×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মোদীর দীপাবলি বিপর্যয়ের ফর্মুলা

    রজত রায় | 04-04-2020

    প্রতীকী ছবি

    মোদীর দীপাবলি দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। রবিবার রাত ন’টায় একসঙ্গে সব গৃহস্থ বাড়ি নিষ্প্রদীপ করা হলে আচমকা বিদ্যুতের চাহিদা এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে যাবে। তার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও সরবরাহের ব্যবস্থা যে ফ্রিকোয়েন্সিতে বাঁধা থাকে, তাতে ঝটকা লেগে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাতেই সাময়িক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এই দীপাবলি কর্মসূচি, দেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রক, ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন প্রভৃতির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই ঘোষণা করেছেন। এখন বিপর্যয় এড়াতে সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তারা বৈঠকে ব্যস্ত।


    বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ, গোটা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা এখন একসূত্রে গাঁথা। জাতীয় সড়ক দিয়ে যেমন দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব যুক্ত, এক জায়গা থেকে সহজেই সড়কপথে দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে চলে যায়, তেমনই ন্যাশনাল গ্রিড কর্পোরেশনের আওতাধীন বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে গোটা দেশ যুক্ত। এতে যেমন এক জায়গার উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সহজেই হাজার মাইল দূরে অন্য এলাকায় পাঠানো যায়, তেমনই বিপর্যয় হলে সব একসঙ্গে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। 

    1988 সালের গ্রীষ্মের এক রাতে বিহার (তখনও অবিভক্ত রাজ্য) ও পশ্চিমবঙ্গে একসঙ্গে অন্ধকার নেমে এসেছিল। দুই রাজ্যের বিদ্যুৎ পর্ষদের অধীন সব কয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ডি ভি সি, দুর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেড এবং সি ই এস সির সব কয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। পরে তদন্ত করে বিশেষজ্ঞ কমিটি রায় দেয়, বিহার আচমকা সিস্টেম থেকে একসঙ্গে অনেক বেশি বিদ্যুৎ টেনে নেওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে যে ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে বেঁধে রাখা হয়, তা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু বাংলা বিহারের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এ ভাবে একসূত্রে বাঁধা ছিল, তাই ফ্রিকোয়েন্সির তারতম্য ঘটায় কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই ব্রেক ডাউন এড়ানো যায়নি। বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ছিল এই বিপর্যয় এড়াতে সব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় আইসোলেটরের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে ফ্রিকোয়েন্সির আচমকা অনেকখানি তারতম্য ঘটলে (যাকে কারিগরি ভাষায় surge বলা হয়) বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে বাঁচাতে অন্য সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায়। 1990 এর দশকে শঙ্কর সেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ মন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের অধীন সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে এ ভাবে বিচ্ছিন্ন (রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিবিদদের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় islanding) করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সি ই এস সি, ডি ভি সি প্রভৃতি পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী সংস্থাও এই নীতি গ্রহণ করে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেড (ডবলিউ বি এস ই ডি সি এল)-র প্রাক্তন ডিরেক্টর অনির্বান গুহ মনে করতে পারছেন যে ‘আইলা’র সময় এই নীতি প্রয়োগ করে একাধিক উৎপাদন কেন্দ্রকে সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাঁচানো গিয়েছিল। একই ভাবে সি ই এস সি-ও নিজেদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বাঁচাতে বিচ্চিন্ন করেছে। কিন্ত দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তখনও এই আইসোলেশন নীতি চালু হয়নি। 


    তাই 2012 সালে যখন একই বিপর্যয় আবার হল, সেইবার রাজধানী দিল্লি সহ মোট 21টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দুদিন অন্ধকারে ডুবেছিল। এর পরে গোটা দেশেই বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এক গুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ করা হয়। এমনকি গ্রিডের কোনও অংশের বিদ্যুৎ সংস্থা যদি বেঁধে দেওয়া ফ্রিকোয়েন্সি (50 হার্জ) থেকে সরে যায়, তা হলে অর্থদন্ডও চালু করা হয়। কিন্তু এবারের চ্যালেঞ্জ আরও বড়। মাত্র 9 মিনিটের জন্য দেশে এক ধাক্কায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেকখানি নেমে যাবে, তার পরে আবার লাফ দিয়ে আগের জায়গায় ফিরবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দিনের 24 ঘণ্টাই দেশের পাঁচটি রিজিওনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার নিজেদের এলাকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে ফ্রিকোয়েন্সি এক জায়গায় বেঁধে রেখে চলে। এটা সুষ্ঠুভাবে করার জন্য দিনের 24 ঘণ্টাকে প্রতিটি 15 মিনিট করে মোট 96টি স্লট করা থাকে, যে কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইচ্ছামতো উৎপাদন বন্ধ করতে বা বাড়াতে না পারে সেজন্য তাকে আগে ভাগে লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারে জানিয়ে দিতে হয় কোন 15 মিনিট বা ক’টা 15 মিনিটের চক্র তাদের বন্ধ রাখতে বা উৎপাদন বাড়াতে হতে পারে। মোদীর 9 মিনিট সে জন্যই আরও সমস্যায় ফেলেছে বিদ্যুৎ কর্তাদের। 2012 সালের বিপর্যয়ের পরে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইচ্ছেমতো হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুতের চাহিদায় বিপুল ওঠানামা করলে বিপর্যয় হতে বাধ্য। তাই বিশ্বের বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থারা সবসময় তাদের গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি এক জায়গায় বেঁধে রাখার পক্ষপাতী। রবিবার রাতের দীপাবলি তাই বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
     


    রজত রায় - এর অন্যান্য লেখা


    দেশের বর্তমান পরিস্থিতি  এক কথায় প্রায় নজিরবিহীন। দেশজুড়ে এখন নাগরিকত্ব আইন বা সি এ এ, এন আর সি  এবং

    করোনা মোকাবিলায় মোমবাতি নাটক দেশবাসীর কাছে দীপাবলির পরে অমাবস্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

    নবরাত্রিতে সহ নাগরিকের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে নিরামিষ খেলে, রমজান মাসে তা নয় কেন?

    গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কি বং বং-এর মতো রাজনৈতিক গড় রক্ষা করতে পারবেন?

    আমেরিকার পার্লামেন্টে হামলা কালো মানুষরা করলে রক্তগঙ্গা বয়ে যেত!

    এই অবস্থায় দেখার, সরকার কত দ্রুত মানুষকে দোরগোড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

    মোদীর দীপাবলি বিপর্যয়ের ফর্মুলা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested