য করছে মিডিয়া

    19. তবে এখনও হতাশ হওয়ার কারণ নেই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে। এলাহাবাদ কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের পূর্ব কিছু রায়, কলকাতা হাকোর্টের কিছু রায় ভাল। কখনও অবশ্য গণ্ডগোল হচ্ছে। বিচারকরা বিশেষ কোনও দলের কথায় কাজ না করে তাদের আনুগত্য সংবিধানের প্রতি দেখাক। সংবিধানের আদর্শ কার্যকর করাই তাদের কর্তব্য


    4thpillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    খাঁচার তোতাপাখি সিবিআই কি মালিকের হুকুম মানতে গিয়ে আইন ভাঙছে?

    আসন্ন বিধানসভা ভোটের টিকিট না পেলেই দল বদলের হিড়িক দেখা যাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে।

    এই হিন্দি আগ্রাসন একমাত্র নিজের ভাষার প্রতি কতটা দরদ, ভালবাসা আছে, তা দিয়েই আটকানো সম্ভব।

    5 বছরের পুরনো নারদ মামলা নিয়ে হঠাৎ সক্রিয় সিবিআই। দুর্নীতি নিয়ে এই রাজনীতির পিছনে আসল খেলাটা কী?

    করোনার এই নতুন জিনের সংক্রমণের হার 70 শতাংশ বেশি। অতএব অযথা বাড়তি আতঙ্কের কারণ নেই। 

    রাষ্ট্রের নজরদারির ঘৃণ্য নজির এবার ভোট পর্বের প্রচারে।

    খাপের বাপ: সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে এত চর্চার লক্ষ্য আসল ইস্যু চাপা দেওয়া -4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested