×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সংযুক্ত মোর্চা: রাজনীতি-বর্জিত ভোটে জেতার ছক

    রজত রায় | 02-03-2021

    ঐক্যবদ্ধ: ব্রিগেডের মঞ্চে সংযুক্ত মোর্চার নেতৃবৃন্দ।

    গত রবিবারের ব্রিগ্রেড ময়দানে বামপন্থী, কংগ্রেস নতুন জন্ম নেওয়া ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) উদ্যোগে যে বিশাল জনসমাগম হয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা তর্কবিতর্ক আলোচনা শুরু হয়েছে এই আলোচনা তর্কবিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে বাম কংগ্রেসের সঙ্গে ফুরফুরা শরিফের আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ-এর যোগদান বিভিন্ন দলের বহু নেতা ব্রিগেডে ভাষণ দিয়ে গেলেন

     

    তাঁদের মুখে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসন এবং বিজেপির স্বৈরাচার নিয়ে নানা ঝাঁঝালো কথা শোনা গেল সেই সঙ্গে ব্যাখ্যাও মিলল, কেন বিজেপিকে কোণঠাসা করতে হলে আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানো দরকার ইত্যাদি কিন্তু ব্রিগ্রেডের জনসভায় যে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলি শোনা গেল না, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে গরিব প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হল না কেন, এবং সেই আন্দোলনের আদৌ কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা ছাড়া এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) এবং নতুন নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বন্ধ কেন, তারও উল্লেখ নেই শুধু কৃষি আইন নয়, কেন্দ্রের মোদী সরকার যে গত বছরই শ্রম আইন সংস্কার করে তিনটি শ্রম আইন করে শ্রমিকদের বহুদিনের অর্জিত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও কোনও বক্তাকেই মুখ খুলতে শোনা যায়নি

     

    তাহলে কি এইসব বক্তব্য এখনকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়? অন্যভাবে বললে, কার সঙ্গে কার জোট করলে ভোটের অঙ্কে বাজিমাত হবে, সেই হিসাব হলেও, ভোটদাতাদের কাছে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য বা ইস্যু নিয়ে যেতে চায় বিরোধী দলগুলি? কোনও সন্দেহ নেই যে ব্রিগেডের জনসভায় শহুরে মধ্যবিত্ত, ছাত্রছাত্রীরা যেমন এসেছিলেন, তেমনই হাজির ছিলেন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা গরিব কৃষক পরিবারের সন্তানরা কিন্তু বক্তারা তাঁদের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেননি মাত্র তিনজন বক্তা, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি আরও একজন, তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পাঞ্জাব, হরিয়ানা উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনের কথা উল্লেখ করেন, তাও নিতান্তই নমো নমো করে দিল্লির উপান্তে ধর্না চালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার চাষি কীভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে, সে কথার উল্লেখ হলেও পশ্চিমবঙ্গে কেন গরিব প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে একই আন্দোলন গড়ে তোলা হচ্ছে না, সে ব্যাপারে তাঁরা নীরব একজন বক্তার মুখে শোনা গেল কৃষকরা রাজ্যেও ফসলের ন্যূনতম দাম (এমএসপি) পান না ঠিক কথা, উত্তর ভারতের চাষিদের দাবিই তো তিন কৃষি আইন বাতিল করতে হবে, সেইসঙ্গে দেশজুড়ে এমএসপি চালু বাধ্যতামূলক করতে উপযুক্ত আইন করতে হবে এই দাবি কি রাজ্যের কৃষকদেরও হতে পারে না?

     

    কিছুদিন আগেই দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি একযোগে বিবৃতি দিয়ে জানায় যে, তারা দিল্লি উত্তর ভারতের কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী এবং কৃষকদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে শ্রমিকদের দাবি (যা কিনা 2020 সালের নভেম্বরে গৃহীত তিন শ্রম আইন বাতিলের দাবি) যুক্ত করে যৌথ আন্দোলন শুরু করতে চায় দেশের শ্রমিক কৃষকদের আন্দোলনের দুই পৃথক ধারা এভাবে মিলে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মহাআন্দোলনের চেহারা নেবে কিনা, বা নিতে পারে কিনা, তা এখনই বলা কঠিনতবে, যেটা বলার, সিপিএম, সিপিআই এবং কংগ্রেসের কোনও নেতার মুখেই শ্রমিক কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ার আহ্বান শুনতে পাওয়া গেল না আরও হতাশজনক লাগল, যখন দেখলাম সদ্য পাঞ্জাব জুড়ে পুর নির্বাচনে বিজেপি এবং তার দীর্ঘদিনের শরিক (এখন নয়) সংযুক্ত অকালি দল কংগ্রেসের কাছে গো-হারা হারলেও, এটা যে কৃষক আন্দোলনেরই জেরে হয়েছে, এবং যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে বিজেপিকে কোণঠাসা পরাস্ত করতে হলে কৃষক আন্দোলনকে হাতিয়ার করা কতটা জরুরি, সে ব্যাপারে কোনও বামপন্থী বা কংগ্রেস নেতাকেই মুখ খুলতে দেখলাম না

     

    আরও পড়ুন: বামজোটের ব্রিগেডে নতুনত্বের ছোঁয়া

     

