উৎসব-পর্ব সাঙ্গ হল বেশ কয়েকদিন হল। শহরে মৃদুমন্দ হিমেল হাওয়া শীতকে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। কোনও সুপর্ণাকে কাতর আর্তি জানিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হচ্ছে না, শীত কবে আসবে? সে নিজেই আদালতের সাক্ষীর ন্যায় উপস্থিত বলে হাজির হয়েছে। জীর্ণ পাতাগুলো ঝরে পড়ছে দিকে দিকে, পাড়ায় মণ্ডপের বাঁশগুলো এক জায়গায় ডাঁই করে রাখা, হয়তো কোনও বিয়েবাড়ি কিংবা শ্রাদ্ধবাড়ির জন্য তারা অপেক্ষা করছে।
এই সময়টাই বড় রুখাসুখা। ফুটিফাটা সারা শরীর। দীপাবলির পিদিম জ্বেলে তেলও ঘরে বাড়ন্ত, ফাটল ঘুচবে কীসে? ফাটল সহজে ঘোচে না। জমিতে জল নেই, গায়ে তেল নেই, ঠোঁটে নেই প্রেমের কবিতা। তাই অসময়ের বলিরেখা দীর্ঘতর হয় দিকে দিকে।
হেটো ধুতি পরে সাফাইয়ের কাজ করে রামলাম। তার নগ্ন পা দু'টো তেলজলের অভাবে ফুটিফাটা। ওটাই কি তবে ভারতবর্ষ, ওটাই কি ভারতের ফুটিফাটা হয়ে যাওয়া সমাজব্যবস্থা? রামলাল নিয়মিত অভিসম্পাত দেয় তাদের, যাদের তেল চকচকে শরীরে মাছি পর্যন্ত পিছলে যায়। জগতে প্রতিটি বসন্তের আগে যখনই শীত এসেছে, তখনই কিছু মানুষ যথেচ্ছ তেল কিনেছে, প্রয়োজনে অন্যত্র দিয়েছে। ঝঞ্জাট থেকে বাঁচতে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঢেকেও ফেলেছে নিজেকে। মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে এসেছে জানা নেই, কিন্তু দেশের উত্তর প্রান্ত থেকে আসা এক দমকা হাওয়ায় এই দেশটাও হঠাৎ একদিন ফুটিফাটা হয়ে গেছে। কোনও তেল দিয়ে সেই ফাটলকে ঢাকা দেওয়া যায়নি। এইরকমই একটা হাওয়ায় একদিন ভিন্ন ফাটল ধরেছিল জার্মানিতে কিংবা কোরিয়ায়।
মধ্যপ্রাচ্যে, ইউরোপে কিংবা এই পোড়া দেশে যারা বসন্ত আনতে চেয়েছিল, একটা শীতের রাতে তারা যেন কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। তাদের ফুটিফাটা নিথর শরীর যখন উদ্ধার করা হল, ততদিনে মানবতা, সাংবিধানিক মূল্যবোধেও ফাটল ধরেছে। সেলফিস জায়ান্টদের বাগানে তারপর থেকে আর ফুল ফোটেনি, বসন্তও আসেনি। যে কিশলয়রা ফুল ফোটানোর শপথ নিয়েছিল, তাদের দূরদ্রষ্টা কবি সাবধান করে বলে গেছেন, ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।' আবার এইরকম একটা শীতেই তো মরমী গায়ক গেয়ে উঠেছেন, ‘ভয় নেই এমন দিন এনে দেব, যেদিন সেনাবাহিনীর বন্দুক নয়, শুধু গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ করবে তোমার সামনে।'
আরও পড়ুন: বর্ষা যখন মনকে ভাসায়
নগরায়নের উত্তুঙ্গ উত্তুরে হাওয়ায় উত্তর কলকাতার ফুটিফাটা হয়ে যাওয়া এক দেওয়ালে এখনও পড়া যায়, ‘প্রতি বছর নভেম্বরে, লেনিন বাঁচুক ঘরে ঘরে’— লেনিনরা কি বাঁচছে, সত্যিই কি তাদের বাঁচতে দেওয়া হচ্ছে? লেনিন না হোক পারতপক্ষে একটা স্ট্যান স্বামী কিংবা গৌরী লঙ্কেশ...রাষ্ট্রের বরফ পড়া বাগানে এখনও লেখা, ‘ট্রেসপাসার্স উইল বি প্রসিকিউটেড’, অর্থাৎ বহিরাগতের প্রবেশ নাস্তি। ধর্ম, জাতের পরিচয়ে ফুটিফাটা হল মানুষ। এক শীতের রাতে কত লোক বহিরাগত তকমা নিয়ে ভিটেমাটি হারাল। তবু তো এই রুখাসুখা মাটিতে একদিন ফুল ফোটাতে হবে। শীত পার করে বসন্ত আনতে হবে।
যা কিছু বিদীর্ণ হয়ে গেছে, তাকে জুড়তে হবে। সুপর্ণা, সত্যিই বলো শীত কবে আসবে? শীত ফুরোলে তবেই না বসন্ত আসবে। তারপর ফুটিফাটা হয়ে যাওয়া শরীরে প্রলেপ পড়বে, ফুটিফাটা মাটিতে জল দিয়ে ফুল ফোটাবেই কেউ কেউ। আমাদের কাজ শুধু তাদের রক্ষা করা। শীত রোম্যান্টিসিজমের মরমী পথ ধরে দ্রোহ আনে, শাসক জানে না শীত ফুরোলে গাছে নতুন পাতা ধরে। তা দেখে শাসক না বুঝুক, আমরা বুঝি যে বসন্ত এসেছে।
সোশাল মি়ডিয়া আর রাজনীতিতে রামের একচ্ছত্র আধিপত্য় হরণ করে এবার আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণ!
ন্যুব্জ বাপুজি, আর চাকচিক্যহীন বাপুজি কেকই তো ভারতবর্ষকে মিলিয়েছে বার বার।
গত ভোটে মরুরাজ্যে যাও বা মরূদ্যানের দেখা মিলেছিল, সেটাও বোধহয় মরীচিকা হয়ে মিলিয়ে যেতে চলেছে।
মহাভারতের অর্জুন রামায়ণের রামচন্দ্রকে হারিয়ে ফিরে এলেন পুরনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে।
তথাকথিত উন্নয়নের পক্ষে সুবিধাজনক হাতিদের সন্দেহজনক মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি।
দেশের পূর্ব প্রান্তে দুই প্রতিবেশী রাজ্যের বিরোধ প্রায় দুই দেশের সংঘর্ষের চেহারা নিচ্ছে