শ্রীচরণেষু দুর্গা মা,
‘জানো, গণেশটার পেটটা কত্তটা ফোলা ছিল...আর অসুরটার গোঁফখানা কী ভীষণ মোটা ছিল।' গত বছর পাশের বাড়ির এক খুদে সদস্য তোমায় সপরিবারে দেখে এসে অনুপুঙ্খ বিবরণ দিচ্ছিল আমায়। বেশ লাগছিল শিশুমনের কল্পনা মেশানো এই বর্ণনাগুলো শুনতে। এবার তো অকল্পনীয় ভাবেই কল্পনার এই পরিসরটা চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। আমরা বড়রা যাও বা রবাহূতের মতো ব্যারিকেডর এপার থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে তোমায় দেখতে পেলাম, বাড়ির খুদে আর বয়স্করা সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হল। ধুত্তোর, কী যে করোনা তুমি!
নিজের চারদিকে এই যে তুমি চক্রব্যূহ রচনা করলে, তাতে আমাদেরই প্রবেশাধিকার মিলল না। তা তুমি কি পারতে না ওই পাজি ভাইরাসটাকে ঝাড়েবংশে বিলুপ্ত করতে? তাহলে তো তোমার সঙ্গে আমাদের ব্যবধানটা গড়ে উঠত না। অবশ্য ক'টা ভাইরাসকেই বা তুমি কাবু করবে? করোনা ছাড়াও বিদ্বেষ, মিথ্যা আর অসাম্যের ভাইরাসটাও কেমন প্রকট আকার নিয়েছে তা তো তুমি দেখতেই পাচ্ছ। এই ভাইরাসগুলোর সবকটাই অদৃশ্য ঠিকই, তবে এখন যেটাকে নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে, সেই করোনার তবুও কিঞ্চিৎ উপসর্গ আছে। বাকিগুলো তো কারা লালন করছেন আর কারা পালন করছেন, বোঝা দায়। তবে, মুখে মাস্ক এঁটে, ঘরবন্দি থেকে আর কোলাহলমুখর পাড়াকে স্তব্ধ করে ওই ভাইরাসগুলোকে জব্দ করতে হয়নি। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে তাই করতে হচ্ছে। তাই আমাদের সম্মিলিত আর্জি, আপাতত এটাকে ভ্যানিশ করে দাও। তারপর বাকিগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করা যাবে!
কলকাতার মস্ত শিল্পী, প্রতিবছর তোমাকে নতুন নতুন রূপে সাজিয়ে তোলে— এবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একগাছা দড়ি হবে? গলায় দেব।' তোমার পুজোর 5 দিনে পাড়ার জলসায় কিশোর কুমারের গান শোনানো আশিষদা বলছেন, বছরের শেষ তিন মাস চালাব কীকরে? কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না, বলো। এত মৃত্যু, এত নিরাপত্তাহীনতার মাঝে থাকতে থাকতে ভয় হয় আজকাল, দূরের গন্ডির মধ্যে নিরাপদে যে পড়শি দাঁড়িয়ে আছেন তার কাছে যেতে ইচ্ছা করে। যে বন্ধু চাকরির সুবাদে বহুদিন প্রবাসে থেকে তোমার জন্য ঘরে ফেরে, তাকে দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এই সব ইচ্ছাগুলোয় মুলতুবি টেনে তুমি যেন সংযমের পরীক্ষা নিয়ে গেলে এবার। আমরা কি এতটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছিলাম মা, যে আমাদের পায়ে, আমাদের পেটে, আমাদের চেতনে এমন করে বেড়ি পরাতে হল?
