দেশে এতকাল নদীর জলবন্টন কিংবা রাজধানী শহর নিয়ে পড়শি রাজ্যগুলোর মধ্যে গোল বেঁধেছে, শীর্ষ আদালত এবং কেন্দ্রীয় ট্রাইবুনালকে তা নিয়ে হস্তক্ষেপও করতে হয়েছে। কিন্তু এবার অসম-মিজোরাম সীমানা সংঘাতের তীব্রতা ও তিক্ততা নজিরবিহীন। গোলাগুলিতে পুলিশের মৃত্যু, এক রাজ্যের অফিসারদের অন্য রাজ্যে তলব করা থেকে শুরু করে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর নামে মিজোরামে এফআইআর পর্যন্ত – বাদ যায়নি কিছুই। অসম মিজোরাম সীমান্তের বৈরাংতে শহরে দুই রাজ্যের পুলিশের সংঘর্ষে অসম পুলিশের পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং দুই তরফেই একাধিক জন আহত হয়েছেন। কিন্তু এই সংঘর্ষের পিছনে কিন্তু রয়েছে ঔপনিবেশিক ইতিহাস।
যত কাণ্ড লুসাই হিলে
অসম-মিজোরামের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের বীজ সেই ঔপনিবেশিক আমলেই বপন হয়। 1987 সালে স্বতন্ত্র রাজ্য হওয়ার আগে মিজোরাম অসম রাজ্যেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন তার নাম ছিল লুসাই হিল। ব্রিটিশ প্রশাসন 1875 সালের একটি বিজ্ঞপ্তিতে লুসাই হিল অঞ্চলকে অসমের কাছাড় জেলা থেকে পৃথক করে। পরে 1933 সালের অন্য একটি বিজ্ঞপ্তিতে অন্য প্রান্তে মণিপুর এবং লুসাই হিল অঞ্চলের মধ্যে সীমারেখা টানে। পরে মিজোরাম স্বতন্ত্র রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এবং দাবি তোলে, 1875-এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যেন অসম মিজোরামের সীমানা নির্দিষ্ট হয়। অসম সরকার এর পালটা 1933-এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই সীমানা টানার দাবি জানায়। প্রসঙ্গত, মিজোরাম অসম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাজ্য হওয়ার সময়েও 1933-এর বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই সীমানা বিভাজন হয়েছিল। অসম সরকার তাই বারংবার বলে এসেছে, ঔপনিবেশিক আমলের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে সীমানা বন্টন তারা মানবে না। অপরদিকে মিজোরাম প্রশাসন দাবি করে এসেছে, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে মিজো নেতৃত্বের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই একপাক্ষিক ভাবে মিজোরামকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
অসম মিজোরামের সীমানা রেখা
অবস্থা এখন যেমন
দুই পড়শি রাজ্যের নিরন্তর এই সংঘাতের স্বল্পমেয়াদী সমাধান হিসাবে কিছু বছর আগে দুই রাজ্যের প্রশাসন একটি চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তি মোতাবেক দুই রাজ্যের 165 কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছিল। এই সীমানার একদিকে অসমের কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা। অপরদিকে মিজোরামের কোলাসিব, আইজল ও মামিট জেলা। এছাড়াও উভয় রাজ্যই বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমারেখা দ্বারা যুক্ত। বিগত 3-4 বছরে দু'পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে সীমানার স্থিতাবস্থা নষ্টের অভিযোগ তুলেছে। 2018 সালে অসমের কাছাড় জেলায় মিজোরাম একটি নজরদারি শিবির নির্মাণ করে। তাদের অভিযোগ অসমের 'বাংলাদেশি'রা (খুব সম্ভবত বাংলাভাষী মুসলিম) মিজোরামে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। গত বছরও অক্টোবর মাসে কাছাড়ের বেশ কিছু স্কুলবাড়িতে মিজোরাম পুলিশ হামলা চালায় এই যুক্তিতে যে, মিজোরামের ভূ-খণ্ডে অসম প্রশাসন অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। ধিকিধিকি জ্বলা এই সংঘাতের আগুনই এখন স্ফুলিঙ্গ হিসাবে দেখা দিল।
আরও পড়ুন: চালচোরের কথা বাসি হলে মিষ্টি হয়
উত্তর-পূর্বের রাজনীতিকে জটিল করছে বিজেপি
এর আগে আন্তঃরাজ্য সংঘাতে দেখা গেছে দু'টি যুযুধান রাজনৈতিক দু'টি রাজ্যের ক্ষমতায় আসীন। তাদের রাজনৈতিক সংঘাত অনেকসময়ই প্রশাসনিক সংঘাতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখন বিজেপি এবং তার বন্ধু দলগুলি ক্ষমতায় রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতে নিজেদের অনুকূলে রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে তারা তৈরি করেছে NEDA (North East Democratic Alliance)— যার মাথায় বসানো হয়েছে কুশলী রাজনীতিক, অধুনা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে। এই পরিস্থিতিতে অসম মিজোরাম সীমানা সংঘাতে মুখ পুড়েছে বিজেপির। বিশেষত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের অব্যবহিত পরেই এমন ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। দুই রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষকর্তাদের সঙ্গেই দফায় দফায় বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। উত্তর-পূর্ব ভারতের সমাজ, রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য জনজাতির মন বুঝতে বিজেপি ব্যর্থ। CAA ও NRC নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও অভিন্ন নীতি নেই। উত্তর-পূর্বের কোনও কোনও রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট চালু করার কথা বলা হচ্ছে। NRC ও CAA নিয়ে জনজাতিগুলির মধ্যে বিভ্রান্তি ও পারস্পরিক সন্দেহ বাড়ছে, মাথাচাড়া দিচ্ছে বিদ্বেষের রাজনীতি। অসম, মিজোরাম উভয় রাজ্যই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে সীমান্ত সম্প্রসারণ ঘটাতে চাইছে। NRC ও CAA নামক যে বাঘের পিঠে বিজেপি সওয়ার হয়েছে তাকে বাগে আনা বিজেপির পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এখন কোন জাদুবলে তারা উত্তর-পূর্বের ঐক্যসাধন করে সেটাই এখন দেখার।
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে নেমে আসলে দু'টো মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে।
নাবালিকা 'ধর্ষণ' নিয়ে মমতার এমন অসংবেদনশীল মন্তব্য ও ভাবনার শরিক বহু সাধারণ মানুষ, সে আমরা প্রকাশ্যে
অমুকের ‘দ্যাশ’, তমুকের ‘ভিটে’ নিয়ে এই ‘দেশ’, তাকে অস্বীকার করাই শাসকের মূর্খামি।
বেঙ্গল প্যাক্টে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শাসনক্ষমতা দেওয়ার কথা বললেন চিত্তরঞ্জন।
গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সীমান্ত দ্বৈরথ কেন এমন রক্তক্ষয়ী মল্লযুদ্ধের চেহারা নিল, তার ময়নাতদন্তে..
এ জীবনে যাদের ‘লক্ষ্মী’ হওয়া হল না, তাদের জন্য কেউ কি রাত জাগে?