×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • কৃষক সমাবেশের ডাক: বিজেপিকে ভোট নয়

    বিতান ঘোষ | 13-03-2021

    কলকাতায় সংযুক্ত কিসান মোর্চা আয়োজিত মহাপঞ্চায়েতে ঐক্যবদ্ধ কৃষক নেতারা। সঙ্গে রয়েছেন সমাজকর্মী মেধা পাটেকরও।

    একজনের চোখের জল পুলিশি দমনপীড়নের ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেছে। একজন নর্মদা বাঁচাও থেকে সিঙ্গুর- জীবন জীবিকা রক্ষার লড়াইয়ে বরাবর নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৃতীয় জন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের আসন থেকে রাজপথে নেমে সরাসরি রাজনৈতিক কর্মী। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত, মেধা পাটেকর থেকে যোগেন্দ্র যাদব সকলেই এখন এক মঞ্চে তাঁদের একটাই আহ্বান, ভোট না দিয়ে বিজেপি-কে আঘাত করতে হবে। শনিবার 13 মার্চ, কলকাতার মেয়ো রোড সংলগ্ন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দেখা গেল তাঁদের। উপলক্ষ কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চার মহাপঞ্চায়েত।

     


    তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে যে কৃষক আন্দোলন চলছে, তা এখন দেশের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে সারা বিশ্বেই। স্বয়ং কৃষিমন্ত্রী তাঁদের দাবিতে অনড় কৃষক নেতাদের বোঝাতে গিয়ে বাতানুকূল ঘরেও গলদঘর্ম হয়েছেন। সেই আন্দোলনকে যারা পরিচালনা করছেন, তারা প্রতিবাদ-নগরী কলকাতায় এলে একটা অন্যরকম উন্মাদনা দেখা যাবে মনে হয়েছিল। উন্মাদনা যে ছিল না, তা নয়, তবে মূল ধারার প্রচারমাধ্যম এঁদের নিয়ে খুব বেশি ভাবিত নয় বোঝা গেল। যে শহর একসময় কাস্ত্রো কিংবা মুজিবকে সাদরে গ্রহণ করেছে, তাঁরা রাকেশ টিকায়েতদেরও সাদরে গ্রহণ করবে— এই বিশ্বাস কৃষক নেতাদেরও আছে। সেই বিশ্বাস থেকেই তাঁদের কলকাতায় আসা



    দিল্লি থেকে 1500 কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতায় এসেও কৃষকরা তাঁদের দাবিতে অনড়। তাঁদের দাবি নয়া তিন কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। সঙ্গে কাতর আর্জি, বাংলার আসন্ন ভোটে বিজেপিকে ভুলেও ভোট দেবেন না। কিন্তু কৃষক মহাপঞ্চায়েত থেকে রাজনৈতিক বার্তা কেন? যোগেন্দ্র যাদব সহ আরও অনেকেরই ব্যাখ্যা, ‘বিজেপিকে ভোট না দিয়েই চোট (আঘাত) করতে হবে। ওরা গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না, তাই ওরা যে ভাষা বোঝে সেই ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে।' স্বভাবসিদ্ধ ঢং-এ মেধা পাটেকরও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তীব্র বিদ্রুপ করে বলেন, ‘চা বেচতে বেচতে দেশটাকেও বেচে দিচ্ছে। এই কেন্দ্রীয় সরকারকে সরিয়ে নতুন সরকার— যারা দেশের জল, জমি, জঙ্গলকে কর্পোরেট শক্তির কাছে বেচে দেবেন না— তাঁদের নির্বাচিত করতে হবে।' উপস্থিত জনতাকে বোঝানোর ভঙ্গিতে তিনি আরও বললেন, ‘এই লড়াই শুধু অন্নদাতার নয়, যারা সেই অন্ন খায় তাঁদেরও। বিজেপির সরকার কৃষককেও বাঁচাবে না, আবার সাধারণ ক্রেতাকেও বাঁচাবে না। সব তুলে দেবে বন্ধু কিছু কর্পোরেট কোম্পানির কাছে।'



    প্রতিটি বক্তার বক্তব্য শেষে মুহুর্মুহু হাততালির সঙ্গে স্লোগান উঠছিল, ‘জয় জওয়ান, জয় কিসান’, ‘জয় গুরুজিকা খালসা’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ—কিসান-মজদুর ঐক্য জিন্দাবাদজনৈক বক্তা বক্তব্য রাখতে উঠে বললেন, ‘অনেকেই বলছেন, আমরা কেন কলকাতায় এসেছি। আসলে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ওনার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব মাত্র একটা ফোন কলের। শুনলাম উনি ঘনঘন কলকাতায় আসছেন। তাও ওনার ফোন নম্বরটা সংগ্রহ করতেই কলকাতায় আসা।' হাসির রোল উঠল সমাবেশেশ্রোতারা অপেক্ষা করছিলেন রাকেশ টিকায়েতের বক্তব্য শোনার জন্য। তিনি মঞ্চে উঠতেই আলাদা একটা উন্মাদনা লক্ষ করা গেল। তিনি অবশ্য খুব শান্ত গলায়, ধীরে ধীরে বললেন, ‘দিল্লির সরকার ভেবেছিল দিল্লির ঠান্ডায় আমরা পারব না, আমরা চলে যাব। আমরা যাইনি। ওরা ভাবছে দিল্লির গরমে আমরা চলে যাব, না, আমরা যাব না।' প্রত্যয়ের সুরে টিকায়েতের দাবি, ‘সরকার আইন না ফেরালে আমরাও ঘরে ফিরব না।' সবচেয়ে বেশি হাততালি পড়ল টিকায়েতের এই মন্তব্যে

     

     

    দিল্লি সীমান্ত থেকে বাংলার জন্যও বিশেষ বার্তা এনেছিলেন কৃষক নেতারা। টিকায়েত যেমন বললেন, ‘বাংলার মাটি আন্দোলনের মাটি। আমরা বাংলার সবাইকে বলছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে দিল্লিতে চলুন। আপনাদের সব ব্যবস্থা আমরা করব। আর আপনারা না গেলে আমরাই বাংলায় এসে ধর্নায় বসব।' যোগেন্দ্র যাদবের কথায় গুরুত্ব পেল কৃষকদের সম্মানের বিষয়টি। কৃষকরা তাঁদের সম্মানের দাবিতে বাংলায় এসেছেন। তাঁদেরকে খালি হাতে ফেরাবেন না। এই রাজ্যে বিজেপিকে আসতে দেবেন না’, আহ্বান যোগেন্দ্রর। চাঁচাছোলা ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মেধা পাটেকরও। বললেন, ‘অনেক জায়গায় হিন্দু-মুসলিম করছেন কেউ কেউ। নন্দীগ্রামের আন্দোলন আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে লড়েছি। কৃষক যে ফসল ফলান তা দলিত, মুসলমান সবাই খান। এতে কোনও ভাগাভাগি নেই।'



    প্রধানমন্ত্রীর আন্দোলনজীবীমন্তব্য নিয়েও তাঁকে একহাত নেন বক্তারা। বলেন, ‘এই আন্দোলন আত্মনির্ভর কৃষকদের আন্দোলন। কর্পোরেটজীবী প্রধানমন্ত্রী এটা বুঝবেন না।' কিন্তু কৃষক নেতারা বিজেপিকে ভোট দিতে না বললেও, তার পরিবর্তে কাকে ভোট দিতে হবে, তা স্পষ্ট করেননি। বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত সচেতন। তাই তাঁরাই বিবেচনা করবেন কাকে ভোট দেওয়া উচিত। আমরা শুধু বলতে এসেছি বিজেপিকে ভোট দেবেন না।'



    সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বক্তাদের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে সংযুক্ত কিসান মোর্চার হলুদ পতাকা নাড়াচ্ছিলেন তাঁরা। সভার উদ্দীপনা স্তিমিত হয়ে এলে স্লোগানও তুলছিলেন কেউ কেউ। বক্তব্য শেষ করে বক্তারা নন্দীগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। সেখানেও কৃষক মহাপঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়াও সংযুক্ত কিসান মোর্চার প্রতিনিধিরা পৌঁছবেন রাজ্যের জমি আন্দোলনের আর এক আঁতুড়ঘর সিঙ্গুর এবং আসানসোলেও

     


    সভা শেষে দেখা হল এক অদ্ভুতদর্শন ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর গলায় লিট্টি (আটা দিয়ে প্রস্তুত এক বিশেষ খাবার, যা বিহার-উত্তরপ্রদেশে খুব জনপ্রিয়)। জিজ্ঞাসা করলাম, এমন সাজ কেন? বললেন, ‘এটা আমার প্রতীকী প্রতিবাদ। কেন্দ্রীয় সরকার ন্যায্য সহায়ক মূল্য তুলে দিয়ে কৃষককে সর্বস্বান্ত করছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ চড়া দামে খাদ্যদ্রব্য কিনছে। আমি গোরক্ষপুরে থাকি। ওখানকার স্থানীয় খাবার লিট্টিকেই তাই প্রতিবাদের অস্ত্র বানিয়েছি।' প্রায় প্রতিটি মহাপঞ্চায়েতে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই অংশগ্রহণ করা সেই ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নন্দীগ্রাম কত দূর’? বললাম, বহুত দূর। রাকেশ টিকায়েতও বলছিলেন, ‘দিল্লি বহুদূর। এই লড়াই আমরা থামাচ্ছি না, যতদিন না পর্যন্ত আমরা দিল্লিতে নতুন সরকার আনতে পারছি।'


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই দেশ, আবারও না হয় পরীক্ষা দেবে।

    ভাওয়াল সন্ন্যাসীর ঢঙে সনিয়া বলবেন আমায় তোমরা যেতে দাও, আর বাকিরা পথ আগলাবে— এই হল কংগ্রেসের হাল!

    শিল্পীর শিল্পে সমকাল ধরা পড়লে, শাসক সর্বদাই ভয়ে থাকে।

    সংবিধান দিবসের স্মরণ: নাগরিকের কাছে ধর্মগ্রন্থের মতোই পবিত্র এই নথি।

    দেশের ইতিহাসে এক প্রহেলিকাময় চরিত্র হয়েই রয়ে যাবেন পিভি।

    বিপদের সম্মুখে অসহায় মানুষের আপাত দুর্বল জায়গাগুলো এইভাবেই বুঝি বেআব্রু হয়ে পড়ে।

    কৃষক সমাবেশের ডাক: বিজেপিকে ভোট নয়-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested