ছোটতেই যদি চারা বপন করে দেওয়া হয় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মহীরুহর আকার ধারণ করবে, এ তো জানা কথাই। শিশুরা মাটির তালের মতো হয়, তাদের যেমন ইচ্ছে তেমন গড়ে নেওয়া যায়। তাই খুব ছোট বয়স থেকেই ওদের মধ্যে ‘আমরা-ওরা’ ভাবনার বীজ মোক্ষমভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে দিনে দিনে তা মহীরুহ হয়ে ওঠে। এনসিইআরটি-র (NCERT) দ্বিতীয় শ্রেণীর বইতে ছবি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে ইদ (Eid-ul-fitr) হচ্ছে ‘ওদের’ অর্থাৎ মুসলিমদের উৎসব। সেদিন ‘তারা’ মসজিদে নমাজ পড়ে এবং সিমাই খায়। এবং পাশাপাশি এও লেখা আছে গণেশ পুজো (Ganesh Chaturthi) ‘আমাদের’। গণেশ পুজোয় ‘আমরা’ গণেশের জন্মদিন পালন করি, বাড়িতে মূর্তি এনে পুজো করি ইত্যাদি।
NCERT-র কর্তাব্যক্তিরা সম্ভবত মনে করেন যে ক্লাস টু-এর পাঠ্য বই শুধু গণেশ পুজো যারা করে, তারাই পড়বে। হিন্দু মুসলিম যে আলাদা, তাদের উৎসব আলাদা এটা খুব ছোট থেকেই যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইদ ওরা পালন করবে, আর আমরা গণেশ পুজো। এখানে একটাই প্রশ্ন, তবে কি সিবিএসই-র সকল ছাত্র ছাত্রী ধর্মপরিচয়ে হিন্দু? তাই গণেশ পুজো ‘আমাদের’। আর ইদ ‘ওদের’? একজনও কি মুসলিম ছাত্র নেই? ধরে নিলাম বইয়ের কথা অনুযায়ী হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য, দু’জনের উৎসব আলাদা। তাহলে কেন একজন মুসলিম ছাত্র বা ছাত্রী নিজের উৎসবকে ‘ওদের’ উৎসব হিসেবে পড়বে, লিখবে? আমাদের নয়! নাকি ‘ওদের’ ‘বিশেষ ভাবে’ উল্টোটা শেখানো হবে? স্কুলে যে বন্ধুর পাশে বসে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার কথা তার সঙ্গেই ছোট থেকে তুই আলাদা আমি আলাদা এই মনোভাব নিয়ে বেড়ে ওঠা কি ঠিক?
আরও পড়ুন: যখন খুশি ক্লাস, প্রশ্ন করলেই গেট আউট
বইয়ের লেখক (লেখকরা) বা উপদেষ্টামন্ডলী কি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন, যাঁদের লক্ষ্যই হচ্ছে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্র’? তাঁদের ভাবনা ইত্যাদি ছোট থেকেই বাচ্চাদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতি সুনিপুণভাবে, যাতে ভবিষ্যতে মগজ ধোলাই করতে বিশেষ অসুবিধা না হয়। কিন্তু তাঁরা কি এটা জানেন না ‘বিভেদের মাঝে দেখ মিলন মহান’ যে দেশের মূলমন্ত্র, সেই দেশে এভাবে বিভেদ তৈরি করা যায় না। সম্ভব না। এখানে মুসলিমরা দুর্গাপুজো পালন করে, গণেশ পুজোর ভাসানে নাচও করে। আবার হিন্দুরাও ইদে গিয়ে মুসলিমদের বানানো সিমাই আয়েস করে খেয়ে আসে। সৌভ্রাতৃত্ববোধ যা বছরের পর বছর ধরে তারা মনের মধ্যে লালন করে আসছে, সেটা একটা রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এভাবে নষ্ট করে দেবে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে? এ প্রশ্ন শুধু নৈতিকতার দিক থেকে ওঠে এমনও কিন্তু নয়। দেশের সংবিধান অনুসারে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন করা যায় না। সরকারি সংস্থা NCERT নিজেই সেই বিধান অমান্য করছে। প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে সরকার নিজেই ভারতের সংবিধানকে মান্যতা দেয় না।
যৌনকর্মীরা সামাজিক স্বীকৃতি আর আইনগত অধিকারের মধ্যে কোনটা কতটা পেলেন সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে
সমকামিতার ইঙ্গিতপূর্ণ বিজ্ঞাপন তুলে নেবে না জানিয়ে সদর্থক বার্তা ক্যাডবেরির।
ভোট উৎসবে বাঙালির নতুন সঙ্গী রাজনৈতিক মিষ্টি।
বঙ্গের অবস্থা দেখে মা দুর্গা নেহাতই চিন্তিত যে!
চন্দননগরের শ্রীশচন্দ্র এবং কানাইলাল চারুচন্দ্র রায়ের থেকে স্বদেশমন্ত্রের দীক্ষা পেয়েছিলেন।
করোনার সংক্রমণ রুখতে প্রচারে আপস করে রাজনীতিতে দায়িত্বশীলতার বিরল নজির দেখাল বামেরা।