হিটলার তাঁর বিরোধীদের কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে পাঠাতেন। স্তালিন নাকি দলের ভিতরে-বাইরে বিন্দুমাত্র বিরোধিতা দেখলেই, বিরোধীদের ঘাড় ধরে গুলাগে পাঠাতেন। বঙ্গের বাম নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই স্বঘোষিত স্তালিনপন্থী। যদিও বঙ্গের বামেরা কাউকেই গুলাগে নির্বাসন দেন না। সেই জোর তাদের নেই। একের পর এক নির্বাচনী বিপর্যয়ে তাদের অবস্থা এখন খানিক সুকুমার রায়ের সেই নিরীহ সাপটির মতোই— "ছোটে নাকি হাঁটে না, কাউকে যে কাটে না।' তবে রেজিমেন্টেড পার্টিতে, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নিগড়ে বাঁধা পড়ে কেউ যদি কালেভদ্রেও কিঞ্চিৎ বে-সুর হয়, কিংবা দল এবং মতাদর্শের হিতার্থে বাইরের কেউও যদি সময়োপযোগী তিক্ত পাচন গেলাতে চায়, তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একটি চটকদার শিরোপা— চালচোর!
"চালচোর' শব্দের জন্মরহস্য বেশ জটিল। বামেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে মিড ডে মিলের চাল চুরির অভিযোগ উঠেছিল। সরকারি প্রকল্পের জিনিসপত্র চুরি করা নিঃসন্দেহে গর্হিত অপরাধ। কানাকে কানা বলার মধ্যে অশালীনতা থাকতে পারে, টেকনিকালি ভুলের কিছু নেই। তেমনই কেউ চুরি করলে তাকে চোর বলাও ভুল কিছু নয়। কিন্তু যারা এই চুরির বখরা পাওয়া দূরস্থান, এ সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ জানেন না, তারা কেন খামোকা চোর অপবাদের ভাগীদার হতে যাবেন, বলতে পারেন? গণআন্দোলনের এক পরিচিত কর্মী সেদিন মজা করে বলছিলেন, অকৃতদার মানুষ আমি, হাই ব্লাড সুগারে ভুগি। ভাত চলে না। বিজেপি আর তৃণমূল সমান বিপদ নয় এটা বলে আমায় ভোটের আগে চালচোর অভিধা পেতে হয়েছে। বলতে পারো, চালটা চুরি করে আমি করবটা কী?
বিজেপির হাতে এখন রাষ্ট্রযন্ত্র। কর্পোরেট কুবেররা দু'হাত ভরে তাদের ধনদৌলত দিচ্ছে। এই সবকিছুর জোরেই ওরা যদি আপনাকে "দেশদ্রোহী' বলে দেগে দেয়, তবে যে কোনও উপায়ে সেটা প্রমাণ করে ছাড়তে পারে। কিন্তু বামেদের এই দু'টো জোরের কোনটাই নেই। তারা ক্ষমতায় নেই প্রায় এক দশক, আর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকার দরুন লেভিও কমছে হুহু করে। এই অবস্থায় ব্যক্তি বিশেষের উদ্দেশ্যে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনলে তা তো প্রমাণ করতে হবে! আর "চালচোর' একটা অপবাদ হল! অপবাদটা গণশত্রু বা পুঁজিপতিদের দালাল হলে তবু একটা কথা ছিল। সেক্ষেত্রে কে গণশত্রু আর কে নয়, তা নিয়ে নকশালদের মতো একটা তাত্ত্বিক বিতর্ক করা যেত। তা বলে শেষে কিনা চাল চুরির বদনাম!
আরও পড়ুন: জাতের অঙ্কে মন্ত্রিত্ব বণ্টনে বাংলায় ফল মিলবে কি?
পলিটিক্যালি কারেক্ট বিদ্বজ্জন থেকে পাড়ার অ্যাপলটিকাল কালু-ভুলু — প্রায় প্রত্যেকেই বামেদের বারংবার বলেছে, ওগো তোমরা আর বেলতলায় যেও না। কিন্তু বামেরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে মস্তক মুণ্ডন করে সেই বেলতলাতেই দাঁড়িয়েছে। ফলাফল কী হয়েছে আমরা সবাই জানি। বামেদের একটা বড় অংশ অবশ্য মনে করছেন, চালচোরদের পরামর্শ না নিয়ে তারা ঠিকই করেছেন। তাতে যায় যদি যাক প্রাণ, সবার আগে দলীয় অনুশাসন!
কিন্তু কালের কী নিষ্ঠুর পরিহাস! দলের বাইরে বৃহত্তর নাগরিক সমাজে নিরন্তর চালচোর শনাক্ত করার শেষে দল এবং ফ্রন্টের অন্দরেই বেশ কয়েকজন চালচোরের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই চালচোররা বলছেন, "বিজেপিকে রুখতে সব দলকে একজোট হতে হবে, প্রয়োজনে তৃণমূলের সঙ্গেও কাজ করতে হবে।' হা হতোস্মি! এই কথাটাই তো চালচোর প্রাজ্ঞজনেরা ভোটের আগে বলেছিলেন। ইতিহাসের অনুষঙ্গ টেনে তাঁরা বলেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতালিপ্সু প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই কিছু না কিছু বিচ্যুতি আছে। কিন্তু বিজেপির মতো বিভেদকামী ফ্যাসিবাদী মানসিকতাসম্পন্ন দলকে হারাতে সব দলের জোট বাঁধা প্রয়োজন। বামেরা তখন মগ্ন ছিলেন বিজেপি ও তৃণমূলকে এক তোড়ায় বেঁধে বিজেমূল নামক এক কাল্পনিক রাজনৈতিক এভিল খাড়া করতে। বাংলার মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে ঢেলে ভোট দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে, তারা আপাতত একটি রাজনৈতিক দলকেই তাদের এভিল মনে করছে। চালচোরদের কথা বাসি হলে মিষ্টি হয়। কী আর করা যাবে!
রাজনীতির হরিদাসদের অনৃতভাষণ আর চমকদারিতে ঢাকা পড়ে যায় হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তাঁর সমাজ সংস্কার আন্দোলন।
অবনীন্দ্রনাথের ভারতমাতা যা ছিলেন এবং যা হইয়াছেন তা সবটাই রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির প্রয়োজনে।
লোকাল ট্রেনের অপেক্ষায় হয়রান মানুষের প্রশ্ন, করোনা কি ট্রেনে চড়তে ভাসবাসে আর বাসে ওঠে না?
সহিষ্ণু আর সময়ানুবর্তী হওয়ার পাঠ যাদের দেওয়ার কথা, সেই শিক্ষকদের একাংশই এই দুইয়ের পাঠ ভুলেছেন।
রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় লাগাম পরানোর দুরূহ কাজও করতে হবে বিজেপিকে
বিশ্বে ট্রেন নিয়ে অনেক গল্পগাথা আছে। কত গল্প প্রাণ পেয়েছে ট্রেনের কামরায়।