ভোটের ফল বেরোনোর প্রায় দেড় মাস পরেও বাংলার ফলাফলের ধাক্কা সামলাতে নাজেহাল বিজেপি। সাত বছরে প্রথম দিশাহারা দেখাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। ততোধিক বিভ্রান্ত বঙ্গের বিজেপি। এই বিষয়ে গত 14 জুন (সোমবার) www.4thpillars.com একটি আলোচনার আয়োজন করেছিল। সুদীপ্ত সেনগুপ্তর সঙ্গে আলোচনায় সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী, শুভাশিস মৈত্র এবং নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
1) বাংলার সঙ্গে কোনওদিনই ভারতীয় জনতা পার্টি কিংবা হিন্দু মহাসভার সংস্কঋতি খাপ খায় না। বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে উত্তর ভারতের সংস্কৃতি, ধর্মাচরণ একদমই মেলে না। তাই এখানে জয় শ্রীরাম ধ্বনি প্রভাব ফেলতে পারেনি।
2) বিজেপি মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ইত্যাদি জায়গায় যেভাবে অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল, সেটা বাংলায় করতে ব্যর্থ হল। আর এই ব্যর্থতার কারণেই বেশ কিছু এমন ঘটনা ঘটতে শুরু করল যা আগে ঘটেনি। এর ফলে বিজেপি যে সমস্যায় পড়ছে সেটা সাময়িক।
3) প্রায় প্রতিটি রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির ফল কিন্তু ভীষণ খারাপ। একমাত্র উল্টো ফল হয়েছে বিহার আর অসমে। আর এই দু’টো জয়ের কৃতিত্ব নীতিশ কুমার এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মার। এবং তার সঙ্গে এটাও লক্ষণীয় অমিত শাহ যে যে রাজ্যে ভোটপ্রচারে গেছেন, সেই সেই রাজ্যে বিজেপি পরাজিত হয়েছে।
4) বিজেপি বাংলার নির্বাচনে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছে। বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের একাংশ তৃণমূল সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গত লোকসভায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। নির্বাচনী সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা বিধানসভা ভোটে বিজেপি বজায় রাখতে পারেনি।
5) বিজেপি হিন্দুত্বের পরিচয়কে বাঙালি পরিচয়ের উর্ধ্বে স্থান দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঙালিরা, এমনকি বাংলায় বহুকাল বসবাস করা অবাঙালিরাও বাঙালি সত্তাকে বাঁচানোর স্বার্থে বিজেপিকে ভোটে পরাজিত করল।
6) দেশের রাজনীতিতে ক্রমশ একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজেপি এবং নো-বিজেপি। এই নো-বিজেপি মনোভাব থেকেই বাংলা বিজেপিকে রুখেছে। অন্যান্য রাজ্যেও এর প্রভাব পড়তে চলেছে।
7) পশ্চিমবঙ্গে হারের ধাক্কা সামলাতে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব, মায় প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘ বৈঠক করতে হচ্ছে৷ বিজেপি নেতৃত্ব বুঝেছেন, বাংলার এই বিজেপি বিরোধী মনোভাব অন্যত্র ছড়িয়ে পড়লে তাদের বিপদ বাড়বে। এই আবহেই উত্তরপ্রদেশে মোদী-যোগী দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
8) বিজেপি বাংলার স্বতন্ত্র সভ্যতা, সংস্কৃতির মর্মই অনুধাবন করতে পারেনি। যোগী বলেছিলেন, জয় শ্রী রাম না বললে বাংলায় থাকা যাবে না। উদার মনোভাবাপন্ন বাঙালি এসব ভালভাবে নেয়নি।
9) বাংলার প্রায় সব বুথকে হাতের তালুর মতো চেনা মুকুল রায়কে অনেকদিন আগেই গুরুত্বহীন করে দিয়েছিল বিজেপি। উলটে এমন সব নেতাকে সামনে রেখেছিল, যাদের ভাষা, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি বিজেপির বিরুদ্ধে গেছে।
এবারের কাশ্মীর সেই সময়কার পাঞ্জাবকে স্মরণ করাচ্ছে!
আবার পশ্চিমবঙ্গ ভাগ করে ছোট রাজ্যের দাবি উঠছে। বাংলার মানুষ কী চায়?
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, দেউচা সিঙ্গুর হবে না। সত্যিই হবে না তো?
নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সংসদকে ব্যবহার করছে শাসক। তবে কি ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্রের দিন অস্তগত?
দেশভাগের যন্ত্রণা কি উদযাপনের বিষয়? কেন্দ্রীয় সরকারের হঠাৎ কেন এই ইতিহাস প্রীতি?
সংসদীয় গণতন্ত্রে বলা হয় বিরোধীরাই হাউসের প্রধান, অথচ এখন সংসদে বিরোধীদের বলতেই দিচ্ছে না শাসক।