×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • হ্যালোউইনের দাপটে চতুর্দশীর ভূত পালায়

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 01-11-2021

    প্রতীকী ছবি।

    ভূত (Ghost) তাড়ানোর সাবেক মন্ত্র ছিল রামনাম জপ করা। রামনামের জপ দেশ জুড়ে বাড়ার কারণেই কিনা কে জানে, ভূতের দাপট যেন দিন দিন কমছে! বিলাতি হ্যালোউইনের স্পিরিট সম্ভবত দেশি ভূতের শূন্যস্থান পূরণ করতেই জাঁকিয়ে বসছে আধুনিক বাংলায়!

     

     

    কালীপুজোর আগের দিন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে মৃত পূর্বপুরুষরা চিরকালই মর্ত্যে আসতেন। তাঁদের তুষ্ট রাখতে এবং প্রেতাত্মার অভিশাপ দূর করতে প্রথা অনুযায়ী চোদ্দ শাক খাওয়া হয় এবং চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো হয়। ছোটবেলায় মা ঠাকুমার কড়া শাসন থাকত, শাক খেতে ভাল না লাগলেও শাক খেতে হবে। বাবা বাজার থেকে ঘুরে ঘুরে চোদ্দ রকমের শাক আনবে এবং দুপুরে ভাতের সঙ্গে সেই শাক খাওয়া মাস্ট। আর তারপর বিকেলে বাড়ির প্রতিটা কোণে গুনে গুনে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালাতে হত। তার উন্মাদনা আলাদা ছিল। আগে থেকে দিদি আর আমি বসে হিসেব করতাম বাড়ির কোথায় কোথায় চোদ্দটা প্রদীপ দেব। এত বড় বাড়িতে মাত্র চোদ্দ প্রদীপ দিয়ে অন্ধকার দূর করা মুখের কথা নাকি! কত প্ল্যানিং প্রয়োজন ধারণা আছে? মাকে অনেকবার বলেছি আর কটা মোমবাতি দাও না। এতে হবে না! কিন্তু মা ঠাকুমার কড়া হুকুম থাকত এবং হাতে গুনে গুনে চোদ্দটা প্রদীপ বা মোমবাতি দেওয়া হত। শোনা হত না কোনও অনুনয়, অনুরোধ। তাই আগে থেকেই হিসেব কষে রাখতাম। আর পরদিন, অর্থাৎ কালীপুজোর দিন মনের আনন্দে প্রায় সব জায়গাতেই প্রদীপ আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো হত। সন্ধ্যাবেলায় গোটা বাড়ি আলোময় হয়ে উঠত। তখনও টুনিবাল্বের প্রাদুর্ভাব হয়নি। চুল খুলে রাখা যেত না, তাহলেই নাকি শাঁকচুন্নি, ব্রেহ্মদৈত্যি সবাই এসে চুল ধরে টানবে। পিছন পিছন নাকি সেদিন ভূতেরা ঘোরে। ছোটবেলায় আলাদাই রোমাঞ্চ ছিল দিনটা নিয়ে; ভয় পেতাম, তবুও ভাবতাম, ‘ইস, একবার যদি তেনাদের দেখা পাই!

     

    আরও পড়ুন: মায়ের ভাবনা

     

    কিন্তু ইদানিং গ্লোবালাইজেশনের ফলে ভূত চতুর্দশী খানিক যেন ব্যাকফুটে। এখন সবাই হ্যালোউইন (Halloween) নিয়েই ব্যস্ত। বাচ্চারা তো বটেই, বাচ্চাদের বাবা মায়েরাও। নানা রকম বিদেশি ভূত সেজে ছবি তোলা, পার্টি করা। এবং তারপর সোশাল মিডিয়ায় নিজেদের বাহারি সাজের ছবি পোস্ট করা। এটাই নাকি এখন ট্রেন্ড! মডার্ন হতে গেলে এসব করতে হয়চোদ্দ শাক বাজারে আর তেমন আলাদা করে পাওয়া যায় না। মাসিরা কী একসঙ্গে ঘাসপাতা কেটে এনে চড়া দামে বিক্রি করে, কেউ কেউ নিয়ম রক্ষার্থে তাই কিনে খায়। কিন্তু চোদ্দ প্রদীপ দেওয়ার রীতি অনেক বাড়িতেই আজ অতীত। একটা সময়ের পর হয়তো থাকবেই না এই নিয়ম। জানবেই না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, ভূত চতুর্দশী বলে একটা মজার পার্বণ ছিল আমাদের। একদম নিজেদের। 

     

     

    তবুও আমরা কেউ কেউ এখনও অতীত আঁকড়েই বাঁচি। তাই তো মা বাজার যাওয়ার আগে আজ বারবার মনে করিয়ে দিল, ‘চৌদ্দ শাক আনবি কিন্তু! ভুলিস না।' হেসে উত্তর দিলাম, ‘ভুলব না। বাড়ি এসে আবার লিস্ট করতে হবে, কোথায় কোথায় প্রদীপ দেব! যদিও প্রদীপ দেওয়ার জায়গাগুলো আজ এত বছর পর মুখস্থ হয়ে গেছে, তবুও ওই অভ্যাস যায়নি। কিছু অভ্যাস থেকে যাওয়া ভাল, যদ্দিন ওই টিমটিম করে প্রথা বয়ে নিয়ে যাওয়া যায় আর কী! যাই, মেলা কাজ পড়ে আছে, বাজার করতে হবে, প্রদীপ কিনতে হবে...

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    গত বছরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন থেকে এবারের রেড ভলেন্টিয়ার্স, মানুষের পাশে বামপন্থী তরুণ দল।

    করোনার টিকা হয়নি অথচ স্কুলে যেতে হচ্ছে এমন ছোটদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অবসান এবার।

    বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে আসে, নাকি লোকালয় বাড়তে বাড়তে তাদের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে?

    সোমবার বেহালার ঐতিহ্যবাহী চণ্ডীপুজোর শেষ দিন।

    ভোট উৎসবে বাঙালির নতুন সঙ্গী রাজনৈতিক মিষ্টি।

    সমকামিতার ইঙ্গিতপূর্ণ বিজ্ঞাপন তুলে নেবে না জানিয়ে সদর্থক বার্তা ক্যাডবেরির।

    হ্যালোউইনের দাপটে চতুর্দশীর ভূত পালায়-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested