ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ভেঙেছে ঘর। জোড়াতাপ্পি দেওয়া সংসারে বাড়ন্ত অনেক কিছুই। দুর্যোগের পরে সরকারি দয়াদাক্ষিণ্য যে মেলেনি এমন নয়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই কম। দু'বেলা ভরপেট খাওয়া আর কোনওক্রমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া নিয়ে সকলে যতটা চিন্তিত, ঠিক ততটাই অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষা আর জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি। সুন্দরবন, দক্ষিণ 24 পরগণার বিস্তীর্ণ অংশে ঝাঁকিদশর্নে এই নির্যাসগুলোই পাওয়া যায়। এখানকার মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তেমনই এক সংস্থা হল ‘জোনাকি’।
‘জোনাকি’ সংস্থার তরফে মূলত প্রাথমিক পড়ুয়া ও মেয়েদের পরিচর্যায় নজর দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তবর্তী জেলা দক্ষিণ 24 পরগণার বিস্তীর্ণ অংশে ইন্টারনেট সংযোগ তেমন পোক্ত নয়। তাই অনলাইন ক্লাস সেখানে বাতুলতা। কোভিডকালে স্কুলঘরের তালাতেও মরচে ধরতে বসেছে। এদিকে দুর্যোগে ভেসেছে বইখাতা, পেন-পেনসিল। তাই ‘জোনাকি’ সংস্থার তরফে এখানকার পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার এই প্রাথমিক সামগ্রীগুলিই। আবার নারীদের ঋতুকালীন সমস্যা নিয়ে এখানে আগের চেয়ে অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও, এখনও ঘন তমসা স্বাস্থ্য সচেতনতায়। এখানকার মেয়েদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক বাড়লেও, স্বল্পমূল্যে যথেষ্ট পরিমাণে সেটা পাওয়া যায় না। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিরও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তাই, জোনাকির সদস্যরা মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বন্দোবস্তও করেছে। সংস্থাটি মূলত কাজ করছে রায়দীঘী অঞ্চলের পুরকাইতঘেরী, ছাতুয়া ও আদিবাসীপাড়া গ্রামে।
হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি অঞ্চলের কতিপয় কলেজ পড়ুয়া তরুণের উদ্যোগে চলতি বছরই এই সংস্থার পথচলা শুরু হয়— অনীশ গুপ্ত, পুষ্পেন কর্মকার, শ্রীপর্ণা সাহা যাঁদের মধ্যে অন্যতম। হঠাৎ কেন এমন পরিকল্পনার কথা মাথায় এল? অনীশ বলছিলেন, ‘আয়লার সময় বয়স অল্প ছিল, কিন্তু আমপানের স্মৃতি এখনও দগদগে হয়ে আছে। আমরা এখানে বসে হয়তো বুঝতেও পারব না, ওখানকার মানুষরা কতটা কষ্ট করে বাঁচে। তাই মনে হল, আমাদের স্বল্প সামর্থ্যেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো উচিত।' কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ত্রাণসামগ্রী হিসাবে দুর্গতদের খাদ্যবস্তু বা জলের পাউচ দেওয়া হয়। সেখানে শিশুদের খাতা-পেনসিল আর মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার ভাবনা কীভাবে এল? অনীশের কথায়, ‘সরকারি তরফে খাদ্যবস্তুর জোগান নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় সেটার এখন আর বিশেষ অভাব নেই। কিন্তু বন্যাদুর্গত এসব জায়গায় শিক্ষা আর স্বাস্থ্য পরিষেবায় একটা বড় ফাঁক রয়ে গেছে। এগুলোও তো জনজীবনে কম জরুরি নয়। তাই আমাদের এই উদ্যোগ।' এমন কাজে বাধা আসেনি? কিছুটা থেমে অনীশ বলেন, ‘তা এসেছিল বৈকি। জেলার নামকরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রথমে আমাদের সাহায্য করবে বলেও পরে সরে দাঁড়ায়। তাছাড়া সরকারের তরফেও কোনওরকম সহযোগিতা করা হয়নি। অর্থবল কিংবা লোকবল— সবটাই সম্ভব হয়েছে সমবয়সী বন্ধুদের সক্রিয় সহযোগিতায়।' পুজোর আগেই এমন অনেক পরিকল্পনা ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আবারও রায়দীঘী পাড়ি দেবেন জোনাকির সদস্যরা।
আরও পড়ুন: অমৃতার ‘ন হন্যতে’ হয়ে ওঠা
দীর্ঘ মহামারী, উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক সংসারেই হঠাৎ নেমে এসেছে অন্ধকার। হাজার হাজার ‘জোনাকি’ এভাবেই সেই অন্ধকারে আলো ফেলুক। অন্যের সুখের লাগি ক্ষুদ্র জোনাকিরা এভাবেই জ্বলে উঠুক, প্রজ্জ্বলিত করে রাখুক মানবতার দীপকে।
সংখ্যাগুরুর জন্য,তাঁদেরই দ্বারা শাসিত ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসাবে খুরশিদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
দায়িত্বশীল নাগরিককে 74 বছর বয়সী স্বাধীন রাষ্ট্রের উপহার একটা কেক আর চকোলেট
এককালের নবজাগরিত কলকাতার বহু অন্তর্জলি যাত্রা দেখা নন-এসি মেট্রোর বিদায় হল গীতাপাঠের মাধ্যমে!
ফলাফল যার পক্ষেই যাক, বাংলার সামনে ইতিহাসের হাতছানি স্পষ্ট।
ক্ষমতা প্রয়োগ করে মহামারীর মোকাবিলার সঙ্গে আইনগত এবং নৈতিক দায়িত্বও পালন করাও উচিত কেন্দ্রের।
বিশ্বে ট্রেন নিয়ে অনেক গল্পগাথা আছে। কত গল্প প্রাণ পেয়েছে ট্রেনের কামরায়।