×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পুরনো বাসে সিএনজি কিট: সিদ্ধান্ত ব্যবসায়িক না বিজ্ঞানসম্মত?

    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত | 07-11-2021

    প্রতীকী ছবি।

    ক্রমাগত জ্বালানির দাম বাড়া সত্ত্বেও গণ পরিবহণের ভাড়া কীভাবে একই জায়গায় বেঁধে রাখা যায়? এই সমস্যার মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাইছে ডিজেলের পরিবর্তে সরকারি বাসগুলিকে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজি (CNG)-তে চালাতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের মত উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

     

     

    তবে রাজ্য সরকার নতুন সিএনজি চালিত বাস না কিনে পরিবর্তে পুরনো, অচল ডিজেল চালিত বাসগুলোর ইঞ্জিন-এর সঙ্গে একটি সিএনজি কিট লাগিয়ে ওই পুরনো বাসগুলোকে সিএনজি-তে রূপান্তর করতে উদ্যোগ নিয়েছে। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদরা কিন্তু এই বিষয়ে যথেষ্টই সন্দিহান। তাঁরা বলছেন, সরকারের এই প্রযুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে সুফল দেবে না। সাধারণ ডিজেল চালিত বাসকে সিএনজি-তে রূপান্তর করলে পরবর্তী কিছুদিনের মধ্যেই সেই বাসের মাধ্যমে দূষণ আবারও বাড়তে শুরু করবে। সরকারের আর্থিক ক্ষতিও হবে। কারণ, ডিজেল ইঞ্জিনকে সিএনজি-তে রূপান্তরিত করার ফলে সেই ইঞ্জিনের আয়ু কমে যাবে। পশ্চিমবঙ্গে যে পদ্ধতিতে পুরনো ডিজেল চালিত বাসকে একটি সিএনজি কিট বসিয়ে সিএনজিতে বদলে দেওয়া হচ্ছে, সেই পদ্ধতি প্রথমে দিল্লিতে নেওয়া হয়েছিল। তার সুফল দিল্লি সরকার পায়নি। উল্টে কিছু বাসে আগুন ধরে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপর দিল্লি প্রশাসন নতুন করে সিএনজি চালিত বাস রাস্তায় নামিয়েছে।

     

     

    পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে পদ্ধতিতে ডিজেল চালিত বাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করতে চাইছে, তাকে Retro Fitting পদ্ধতি বলে। এখানেই বিশেষজ্ঞরা আপত্তি করছেন। তাঁদের মতে ডিজেল চালিত বাসের ইঞ্জিন যে পদ্ধতিতে তৈরি হয়, তাতে সিএনজির জন্য নতুন কিট ব্যবহার করা যায় না। সেখানে জৈব জালানি ব্যবহার করায় সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাজ্যে যেটা করা হচ্ছে, সেটা সাময়িক সুবিধা দিলেও ভবিষ্যতে পরিবেশ ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের আর্থিক ক্ষতির দায় গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের উপর।  

     

    সিএনজি ও এলপিজি ব্যবহারে পার্থক্য কোথায়?

    ক্রমবর্ধমান পরিবহণ ব্যয় হ্রাস করতে দেশে পেট্রল, ডিজেলের পরিবর্তে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজি, অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। সিএনজি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথম কেরলে বাস চলেছিল। তারপর দিল্লিতেও এখনও চলছে। পুরো না হলেও পশ্চিমবঙ্গেও সিএনজির সাহায্যে আপাতত এনবিএসটিসি-র হাতে গোনা দুটো করে সরকারি বাস চলছে। রাজ্য সরকার চাইছে এই বছরেই এনবিএসটিসি-র 100টি এবং রাজ্য পরিবহণ নিগমের 300টি বাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করতে।    

     

     

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রবীর কুমার বসু আমাদের এই কথাই জানিয়েছেন। তাঁর মতে ডিজেল ইঞ্জিন তৈরির সময় সেই ইঞ্জিনের সর্বাধিক গতি আনুপাতিক হারে ঠিক করে দেওয়া হয়। তরল জ্বালানির জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী করেই এই ইঞ্জিন তৈরি করা হয়। তাই এই ইঞ্জিনকে বাইরে থেকে Retro Fitting -এর মাধ্যমে সিএনজি ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করলে, সেটা ইঞ্জিনের পক্ষে ক্ষতিকর হবে। কিছুদিন পরে ওই ইঞ্জিন থেকে দূষণের মাত্রা কমার বদলে বেড়েই যাবে। তাই অচল হয়ে যাওয়া বাসকে Retro Fitting -এর মাধ্যমে সিএনজি-তে রূপান্তরিত করে লাভ নেই। একমাত্র নতুন ভাবে সিএনজির মাধ্যমে চলার উপযোগী করে ইঞ্জিন তৈরি করেই সিএনজি চালিত বাস চালানো সম্ভব বলেই বিশেষজ্ঞদের মত

     

     

    সিএনজি ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক ও ব্যবহারকারী সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সরকার Retro Fitting-এর মাধ্যমে সিএনজি চালিত বাস নামানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে প্রবীরবাবুর সঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সিএনজি চালিত বাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রবীরবাবুর মত ছিল, কিট ব্যবহার করে ডিজেল ইঞ্জিনকে সিএনজি-তে রূপান্তরিত না করা। তাঁর পরামর্শ ছিল, এর বদলে জৈব জ্বালানি পুরনো বাসে ব্যবহার করলে বেশি সুফল মিলবে। এর ফলে কী ক্ষতি হতে পারে, তাও তিনি মন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। প্রবীরবাবু পরামর্শ ছিল ডিজেলের দাম বেশি, তাই তার পরিবর্তে বায়োগ্যাস ব্যবহার করে বাস চালানো যেতে পারে। তাতে আর্থিক ব্যয় যেমন কম হবে, তেমন দূষণও কম হবে। সরকার শেষ পর্যন্ত কী করে সেটাই এখন দেখার। 

     


    শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত - এর অন্যান্য লেখা


    ভূত চতুর্দশীকে কেন্দ্র করে নানা ধর্মীয় রীতি সংস্কারের মধ্যে উৎসবের আদলেও একটা গা-ছমছমে ভাব এখনও রয়েই

    জ্বালানির দামবৃদ্ধির সঙ্গে এবারের অতিবৃষ্টি যুক্ত হওয়ায় শাক সবজি অগ্নিমূল্য, এখনই দাম কমার আশা নেই।

    সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে চতুর্থ শ্রেনির কর্মীর অভাবে সময়মতো সাফসুতরো করে স্কুল খোলা নিয়ে সংশয়।

    Retro Fitting পদ্ধতিতে ডিজেল চালিত বাসকে সিএনজিতে রূপান্তরিত করায় মত নেই বিশেষজ্ঞদের।

    নজরে করোনা, আড়ালে বাড়ছে না তো ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া?

    গাড়ির গতি কমিয়েই কলকাতার পথ দুর্ঘটনা ও সেই কারণে মৃত্যু রোখা যায়, মত বিশেষজ্ঞদের।

    পুরনো বাসে সিএনজি কিট: সিদ্ধান্ত ব্যবসায়িক না বিজ্ঞানসম্মত?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested