সব বাবা-মায়েরই সাধ থাকে, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।’ সব বাবা-মা চান, তাঁদের সন্তান লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে ভাল ভাবে খেয়েপড়ে বাঁচবে। তবে এই সামান্য ইচ্ছেটুকুও অনেক বাবা-মায়েরই পূরণ হয় না। হয়ে ওঠে না। নানা আর্থিক ও সামাজিক কারণে কচিকাঁচারা স্কুলের গণ্ডি পার করার আগেই স্কুল ছেড়ে চলে যায় ‘আয়’ করতে। কারণ একটাই, পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা। যারা পড়া শেষ না করেই কাজের তাগিদে আয়ের রাস্তায় পা বাড়ায় সেই সমস্ত কচিকাঁচার একটা সুন্দর নাম আছে। তাদের বলা হয় ‘স্কুলছুট’। কেন তারা স্কুলছুট সেটা আর তলিয়ে প্রশাসন বা অন্য কেউ ভাবে না।
করোনার ফলে টানা 20 মাস রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। 16 নভেম্বর স্কুল খুলতেই বহু স্কুলে পড়ুয়াদের পূর্বেকার উপস্থিতি নজরে আসছে না স্কুলের মাস্টারমশাইদের।
এমনই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া ব্লকের গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসা। যেখানে টানা 20 মাস বন্ধ থাকার পর গত 16 নভেম্বর স্কুল খোলার পর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল 30 শতাংশ। এই তথ্য দিচ্ছিলেন গোবরগাড়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বকুল আহমেদ। আক্ষেপ করে তিনি বলছেন, ‘‘20 মাস আগে যে দিন শেষ স্কুল হয়, জানেন, সে দিনও 75 থেকে 80 শতাংশ ছাত্রছাত্রী স্কুলে এসেছে। অথচ প্রথম তিন দিন 30 শতাংশের গণ্ডিই পার হল না উপস্থিতির হার!’’
আরও পড়ুন: স্কুল খোলার নির্দেশ আছে, সাফাইয়ের লোক নেই!
গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসা যেখানে অবস্থিত সেই অঞ্চলে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের বসবাস। যারা এই মাদ্রাসায় পড়তে আসে তাদের পরিবারে অভাব আছে। কেউ আসে চাষির পরিবার থেকে কারও পরিবারের আয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে। এই আর্থ-সামাজিক অবস্থাটাই বকুল আহমেদকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
বকুল আহমেদ প্রথম তিন দিন পড়ুয়াদের কম উপস্থিতির কারণ নিজের মতো করে ভেবে নিয়েছেন। তাঁর কথায়: ‘‘মঙ্গলবার স্কুল খুলবে এই খবর আমরা ছাত্রছাত্রীদের আগাম জানিয়েছিলাম। আমরা থার্মাল গান, স্যানিটাইজার নিয়ে সরকারি নিয়ম মেনে সাড়ে ন’টার আগে থেকেই মাদ্রাসার গেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম পড়ুয়ারা আসছে না। তারপর সাড়ে দশটার সময় হাতে গোনা গুটিকয় ছেলেমেয়ে এল। তার মধ্যে ছাত্রীই বেশি। আমরা প্রথমটায় ভাবলাম ছাত্রছাত্রীরা হয়তো আগে যে 11 টায় ক্লাস শুরু হত, সেই সময় ধরেই আসছে। শেষে দেখলাম, না, সময় পার হয়ে গেলেও কেউই এল না। দ্বিতীয় দিন ভাবলাম সবে স্কুল খুলেছে, আজ হয়তো আসবে, কিন্তু সে দিন এবং তৃতীয়দিনও সেই একই ছবি। উপস্থিতির হার খুব বেশি হলে 30 শতাংশ। আমাদের কিছু শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং আমি নিজে পড়ুয়াদের বাড়ি প্রথম দিন গিয়েছিলাম। কেন ওরা ক্লাসে এলো না তা জানতেই ওদের বাড়ি যাই। কিন্তু কাউকে পাইনি। যে পড়ুয়ারা ক্লাসে আসছে না আমি ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের বাড়ি যাব আগামী সোমবার। জানতে চাইব, কেন তারা ক্লাসে আসছে না। এখানে ইটভাটা আছে। কোনও ছাত্র সেখানে কাজ করতে যেতেই পারে। চাষের মাঠেও যেতে পারে কেউ কেউ। আমরা চেষ্টা করব তাদের আবার ক্লাসে ফরিয়ে আনার। আমার আর কী করার আছে এ ছাড়া?’’
গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বকুল আহমেদের গলায় যে কষ্টের সুর সেই একই কষ্ট হয়তো যারা স্কুলে না এসে ইটভাটা বা চাষের মাঠে গিয়েছে কাজ করতে তাদের মনে, তাদের অভিভাবকদের মনেও আছে। যারা স্কুলে গেল না তারা ইটভাটায় বা চাষের মাঠে কাজ করার সময় হয়তো স্কুলের ঘণ্টার আওয়াজ, বন্ধুদের ডাক শুনতে পায়। বহু সম্ভাবনা হয়তো এ ভাবেই একথালা ভাতের জন্য চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু সমাজের এই বাঁধা ছকে বকুল আহমেদ ও ‘স্কুলছুট’ বাচ্চারা বড়ই অসহায়, বেমানান।
দুয়ারে পুর নির্বাচন, প্রচার-মিছিলে বাড়বে সংক্রমণ, আশঙ্কা চিকিৎসকদের
নোটবন্দির পাঁচ বছর পার। এখনও মানুষের ভরসা নগদ লেনদেনেই।
নজরে করোনা, আড়ালে বাড়ছে না তো ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া?
মৃত্যুর ঘটনাটাকেই অস্বীকার করে তার দায়িত্ব থেকে হাত মুছে ফেলছে কেন্দ্র রাজ্য সমস্ত সরকার
গাড়ির গতি কমিয়েই কলকাতার পথ দুর্ঘটনা ও সেই কারণে মৃত্যু রোখা যায়, মত বিশেষজ্ঞদের।
ছিন্নমূল হয়ে ওপার থেকে এপার বাংলায় এসে বাজি বানিয়ে বুড়িমা কালীপুজোর মহালগ্নে বাঙালির শ্রেষ্ঠ ব্র্যান