×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পীড়নের জবাবেই আল্লাহ্ হো আকবর

    বিতান ঘোষ | 16-02-2022

    নিজস্ব ছবি

    ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে সহযাত্রী কারণে অকারণে কপালে হাত ঠেকিয়ে ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করলে অনেককেই বেশ নিশ্চিন্তবোধ করতে দেখেছি। প্রবীণদের মতো, "আহা, এত বড় হয়েও সংস্কার ভোলেনি' সুলভ নিশ্চিন্তিবোধ নয়, এই নিশ্চিন্তিবোধ সংখ্যাগুরুর নিরাপত্তাবোধের, যে আমার আশেপাশে যারা আছে, তারা আমার ধর্মের লোক

    হাতের কবজিতে বাঁধা তাগা কিংবা মাথার ফেজ টুপি— ধর্মের এই নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্নগুলি না থাকলে ব্যক্তির ব্যবহারিক ধর্মাচরণকে স্কুল কলেজ কিংবা কর্মস্থলে আলাদা করে বুঝতে পারার জো নেই। তবু অভ্যাসে কপালে হাত ওঠে, শাহরুখ তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে লতা মঙ্গেশকরের দেহমুক্ত "আত্মা'র শান্তি কামনায়, অশুভ শক্তিকে ফুঃ দিয়ে সরিয়ে দেন

    কর্ণাটকের মুশকান এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়েছেন। গেরুয়া স্কার্ফ জড়িয়ে জয় শ্রী রাম বলতে বলতে তেড়ে আসা উন্মত্ত যুবকবৃন্দের সামনে সে একা হেঁটে গেছে। সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে গড়ে তোলা শব্দব্রহ্মকে ভেদ করে, সে চিৎকার করেছে "আল্লাহ্ হো আকবর' বলে। দেশের প্রগতিশীল একটা অংশের মাথায় হাত। এ কী হল! সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় আস্ফালনের মুখে বোরখা পরিহিত মুশকান মেয়েটি যদি ইনকিলাব জিন্দাবাদ কিংবা বন্দেমাতরম বলত, তবে তা নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার এক লম্বা আলেখ্য নামানো যেত। কিন্তু মেয়েটি সেই ধর্মের চোরাগলিতেই ঢুকে পড়ল, প্ররোচনার প্রত্যুত্তরে বলল আল্লা হো আকবর?

     

    আরও পড়ুন:ললনার পকেট থাকা আর মানা নয়
     

    হ্যাঁ, বলল। কারণ মেয়েটি ধর্মপরিচয়ে মুসলমান। সে বোরখা পরে কলেজে আসে। সংখ্যাগুরু রাষ্ট্র তাকে উত্যক্ত করে, সে মুসলমান বলেই। মুশকান না হয় বোরখা পরে, তার মুসলমানত্বের স্বাক্ষর রেখেছে, কিন্তু মুসকানের স্বধর্মী আফরাজুল কিংবা আখলাক কি প্রকাশ্যে কোনও মুসলমানত্ব দেখিয়েছিল? তবু তো তাদের মরতে হয়েছিল৷ অধুনা এই দেশে খাদ্যাভাস কিংবা পোশাক পরিচ্ছদের নিরিখে বারংবার কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে মুসলমান কিংবা দলিত আত্মপরিচয়কে। সংখ্যাগুরু ধর্মের নামে, কখনও বা দেশপ্রেমের নামে তাঁর ধর্মপরিচয়কে সমাজ ও রাজনীতির মূলস্রোতে নিয়ে আসবে, আর সংখ্যালঘুকে তাঁর পোশাক কিংবা ধর্মীয় স্লোগানে সংযম দেখাতে হবে— এটা তো চলতে পারে না। মেয়েদের শাঁখা, পলা, সিঁদুর পরা সংখ্যাগুরুর কাছে "সংস্কার' হলে, সংখ্যালঘু নারীকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বোরখা খুলে সমাজ-সংস্কার করতে হবে কেন?

     

    গোপাল ভাঁড়ের এক গল্পে এক জাতকুলহীন ব্যক্তির পরিচয় জানতে গোপাল তাকে আকস্মিক ঠেলা দিয়েছিলেন। সেই ঠেলায় পড়ে ব্যক্তিটি সরা অন্ধা বলে গোপালকে গাল দেওয়ায়, চতুর গোপাল বুঝেছিলেন, লোকটি আসলে ওড়িয়া। সংখ্যাগুরুর পীড়নে কোণঠাসা দেশের সংখ্যালঘু সমাজ খানিক অসহায় হয়েই যদি তাদের ধর্মীয় প্রতীক, স্লোগানগুলিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, তবে কি তাদের খুব দোষ দেওয়া যাবে?


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    স্বাধীনতার 75 তম বছরে যে গণ-আন্দোলন প্রতিস্পর্ধী শাসককে নতজানু করল, সেই আন্দোলনেরও প্রেরণা মহাত্মা।

    রাষ্ট্রের বীররসাত্মক আখ্যান নির্মাণে সহায়ক নীরজের সোনা, প্রান্তিক এলাকার মীরাবাইরা বাড়ায় অস্বস্তি।

    বিপদের সম্মুখে অসহায় মানুষের আপাত দুর্বল জায়গাগুলো এইভাবেই বুঝি বেআব্রু হয়ে পড়ে।

    ঈশ্বরী পাটনি কি মা অন্নপূর্ণার কাছে দুধভাতের আবদার না জুড়ে ফুটেজের আবদার জুড়েছিলেন?

    নিজেদের দুর্বলতা কাটানোর দাওয়াই খুঁজে না পেলে অন্যরা দল ভাঙাবেই।

    বামেদের শহীদ বেদীর সংখ্যা কমা আর তৃণমূলের ক্রমবর্দ্ধমান 'শহীদ স্মরণ’ সমানুপাতিক!

    পীড়নের জবাবেই আল্লাহ্ হো আকবর-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested