ঘড়িতে ন'টা ত্রিশ। শুনশান স্টেশনে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার, সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে উত্তুরে বাতাস। শহর ফেরত নিত্যযাত্রীদের ভিড় নেই, নেই হকারির ব্যস্ততা। আছে ওরা, নেই রাজ্যের বাসিন্দারা। রেলস্টেশনেই যাদের সকাল-সন্ধে, আকাশের তলায় ঘরবাড়ি আর বেঁচে থাকা। রাজধানীর রাজপথে সাধারণতন্ত্র দিবসের (Republic Day celebrations) সাড়ম্বর উদযাপনের পাশাপাশি তার আগের রাতে দেশের একটি প্রান্তে এদের জীবন যেন আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থাকেই (Indian polity) এক বিরাট প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।
হাওড়া মেইন লাইনের মফ:স্বল শহর শেওড়াফুলি স্টেশন চত্বরে বাস করেন বেশ কিছু পথবাসী। রাজেশ তাদেরই একজন। একনম্বর প্ল্যাটফর্মের ধারে তখন মশারি টাঙানোর তোড়জোর শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, এঁটো থালাগুলো জড়ো করছে চার-পাঁচ বছরের এক শিশু, রাজেশ আর সবিতার মেজো মেয়ে। রাতের খাবারে এদিন জুটেছিল শ্রাদ্ধ বাড়ির বাড়তি তরকারি আর মাছের কাঁটার ডাল। উচ্ছিষ্ট খেয়েই পেট ভরে ওদের। রাজেশ জানাল, তারা আগের মতো আর নেশা করে দিন কাটায় না। সকালে কাজে যায় হাটে। মোট ব'য়, কখনও আনাজপাতি দিয়ে আসে বাড়ি বাড়ি। ফেরার পথে কানা বেগুন, পাকা কুমড়ো নিয়ে ফেরে আস্তানায়।
রুকু রাজেশ-সবিতার বড় মেয়ে, মিউনিসিপ্যালিটির স্কুলে যেত লকডাউনের আগে। এখন লেখাপড়া বন্ধ, বন্ধ বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও। বৈদ্যবাটি মধুচক্র প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন বন্ধ, মেয়ে আর স্কুলে যায় না। সকাল হলেই বাড়ি বাড়ি বাসন মাজে। স্কুল খোলা থাকলে মেয়ের ক্লাস 6 হত, বলে সবিতা। 23 জানুয়ারি সকালে যখন রেলপার্কে পতাকা উড়ল, ওর ভীষণ মনে পড়ছিল স্কুলের কথা। চেনা চেনা লাগছিল সুভাষচন্দ্র বসুর ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটিও। কিন্তু, সাহস করে ফুল দিতে পারেনি সভ্য মানুষের ভিড়ে। ঘুম ঘুম চোখে রুকু বিদায় জানায়, কুয়াশার স্তর ক্রমে গ্রাস করে চারিপাশ।
আরও পড়ুন: জাতীয় সৌধ যেখানে পুনর্বাসনের জায়গা!
দূর থেকে মানুষগুলিকে দেখতে একেবারেই আলাদা লাগে, রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে সারা দিন যে ধরনের মানুষ যাতায়াত করে তাদের মতো নয়। মনে পড়ে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ক্ষুধার্ত কঙ্কালসার শিশুগুলির মুখ । আবার, কাছে গেলেই ভুল ভাঙে, আড্ডা জুড়লেই কত কথা! নিত্য দিনের অস্থায়ী জীবন নিয়ে চিন্তা যেমন আছে, তেমনই চিন্তা ছেলেমেয়েদের জন্য ফল-দুধের খরচ নিয়ে। রেল পুলিশ মাঝেমধ্যেই খেদিয়ে দেয় স্টেশন থেকে, আবার ফিরে আসে ওরা। জনসুমারিতে নাম উঠে না ওদের। তবু বেঁচেবর্তে থাকে দিব্যি। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন দেখে মায়ের দু'চোখ। যাদের জন্মই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সঙ্গে নিয়ে, তাদের আর ভয় করে না আগামীর পথ চলতে। রাত্রি শেষের রোদ্দুরে নবজাতক হাসে, পাকা পেয়ারা দাঁতে কাটে শিশুরা। স্বাধীনতার 75 পেরোয়, সংবিধান রচনার 72 পার। ডিজিটাল ইন্ডিয়া আর ভারতবর্ষের তফাৎ ঘোচে না।
স্টেশনবাসী মানুষগুলির নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নেই, নেই রেশন-আধারের সরকারি পরিচয়। তাই, সরকারের লাভ-ক্ষতির হিসেবের বাইরে থেকে যায় সবিতা-রুকুরা। বছর বছর সাধারণতন্ত্র দিবস আসে, আসে স্বাধীনতার দিন। এলাকার বিধায়ক কিংবা প্রধান দেশসেবক, প্রতিশ্রুতির ফুলকি ছোটে ভাষণে-স্লোগানে। "সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, শিক্ষাবিষয়ক অধিকার...।’ পুঁথিগত মৌলিক অধিকারে সীমাবদ্ধ থেকে যায়, স্টেশনের চাতালে কিংবা রেলপাড়ে তা নেমে আসে না কোনও দিন। সভ্যতার প্রদীপের তলার পিলসূজ হয়ে থেকে যায় ওরা।
বাংলার সাগরতটের কপিলমুনির আশ্রম আর সাগরের মেলায় মিশে আছে বহু সত্য, বহু মিথ, বহুত্বের চেতনা।
সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নয়া ময়দান কুতুব মিনার
সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রীতির লক্ষ্যে পদযাত্রা
মিথ্যা ভাষ্য, ঘৃণা ভাষণকে হাতিয়ার করে ধর্ম সভায়, নির্বাচনে মঞ্চে সঙ্ঘ, বিজেপি।
কাজের জগতে ইংরেজির বিকল্প নেই এই সত্যি কথাটা মানতে না পেরে সোশাল মিডিয়ায় ক্ষেপে উঠল সেন্টিমেন্টাল আত
শাসকবিরোধী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলি প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করলেন নির্মল মাজি