সপ্তমীর ভোরে নবপত্রিকা স্নানের জন্য ঢাক বাজিয়ে ছেলের দল গঙ্গার ঘাটে যাচ্ছিল। বচ্ছরকার ঢাকের বোল শুনে মনের সকল অবসাদ আর ক্লেদ যেন ঘুচে গিয়েছিল এক নিমেষেই। কিন্তু তারপর? তুমি প্রায় শূন্য মন্দিরে বসে রইলে। খবর এলো অমুকের বাবা, তমুকের জেঠু করোনা পজিটিভ। সন্ত্রস্ত মনে টিভিতে আর ফোনেই তোমাকে দেখলাম। কিন্তু কই, সেই দেখায় তোমার মুখে সেই সর্বদুঃখহর সুধা তো লেগে থাকতে দেখলাম না! ভারি অভিমান হল এতকিছুর পরও তুমি আমাদের ফেলে যাচ্ছ দেখে। ভাবছিলাম লেখাটা এখানেই মুলতুবি করি। তবু আরও কিছু কথা না বললে যে কষ্টটা মনের মধ্যে রয়েই যেত।
দশমীর দিন বাড়ির বারান্দা দিয়ে দেখলাম মুখভরা সন্দেশ নিয়ে ড্যাংড্যাং করে ফিরে যাচ্ছ, আমাদের স্রেফ অবজ্ঞা করে। অবোধ প্রাণগুলোকে প্রলয়দোলায় চড়িয়ে নিজে অন্তর্হিত হচ্ছ কোন গহীনে। এই যাতনা কি সয়, বলো মা? জানো মা, তোমার বোধনের আগেই কত দুর্গার অকাল বিসর্জন হয়ে গেল। এই তোমার বিসর্জনের মতোই নিঃসাড়ে সবকিছু সাঙ্গ হয়ে গেল। বাড়ির লোক জানতে পর্যন্ত পারল না। তুমি যখন ফিরে যাচ্ছ, কত সবাই তাদের অব্যক্ত ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষার কথা তোমায় শুনিয়ে রাখল। আমরা অনেকেই কিন্তু এবার নিজেদের জন্য কিছুই চাইনি মা। শুধু আনমনেই বলে উঠেছি, ‘স্বপনদুয়ার খুলে এসো, অরুণ-আলোকে এসো স্তব্ধ এ চোখে...।' চারদিকে ঝড় উঠেছে মা, ঈশান কোণে কালো মেঘ। কূলহীন দড়িয়ায় ভেসে যাচ্ছে তোমার সন্তানসন্ততিরা। দাঁড় টেনে ধরে তুমি তাদের পথ দেখাবে না? রাস্তা থেকে ওই যে চিৎকার ভেসে আসছে— ‘আসছে বছর আবার হবে’। এই প্রত্যয়টুকু নিয়ে আরও একটা বছর প্রতীক্ষা করতে দেবে তো মা? অভিমান করলেও জানি, সকল দুঃখ, ক্লেশ মুছিয়ে দিয়ে তুমি আবার আসবে। সকল সীমা ঘুচিয়ে দিয়ে অসীম হয়ে আপন সুর বাজাবে। আপাতত সেটুকুর প্রত্যাশী হয়ে রইলাম। সাবধানে ফিরো মা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাল থেকো।
ইতি—
ঈশ্বরী পাটনির দুধভাত-হীন সন্তানেরা
অখ্যাত মফঃস্বলের আরও অখ্যাত নদী বয়ে নিয়ে গেছে পুরনো স্মৃতিদের, তবু উৎসব ফিরিয়ে আনে এদের সকলকে।
যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহে আপাতত ‘দেশপ্রেমী' সাজতে চাইছেন সবাই
দেশভাগের অন্যতম মন্ত্রণাদাতা তো দেশের বর্তমান শাসকদের পূর্বসূরিরাও, এ কথা কি ভোলা যায়?
নিউ নর্মাল সময়ে মহামারী অনেক কিছু বদলে দিয়ে গেলেও বাঙালির এই চিরায়ত অভ্যাসে বদল আনতে পারেনি।
‘বাবু’দের দেখানো পথেই রাষ্ট্রদ্রোহীদের খুঁজছে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী।
আমাদের 70 লক্ষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। তাই, আমরা যে কোনও মিথ্যা খবরকে সত্য করতে পারি