    2019 সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিপুল শক্তিতে জয়ী হয়ে সরকার গড়ার পর থেকেই একের পর এক জনবিরোধী আইন করছে, আরও এমন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জী) এবং সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) তার বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন গোটা দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়েছিল করোনা মহামারীর জেরে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হলে শাহিনবাগের মতোই কলকাতার পার্ক সার্কাসেও প্রতিবাদী ধর্না আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় সেই আন্দোলন নিয়ে কোনও কথা বাম কংগ্রেস নেতাদের মুখে ব্রিগেডের জনসভায় শোনা গেল না তবে কি নাগরিকত্ব প্রশ্নের মীমাংসা হয়ে গিয়েছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো এখনও বলছেন যে, করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গেলেই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি হবে, আইন প্রয়োগ করা শুরু হবে সেকি শুধুই কথার কথা? বাম কংগ্রেস নেতারা কি বিজেপির শীর্ষনেতাদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়েছেন যে, এসব নিছকজুমলা’, তাই নিয়ে আর আন্দোলনের কোনও দরকার নেই? এখন শুধুই বিজেপিকে হারাতে আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানোর চেষ্টা করাটাই প্রধান কর্তব্য? আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর উদগ্র আগ্রহে নেতাদের খেয়ালও থাকছে না, তাঁরা কী বলছেন সূর্যকান্ত মিশ্র যখন বাম জমানায় রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ছিলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গ 100 দিনের কাজ রূপায়ণে খুবই পিছিয়েছিল নিয়ে সমালোচনার জবাবে তখন তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় গ্রামের মানুষের হাতে অঢেল কাজ তাঁদের 100 দিনের কাজের দরকার নেই রবিবার ব্রিগেডের জনসভায় সেই সূর্যকান্ত মিশ্রকেই বলতে শোনা গেল, 100 দিনের কাজের প্রকল্পকে অন্তত ১৫০ দিনের কাজে রূপান্তরিত করতে হবে বামপন্থীদের কি একবারও বলতে শোনা গেল যে তাঁদের নেতাদের ঔদ্ধত্য দুর্ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে যেভাবে ভুগতে হয়েছিল, সেজন্য তাঁরা অনুতপ্ত? না, সেসব কিছু শোনা যায়নি তবে, ভুইফোঁড় নেতা আব্বাস সিদ্দিকিকে মঞ্চে বরণ করে নেওয়ার জন্য বাম নেতাদের যে দৃষ্টিকটু আচরণ চোখে পড়ল, তাতে মনে হয় পুরনো সব ভুল এখন নিছকই অতীত, সেসব নিয়ে নতুন করে কথা বলার দরকার নেই

     

    বামপন্থী কংগ্রেস নেতাদের কথা আচরণ দেখে শুনে মনে হয়, সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করার চাইতে জাতপাত, ধর্ম, সামাজিক গোষ্ঠী ইত্যাদির সমীকরণ নিয়ে ঠিক মতো হিসাব মেলাতে পারলেই ভোটের বাজারে কেল্লা ফতে হবে শ্রমিক, কৃষক, দলিত এবং নারীদের সমস্যা তো আছে এবং থাকবে এখন ভোটের সময় ওসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করে কী লাভ? আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থীদের রাজনীতিরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে এখন যাঁরা দলের নেতৃমণ্ডলী আলো করে রয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগই 1977 সালে দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে দলের সদস্য হয়েছেন অর্থাৎ, ক্ষমতার বাইরে থেকে রাস্তায় নেমে পুলিশের লাঠি-গুলি খেয়ে আন্দোলন করতে হয়নি দীর্ঘ 34 বছর লোকাল কমিটি দিয়ে লোকাল থানা নিয়ন্ত্রণ করতে করতে তাঁরা ভুলেই গিয়েছিলেন যে, পুলিশ এই রাষ্ট্রযন্ত্রেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, শুধুই ক্ষমতাসীন দলের অনুগামী, তার কোনও বিশেষ দলের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য নেই, থাকতে পারে না তাই 2011 সালে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে, চিটফান্ড নিয়ে এত মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে, এত মানুষ আত্মহত্যা করছে, তবুও বামপন্থীরা রাস্তায় নামছে না কেন? তখন তাঁর উত্তর ছিল, ‘পুলিশ যে ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে, তা ভাবতে পারিনি।'

     

    বামপন্থীদের রাজনীতির মূল ভিত্তি ছিল শ্রমিক, কৃষক সমাজের অন্যান্য মেহনতি মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন বামফ্রন্ট সরকারকে সংগ্রামের হাতিয়ার করার পর সব দায়িত্ব তার ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়ে বামপন্থীরা আন্দোলনবিমুখ হয়ে পড়লেন ক্রমে বাম রাজনীতির মূল উপাদানগুলিও তাঁদের চিন্তা কাজকর্ম থেকে হারিয়ে যেতে লাগল পড়ে রইল শুধু ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রবল ইচ্ছা যেন তেন প্রকারেণ


    রজত রায় - এর অন্যান্য লেখা


    খেলার মাঠের বাইরে রাজনীতিতে তিনি পশ্চিমী আধিপত্যবাদের বিরোধের মূর্ত প্রতীক

    বাংলায় বিজেপির পরাজয়ে উজ্জীবিত বিরোধী শিবির নয়া উদ্যমে মোদী বিরোধিতায় শান দিচ্ছে।

    বাম কংগ্রেস আইএসএফ মোর্চার সমাবেশে মানুষের রাজনৈতিক দাবি শোনা গেল না।

    এই প্রথম মমতার বিরুদ্ধে খোলাখুলি দুর্নীতির অভিযোগ করছে বাংলার মানুষ

    করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখিয়ে দিল শুধু বাগাড়ম্বর দিয়ে জগৎসভায় আসন মেলে না।

    মোদীর দীপাবলী দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

    সংযুক্ত মোর্চা: রাজনীতি-বর্জিত ভোটে জেতার ছক-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested