×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • নাগরিকত্ব নিয়ে নয়া "ক্রোনোলজি' শাহের

    বিতান ঘোষ | 13-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর সাম্প্রতিক বঙ্গ সফরে এসে বলেছেন, করোনা-পর্ব মিটলেই নয়া নাগরিকত্ব আইন, Citizenship Amendment ActCAA) চালু করা হবে। আবার এর কিছুদিন পরেই আসাম সফরে গিয়ে তিনি বলেছেন, করোনার প্রকোপ পুরোপুরি কমলেই দেশজুড়ে ই-সেনসাস হবে।

     

    অর্থাৎ, 2011 সালের পর 11 বছরের ব্যবধানে অনলাইন মাধ্যমে দেশের আদমসুমারি হবে।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, দেশের অন্তত 50 শতাংশ মানুষ অনলাইন ব্যবস্থায় তাঁদের যাবতীয় তথ্য দিতে পারবেন। এর জন্য আলাদা একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছেও বলে জানা গেছে। আগের আদমসুমারির তুলনায় নতুন ব্যবস্থায় অনেক বেশি স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে দাবি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ-ও দাবি করেছেন যে, এই আদমশুমারির ভিত্তিতেই আগামী 25 বছরের রাষ্ট্র পরিকল্পনা গৃহিত হবে।

     

    1985-র আসাম চুক্তিতে National Population Register বা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণের বিষয়টির উল্লেখ ছিল। 2019 সালেও নয়া আদমসুমারির পূর্বে বাড়ি বাড়ি গিয়ে NPR শুরু করার কথা বলা হয়েছিল। 2019 সালের 31 আগস্ট আসামে National Register of Citizen অনুসারে যে সংশোধিত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়, তাতে রাজ্যের প্রায় 19 লক্ষ মানুষের নাম বাদ যায়। এদের মধ্যে মাত্র 6 লক্ষ মানুষ ছিলেন বাংলাভাষী মুসলমান। কিন্তু গত শতাব্দীর সাতের দশক থেকে যে উগ্র অহমিয়া জাতীয়তাবাদ All Assam Students' Union-এর হাত ধরে চরম বাঙালি ও সংখ্যালঘু বিদ্বেষের পথে এগিয়েছিল, তাকেই রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যায় বিজেপি। AASU-র দুই পুরনো নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মা ততদিনে বহু রাজনৈতিক পথ ঘুরে বিজেপিতে।

     

    নয়া নাগরিকত্ব আইনে যে প্রতিবেশী তিনটি দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অ-মুসলমান সম্প্রদায়গুলিকে 'শরণার্থী' হিসাবে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা অহমিয়াদের একটা বড় অংশ মেনে নিতে পারেননি। আসামের জনপরিসরে বাঙালি হিন্দুদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায়, এই আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়েছিল আসাম। আবার হিন্দু ভোটকে একত্রিত করতে চাওয়া বিজেপি থিঙ্কট্যাঙ্কও আঁচ করতে পারেননি যে, NRC প্রক্রিয়াটি তাঁদের জন্য রাজনৈতিক ব্যুমেরাং হতে চলেছে। এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে, নতুন NRC প্রক্রিয়া শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

     

    আরও পড়ুন:‘বং বং’-রা গড় বাঁচালেও ‘পাপ্পু’ সেই তিমিরেই!

     

    বাংলায় নির্বাচনের আগে নয়া নাগরিকত্ব আইনকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। মতুয়া ধর্মাবলম্বীদের প্রাণকেন্দ্র ঠাকুরনগরে সভা করে অমিত শাহ বলে গিয়েছিলেন যে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই নয়া নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা হবে। তৃণমূল সহ বিরোধী দলগুলির তরফে অবশ্য বারবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, মতুয়ারা এই দেশের যাবতীয় নাগরিক সুযোগসুবিধা পেলেও, এমনকি নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পেলেও, তাদের নতুন করে কেন নাগরিকত্ব পেতে হবে। লোকসভা ভোটে বিজেপির নাগরিকত্ব দানের প্রতিশ্রুতি মতুয়া ভোটকে বিজেপির অনুকূলে নিয়ে এলেও, 2021-এর বিধানসভা ভোটে মতুয়া ভোট বিজেপির দিক থেকে মুখ ফেরায়। বিধানসভা ভোটের প্রায় একবছর পর ফের রাজ্যে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, করোনা মিটলেই CAA চালু করা হবে।

    যোধপুর কেন্দ্রিক একটি সংগঠন— সীমন্ত লোক সংগঠন— যারা মূলত পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করে, তাদের রিপোর্ট অনুসারে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপির CAA নিয়ে 'আশ্বাসবাণী'তে ভরসা রেখেই পাকিস্তানের 800 হিন্দু 2021-এ ভারতবর্ষে এসেছিলেন। পাকিস্তানে নাগরিক অধিকার থেকে 'বঞ্চিত' এই মানুষদের আশা ছিল যে, শরণার্থী হিসাবে তাঁরা এই দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষাতেও ফল না মেলায় তাঁরা সম্প্রতি দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। অমিত শাহ NPR, NRC, CAA নিয়ে ক্রোনোলজির কথা বললেও দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক চমক এবং পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া এগুলির মধ্যে কোনও স্পষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ছাপ থাকছে না।

     

    এই প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর (APDR)-এর তরফে মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলছিলেন, "NRC-র মাধ্যমে শুধু 19 লক্ষ মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিই করা হয়নি, আরও লাখ লাখ মানুষকে বে-নাগরিক করার ভয় পাইয়ে রাখা হয়েছে।" তাঁর আরও বক্তব্য, "CAA হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের একমাত্র আইন, যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এইভাবে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দান দেশের সংবিধানের বিরোধী, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের বিরোধী। নির্বাচনী লাভের জন্য কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে মাথাই ঘামায় না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।"


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    স্বাধীনতা সংগ্রামের লজ্জাকর অতীত থেকে নজর ঘুরিয়ে অলীক অমৃতের সন্ধান করছে বিজেপি।

    প্রবাসী সন্তানের অভাব ভুলিয়ে সন্তানের মতোই প্রবীণদের আগলাচ্ছেন তুর্ণীরা।

    বামপন্থার পুনরুত্থান, নাকি জনপ্রিয়তাবাদের হাত ধরে নব্য নাৎসি দমন; রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত কী?

    এককালের নবজাগরিত কলকাতার বহু অন্তর্জলি যাত্রা দেখা নন-এসি মেট্রোর বিদায় হল গীতাপাঠের মাধ্যমে!

    যৌনপল্লীর কেউ কেউ এখন স্থানীয় হাটে সবজি নিয়ে বসেন। কেউ আবার বুধবার করে ফুল, বেলপাতা, আমপল্লব নিয়ে।

    সেনেগালকে সারা বিশ্ব চিনত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, ক্ষুধাপীড়িত দেশ বলে

    নাগরিকত্ব নিয়ে নয়া "ক্রোনোলজি' শাহের-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested