×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • নারী বা পুরুষই শুধু নয়, মানুষ!

    রিম্পা বিশ্বাস | 19-01-2022

    নিজস্ব ছবি

    কারাগারে তৃতীয় লিঙ্গের (third gender) কয়েদিদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নির্দেশ জারি করেছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাঁদের গোপনীয়তার বিষয়টি নজরে রাখতে হবে, নতুন বছরের শুরুতে এমনই একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে। তৃতীয় লিঙ্গের কয়েদিদের অধিকার রক্ষায় দেশের সবকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কারাগারে (jail) এই ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে আমাদের দেশে সরকারি প্রতিটি বিধি যে যে কারণে বাস্তবায়িত হতে পারে না, এটিও তার মধ্যে একটি। 

     

    সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) 2014 সালে রূপান্তরকামী, অন্তর্লিঙ্গ, কিন্নর, জেন্ডার-ক্যুয়ার মানুষদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করাকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই মানবাধিকারের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের তরফে 2014 সালে কারাগারে তৃতীয় লিঙ্গের কয়েদিদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওয়ার্ড তৈরি করার ক্ষেত্রে রূপান্তরকামী পুরুষ ও রূপান্তরকামী মহিলাদের আলাদা কক্ষ, শৌচালয়, স্নানাগারের পৃথক ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। আট বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ দিলেও এতদিনে তা নিয়ে নির্দেশ জারি করছে কেন্দ্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2014 থেকে 2019 পর্যন্ত দেশের কোনও কারাগারে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকেও কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়নি। 

     

    আরও পড়ুন:এক বিস্মৃত কিন্তু অপরিহার্য আইন

     

    তৃতীয় লিঙ্গের কয়েদিদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় ক্ষেত্রে ৬টি স্তর থাকে। এই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত থাকার কথা ডাক্তার ও রূপান্তরকামী মানুষদের। কারাগারে যেহেতু রূপান্তরকামী মানুষদের নিয়োগ করাই হয় না, অতএব শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াও হয় না। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অন্যান্য মানুষদের মত একাধারে নারী অথবা পুরুষদের ওয়ার্ডে যেতে বাধ্য করা হয়। এর পর তাঁদের নানা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ ও কেন্দ্রীয় তরফে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে নির্দেশ জারি করার পরও ক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এই নিয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেই বিষয়ে সন্দেহ আছে। পশ্চিমবঙ্গ ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিনহা বলেন, ‘আট বছর হতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কোনও বাস্তবিক প্রয়োগ আমাদের রাজ্যে এবং আরও অনেক রাজ্যে দেখা যাচ্ছে না। ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নের জন্য যে সব কমিটি গঠন করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় সেখানে কোনও ট্রান্সজেন্ডার সদস্যই নেই।’

     

    বস্তুত এটিই সমস্যার মূল কথা। যাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে করার কথা বলা হয়, তাদের সেই আইন ও প্রশাসনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয় না। অধিকাংশ জেলের অধিকর্তার সুপ্রিম কোর্টের লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে নির্দেশনা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। এদের প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা এখনও অবধি করা হয়নি।

     

    এর পরে আসে আলোচনার নৈতিক দিকটি। আদিকাল থেকে সংখ্যা বিষয়টিকে মানবসমাজে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ‘জোর যার মুলুক তার’ সমাজে পুরুষদের প্রথম লিঙ্গ, নারীদের দ্বিতীয় লিঙ্গ এবং রূপান্তরকামী মানুষদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি আসলে প্রমাণ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কার প্রয়োজনীয়তা কতটা। 


    রিম্পা বিশ্বাস - এর অন্যান্য লেখা


    হিজাব বা অন্য পোশাক নয়,মৌলবাদী শাসকদের আসল টার্গেট নারীর শিক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতা।    

    হলোকস্ট স্মরণ করায় গণতন্ত্রী শাসকের সবচেয়ে ভয়াবহ স্বরূপের।

    খাদ্যের অতিরিক্ত সংরক্ষণ এবং তার ব্যবহারের কারণে মানুষের পাশাপাশি পৃথিবীও অসুস্থ।

    দেশে আসলে চলছে ধনকুবেরদের শাসন প্লুটোক্র্যাসি, মোদী-শাহরা নাটকের চরিত্র মাত্র

    সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হন গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ছেলেমেয়েরা।

    নিম্ন মানের কৃষি বীজ এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বাজার দেশে প্রাকৃতিক চাষের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

    নারী বা পুরুষই শুধু নয়, মানুষ!-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested