×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সংসদীয় বিধি লঙ্ঘন আর কত দূর যাবে?

    বিতান ঘোষ | 23-09-2020

    খোদ সংসদেই নিয়মভঙ্গ!

    নাগরিক কবিয়ালঅনেকদিন আগে বলেছিলেন, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরেকিন্তু সেই কণ্ঠকেই যদি স্তব্ধ করে দেওয়া হয়? কিংবা সংখ্যার জোরে সংখ্যালঘু কোনও কণ্ঠস্বরকে ঢেকে দেওয়া হয়? সম্প্রতি রাজ্যসভাতে দুটি কৃষি বিল নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ ধ্বনিভোটে বিল দুটি পাশ করিয়ে দেনবিরোধী সাংসদরা অবশ্য ওয়েলে নেমে এসে ডেপুটি স্পিকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এমন বিতর্কিত বিল কখনওই ধ্বনিভোটের মাধ্যমে গৃহীত হতে পারে না। 20 সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় কিছু সাংসদের হাতে যে লাল বইটি দেখা গিয়েছিল, সেই লাল রঙা রুল বুক খুলে দেখা গেল, বিরোধীদের অভিযোগ অমূলক নয়। রাজ্যসভার কার্যবিধির 252 নং ধারায় স্পষ্ট লেখা রয়েছে, “If the opinion of the Chairman as to the decision of a question (by voice vote) is challenged...he shall order a division to be held, under which the votes can be recorded and matter decided”. অর্থাৎ, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের (প্রস্তাবের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে কিনা সেই হিসেবে) কোনও সিদ্ধান্ত যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে তখন সদস্যদের ভোটদানের মাধ্যমেই তার নিষ্পত্তি হতে হবেএই ভোট প্রক্রিয়া বৈদ্যুতিন ভোট রেকর্ডারের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কাগজের স্লিপে ভোট দিয়েও হতে পারে। কিন্তু সেদিন রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটের মাধ্যমে গোটা বিষয়টির মীমাংসা করলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান। এই বিষয়ে বিজেপি বিরোধী প্রায় প্রত্যেকটি দলই সরকারি সিদ্ধান্ত এবং ডেপুটি চেয়ারম্যানের ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় 4thPillars-কে বলেন, “সংসদীয় ইতিহাসে 20 সেপ্টেম্বরের ঘটনা নজিরবিহীন। সরকার গায়ের জোরে সমস্ত সাংবিধানিক রীতিনীতিকে অগ্রাহ্য করছে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্যও প্রায় অনুরূপ। তাঁর মতে,“দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহ গণতন্ত্রের পিঠে ছুরি বসিয়ে দেওয়ার সামিল। সরকারের এই অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একজোট হয়ে লড়বে বলে তিনি জানান।

    সংবিধানের রচয়িতারা সংবিধান প্রণয়নের সময় একটা বিষয় স্মরণে রেখেছিলেন যে, এই দেশে কোনও সংখ্যালঘুর স্বর যেন সংখ্যাগুরুদের চাপে অকিঞ্চিৎকর না হয়ে যায়। তাই আইন প্রণয়নের পাশাপাশি দেশের সাংবিধানিক বিধিকে তাঁরা নৈতিকতার নিগড়ে বাঁধতে চেয়েছিলেন। এখন দেশের সাধারণতন্ত্র যখন 70টা বসন্ত পার করে ফেলেছে, তখন দেখা যাচ্ছে এই নৈতিকতার জায়গাতেই বড় ফাঁক রয়ে গেছে। শাসকের শীর্ষস্তর থেকে মাঝেমধ্যে দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে বটে, কিন্তু সুস্থ আলোচনা কিংবা বিতর্কের পরিসরটিকেই ক্রমশ সংকুচিত করে আনা হচ্ছে। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও হিন্দু কোড বিল কিংবা 62-এর চিন যুদ্ধ নিয়ে দলীয় সতীর্থ এবং বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ধ্বনির ঝংকারে বিরোধীদের স্রেফ সাক্ষীগোপাল করে রাখেননি। হরিবিষ্ণু কামাথ, অটল বিহারী বাজপেয়ী কিংবা ইন্দ্রজিৎ গুপ্তর মতো বাগ্মীদের সরকার বিরোধী ঝাঁঝালো বক্তব্যের তারিফ আসত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। সেই ঔদার্য সব কা বিশ্বাস'-এর সরকারের আছে বলে মনে হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘কেন্দ্রের এই সরকার স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ চালাতে চায়। বিরোধীদের কাছে সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেওয়াই তো সরকারের কাজ। অথচ সরকার বিরোধীদের কথাই শুনতে চায় না।তাঁর আরও সংযোজন, ‘বিরোধীদের একাংশ হয়তো সেদিন একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা সংসদে আলোচনা চেয়েই এমনটা করেছিলেন। তার জন্য তাদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। সরকার বিরোধীদের দাবি না মানলে পথের আন্দোলনেই সরকারপক্ষকে জবাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

    সংসদের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য অতীতে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রীসভার কে. রঘুরামাইয়ার কথা উল্লেখ করতে হয়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দিরা গান্ধী সরকারের বিবিধ বিল পাশেও বিরোধীদের সমর্থন আদায়ে চেষ্টার কসুর রাখতেন না তিনি। জনৈক বিরোধী সাংসদ নাকি ইন্দিরা গান্ধীকে মস্করা করে বলেছিলেন, ‘আপনার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আসলে আপনার পক্ষে না আমাদের পক্ষে, বোঝা দায়।' তাছাড়া 20 সেপ্টেম্বর রাজ্যসভা টিভিতে যারা নজর রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই নজরে পড়েছে শাসকদলের সাংসদরা বারবার ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে নানারকম পরামর্শ দিচ্ছিলেন। কিন্তু আইন মোতাবেক একমাত্র সেক্রেটারি জেনারেল ছাড়া চেয়ারম্যান কিংবা ডেপুটি চেয়ারম্যান অন্য কারও পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না। যেভাবে সাম্প্রতিক কালে সংসদ চলছে, তাতে বিরোধীদের আশঙ্কা কোরাম' (সাংসদদের মধ্যে অন্তত 10 শতাংশের উপস্থিতি, যা সংসদে যে কোনও নীতিনির্ধারক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আবশ্যক) না হওয়া সত্ত্বেও হয়তো বিলগুলোকে অনৈতিকভাবে পাশ করিয়ে নেওয়া হবে। সকলের অগোচরে, শাসকের ঘনিষ্ঠ দু-পাঁচজন ছাড়া কেউ সংসদে উপস্থিতও হয়তো থাকবে না।

    ব্যাকরণগত ভাবে মূলত দু'টি ধ্বনির কথা আমরা জানি। স্বরধ্বনি আর ব্যাঞ্জনধ্বনি। প্রথম ধ্বনিটি কারও সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে, তবে দ্বিতীয়টির জন্য অন্যান্যদের সাহায্য প্রয়োজন। যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেকটা ব্যাঞ্জনধ্বনির মতোই। যেখানে শাসকের যাবতীয় সিদ্ধান্তে বিরোধীদেরও একটা ভূমিকা থাকে। হয়তো সেই ভূমিকা সব সময় শাসকের সিদ্ধান্তের অনুসারী হয় না, কিন্তু বিরোধীর বিরোধিতাটাও সভার কার্যবিবরণী এবং পরবর্তী সময়ের ইতিহাসের আলেখ্য হিসাবে রয়ে যায়। কয়েকদিন আগেই লোকসভার জনৈক সাংসদ দেশের শাসককে উলঙ্গ রাজা'র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ইতিউতি ছড়িয়ে পড়া বিবিধ স্বরকে অবদমিত করার প্রয়াস জারি রেখে, শাসক হয়তো আপন স্বার্থসিদ্ধি করতে সফল হবে। সাময়িকভাবে। কিন্তু স্তাবকদলের ভিড়ে কোনও লঘুস্বর যদি রাজা তোর কাপড় কোথায়?' বলে প্রশ্ন তোলে, রাজা সেই বিরুদ্ধস্বরকে চাপা দিতে পারবে তো?


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    সেনেগালকে সারা বিশ্ব চিনত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, ক্ষুধাপীড়িত দেশ বলে

    বোরখা পরা নাজমার বর 2002-এর গুজরাতে খুন হয়, এখন মুশকানরা আল্লা হো আকবর বললেই দোষ হয়ে যাবে?

    ‘অরাজনৈতিক’ মঞ্চের ‘রাজনৈতিক’ পোস্টারে বিজেপিকে রোখার ডাক।

    মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরেও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতেই হবে ভারতকে

    দিল্লির বুক থেকে ইসলামিক ও ব্রিটিশ শাসনের অস্তিত্ব মুছতে উদ্যোগী মোদীর সরকার।

    ক্ষমতা প্রয়োগ করে মহামারীর মোকাবিলার সঙ্গে আইনগত এবং নৈতিক দায়িত্বও পালন করাও উচিত কেন্দ্রের।

    সংসদীয় বিধি লঙ্ঘন আর কত দূর যাবে?-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested