পৃথিবীর থেকে প্রায় 930 কোটি আলোকবর্ষ দূরে সম্প্রতি প্রাচীনতম ছায়াপথ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কারের কাণ্ডারি হচ্ছেন বাঙালি বৈজ্ঞানিক কনক সাহা। ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহ অ্যাস্ট্রোস্যাটে ধরা পড়েছে সেই প্রাচীনতম ছায়াপথ, AUDFs01 থেকে নির্গত হওয়া অতিবেগুনি রশ্মি।
কিন্তু এত দূরে অবস্থিত ছায়াপথের হদিশ তাঁদের মিলল কীভাবে?
2015 সালের 28 সেপ্টেম্বরে ইসরো এই বহু তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উপগ্রহ অ্যাস্ট্রোস্যাটকে মহাকাশে পাঠায়। এর 5টি অনন্য এক্স-রে এবং অতিবেগুনি টেলিস্কোপ আছে। এই উপগ্রহের সাহায্যে 2016 সালে প্রথম ছায়াপথটি নজরে আসে, যা প্রথমবারের জন্য 28 ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। তারপর এতদিন ধরে সমস্ত তথ্য গবেষণা করে, নিরীক্ষণ করে এই গবেষক দলটি নিশ্চিত হয় যে সেই অতিবেগুনি রশ্মি এই ছায়াপথটি থেকেই আসছে। এই গবেষণা দলের নেতৃত্বে আছেন ইন্টার ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এর জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডক্টর কনক সাহা। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন দেশ যেমন সুইৎজারল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা, জাপান, নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন।
যেহেতু অন্য ছায়াপথের অতিবেগুনি বিকিরণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে তাহলে নিশ্চয়ই সেই বিকিরণ মহাকাশ থেকেও দেখা গিয়েছে। তখন প্রশ্ন ওঠে তাহলে তা কেন নাসার হাবল টেলিস্কোপে ধরা পড়ল না? অত বড় এবং উন্নত প্রযুক্তির হাবল টেলিস্কোপ কেন খোঁজ পায়নি এই ছায়াপথের? তার কারণ অ্যাস্ট্রোস্যাটের টেলিস্কোপ UVIT ডিটেক্টরের পারিপার্শ্বিক শব্দ হাবল টেলিস্কোপের তুলনায় অনেক কম। তাই সহজেই ভারতের এই কৃত্রিম উপগ্রহ, অ্যাস্ট্রোস্যাটের টেলিস্কোপে বহুদূরে অবস্থিত সেই ছায়াপথ থেকে নির্গত হওয়া অতিবেগুনি রশ্মি ধরা পড়েছে।
অধ্যাপক কনক সাহা এই বিষয়ে জানান, “প্রথমবারের জন্য কোনও ছায়াপথ দেখা গেল যার থেকে সর্বাধিক দূরবর্তী অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হচ্ছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই ছায়াপথের দূরত্ব মহাজাগতিক রেডশিফট বা তার সমকক্ষ আলোর গতি দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। AUDFs01 1.42 রেডশিফটে পাওয়া গিয়েছে। এই ছায়াপথ আবিষ্কারের আগে, 0.4-2.5 গ্যাপের রেডশিফট এতদিন অনুৎপাদিত ছিল।”
এই ছায়াপথ আবিষ্কারের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য কী? এটা বোঝার জন্য আমাদের মহাবিশ্বের আদি সময়ের কিছু কথা জানা প্রয়োজন। মহাবিশ্বে একটা সময় পর্যন্ত "কসমিক ডার্ক এজ’ চলছিল, যখন গোটা বিশ্ব নিউট্রাল হাইড্রোজেন গ্যাসে পরিপূর্ণ ছিল। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে নক্ষত্র, ছায়াপথ তৈরি হতে থাকে। এই সময়েই প্রথমবার কোনও মহাকাশীয় বস্তু থেকে আলো নির্গত হয় এবং কিছু হাই এনার্জি ফোটন ছায়াপথ থেকে বেরিয়ে আসে। তখন এই ফোটনগুলো ক্রমশ দুটি ছায়াপথের অন্তর্বতী জায়গায় থাকা নিউট্রাল হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোকে আবার ইলেকট্রন, প্রোটনে ভাঙতে থাকে। এরই ফলে "রিআয়নাইজেশন’ শুরু হয়। ডক্টর কনক সাহা জানাচ্ছেন, “কিন্তু এতদিন আমরা এই রকম কোনও ছায়াপথের হদিশ পাইনি। আমরা জানি না তাদের কেমন দেখতে হয়, তাদের ভৌত বৈশিষ্ট্যই বা কী! AUDFs01-এর লক্ষণগুলো প্রাচীন ছায়াপথেরই মতো। তাই এই ছায়াপথের বৈশিষ্ট্যগুলো জানতে পারলেই বোঝা যাবে প্রাচীন ছায়াপথগুলো আসলে কেমন ছিল। এই আবিষ্কার একটা নতুন দিক খুলে দিল।”
বিগ ব্যাং-এর পর পৃথিবী যেন অণু-পরমাণুর এক ফুটন্ত স্যুপে পরিণত হয়েছিল। তারপর মহাবিশ্ব ঠান্ডা হতে থাকলে প্রোটন আর নিউট্রন একত্রিত হতে শুরু করে এবং হাইড্রোজেনের আয়নাইজড পরমাণু তৈরি হয়। এই হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের আয়নাইজড পরমাণু ক্রমশ ইলেকট্রনকে আকর্ষিত করে এবং নিউট্রাল (চার্জ নিরপেক্ষ) পরমাণুতে পরিবর্তিত হতে থাকে। যার ফলে প্রথমবার আলো অবাধে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। মহাবিশ্ব ক্রমশ স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। কিন্তু সেখানে আর কোনও ছায়াপথ, নক্ষত্র তৈরি হয় না। বিগ ব্যাং-এর পর 10-20 কোটি বছর মহাবিশ্বে অন্ধকার যুগ ছিল যা "কসমিক ডার্ক এজ’ নামেই পরিচিত। এটা শেষ হয় যখন প্রথমবার কোনও নক্ষত্রের জন্ম হয়। এই যুগকে "রিআয়নাইজেশন’ বলে, যেখানে নক্ষত্র, ছায়াপথ তৈরি হতে থাকে নতুন করে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা সেই উৎস খুঁজছেন যার জন্য আবার এই আয়নাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেটা জানা কতটা সম্ভব হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ এই প্রাচীনতম ছায়াপথ থেকে আয়নাইজিং বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। কোনও সর্বাধিক দূরবর্তী অতিবেগুনি ফোটন এসে পৃথিবীর কোনও টেলিস্কোপে ধরা দেবে এই আশা করাও বৃথা কারণ ওই ফোটনগুলো ছায়াপথে থাকা গ্যাসে মিশে যাবে। এতদূর এসে পৌঁছবে না। তবুও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই বিষয়েও কনক সাহা জানান, "আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আরও দূরে যে ছায়াপথগুলো অবস্থিত তাদের হদিশ পাওয়া এবং তাদের ব্যাপারে গবেষণা করা, কারণ আমাদের লক্ষ্য হল রিআয়নাইজেশন যুগ শুরু হওয়ার সময়ের ছায়াপথের খোঁজ পাওয়া, তাদের সম্পর্কে জানা। এটাই চেষ্টা থাকবে আগামী দিনে।’
তাঁদের এই আবিষ্কার আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটা মাইলফলক। এই আবিষ্কারের ফলে প্রথম যখন নক্ষত্র এবং ছায়াপথের জন্ম হয় তখন মহাবিশ্বের অবস্থা কেমন ছিল, কোন অবস্থায় আয়নাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা জানা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে
নিজেদের প্রাণ দিয়ে মানুষের ভুলের খেসারত দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণীরা।
দুর্দান্ত অভিনয়, চিত্রনাট্যের পরেও অস্কারের জন্য মনোনীত হল না সর্দার উধম।
আমাদের আশপাশের প্রতিটা মানুষই যে খারাপ নয়, সেই গল্পই যেন বলল এই শর্ট ফিল্ম।
পৃথিবীর বাইরেও এই প্রথম কোথাও, কোনও গ্রহে হেলিকপ্টার উড়বে এবং তার নেপথ্যে থাকবে একজন ভারতীয়।
ফ্লিপকার্ট জানায় যে নাগাল্যান্ড ভারতের বাইরে বলে সেখানে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না।
এক মহিলার রাজ্যেই অন্য মেয়েরাই নিরাপদ নয়, কারণ তিনি ধর্ষণের অজুহাত দিতে ব্যস্ত!