×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • স্মৃতি হাতড়ায় মফঃস্বলের পুজো

    বিতান ঘোষ | 06-10-2021

    প্রতীকী ছবি।

    এক নাগাড়ে ডেকে চলে ঝিঁঝিঁপোকা। একটু নির্জন জায়গায় দাঁড়ালে এই ডাকটা আরও স্পষ্ট হয়। বর্ষার সেই ভ্যাপসা, সোঁদা গন্ধটা চলে গিয়ে, একটা অন্যরকম ভাললাগার গন্ধ নাকে আসে। আর তখনই একটেরে মফঃস্বলটায় বোঝা যায় পুজো এসেছে। এই পুজো জৌলুসে, আড়ম্বরে কলকাতার মতো নয়, তবে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি। 

     

     

    এখনও কাছের রেডিও সারাইয়ের দোকানে মহালয়ার আগে ব্যস্ততা তৈরি হয়। ঘরের এককোণে ঠাঁই নেওয়া টিকিওয়ালা রেডিওর পরিচর্যা হয় ওই একদিনের জন্য। সেলুনের লাল্টুকাকা শশব্যস্ত হয়ে বলেন, ‘এবার একটা নতুন ছাঁট খুব চলছে, করে দিই?’ ঠিক যেমন পাশের পাড়ার শান্তিদিদি মা, কাকিমাদের দেখলেই বলে, ‘এবারে দারুন সব কালেকশন তুলেছি গো, একদিন বাড়ি এসে দেখে যাও শাড়িগুলো, পুজোর পর পয়সা মেটাবে।'

     

     

    তবু লড়াই থামে না। পাড়ার ছোট পুজোতেও থিম পুজোর ছোঁয়া লাগে। কলকাতা পারলে আমরা পারব না কেন! শান্তিদিদির শাড়িকে মলিন লাগে, বেশি টানে শহরে শো-রুম খুলে ফেলা কলকাতার মলগুলোকে। তারপর এখন তো ফোনে সব দেখে নিয়ে অর্ডার করে দিলেই ছেলেপুলেরা বাড়ি বয়ে সব দিয়ে যায়। পলেস্তারা খসা জীবন বলে কি আর প্লাস্টার অফ প্যারিসের প্রলেপ দেওয়ার সাধ জাগবে না?

     

     

    সন্ধে পেরোলে কলকাতা থেকে ফেরার ট্রেনগুলো ফাঁকা ফেরে। কাজ ঘুচেছে বাড়ির রোজগেরে সদস্যটার। পুজোয় দেওয়াথুয়িতেও পড়েছে লাগাম। তবু আলতা-সিঁদুর আর মিষ্টিটুকু কুটুম্ববাড়িতে না পাঠালে মান থাকে না গেরস্থের। কাছের স্টেশন লাগোয়া পতিতাপল্লীতেও পুজো আসেনা দু'বছর ধরে। স্বাস্থ্যবিধি, বাবুদের হাতে নগদ কমে আসা— এসবের মাঝে হাপিত্যেশ করে বসে থাকে তারা। গলির সুইটি, কমলাদের কানে পৌঁছয় দিল্লির সরকার বাহাদুর ফরমান করেছে, পতিতালয়ে ঢুকলেই মানবপাচারের অভিযোগ আনা হতে পারে। রাগে-দুঃখে এবার পুজোর জন্য তাদের ভিটের মাটি দেবে না বলেছে সুইটিরা

     

    আরও পড়ুন: মহালয়ার সকাল এবং রেডিওর একাল সেকাল

     

    মফঃস্বলে ভুবনডাঙার মাঠগুলো ক্রমশ জবরদখল হয়ে আসে। মাথা তোলে দক্ষিণী বারান্দাওয়ালা ফ্ল্যাট। মহালয়ার দিন ভোরবেলা উঠে পড়ে রেডিও চালালে দূরের বাড়ি থেকেও মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্রপাঠ শোনা যেত। উত্তুরে হিমেল হাওয়া জানান দিত শারদপ্রাতের। এখন সব রুদ্ধ। লেট নাইট ডিউটি করে ফেরা মফঃস্বল ঘুমে আচ্ছন্ন। বাণীকুমার, বীরেন ভদ্ররা তবু আসেন নিয়ম করেই। নস্ট্যালজিয়াকে জীবন্ত করে রেডিও বলে ওঠে, ‘আকাশবাণী কলকাতা প্রচারতরঙ্গে আপনারা শুনছেন মহিষাসুরমর্দিনী।'

     

     

    মফঃস্বলেও ইদানীং মাঝারি মাপের স্পনসর আসে, জাঁক করে পুজো হয় শহরের মতো করে। তবু কর্মে কিংবা অবসরে দূরের শহরে চলে যায়, চলে যেতে চায় মফঃস্বলের পরবর্তী প্রজন্ম। ক্রমশ ফিকে হয়ে যায় শহরতলির রঙ্গগুলো। তবু কাছের নাটমন্ডপ দুর্গাপ্রতিমার অঙ্গরাগ হয়। পরম যতনে মায়ের ত্রিনয়ন এঁকে দেন মৃৎশিল্পী। বছর পেরিয়ে পুজো আসে। হারিয়ে যাওয়া সব স্মৃতি আর স্থানান্তরী হওয়া সব ছেলেমেয়েদের ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি বয়ে আনে উৎসব। 


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    বাঙালির সুকুমারি মন, ননসেন্স রাইমস লিখেও এখানে প্রফেট হওয়া যায়, গবেট নয়।

    প্রকারান্তরে, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের মতো রাজ্যের দুই-ভাষা নীতিতেই সিলমোহর দিল কেন্দ্র।

    রাজ্যের নির্বাচনী সাফল্যের সূত্র ধরে দলের প্রসারের চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস

    গদ্দারদের সঙ্গে কিভাবে ট্রিট করা হয়, তার একটা নমুনা দেখানো হয়েছিল ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮-এ।

    আচ্ছা মৃত্যুর পর কী? মৃত্যুতেই কি সবকিছুর পরিসমাপ্তি নাকি, তার মধ্যে থেকেই সৃষ্টির বীজ উপ্ত হয়?

    আব্বাসের সমর্থকরা কি আব্বাসকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রূপে দেখতে চাইবেন?

    স্মৃতি হাতড়ায় মফঃস্বলের পুজো-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested