বুকের উপর পা তুলে দেব! প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার এটা একটা বেশ বাজারচলতি হুমকি। এই তো কিছু দিন আগেই রাজ্যের এক দাপুটে রাজনৈতিক নেতা বিরোধীদের এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। রবীন্দ্র সদনের সামনে গ্রিন পুলিশ এবার সেটাই করে দেখাল। বুট জুতো পরা তার পা এক অভিযুক্ত ছিনতাইকারীর বুকের উপর সদর্পে তোলা- এই দৃশ্য আম বাঙালির অসহ্য ঠেকেছে। পুলিশ কমিশনার গ্রিন পুলিশ কর্মীকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু গ্রিন পুলিশের কাজ, ভূমিকা, যোগ্যতা নিয়ে নানা গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। গ্রিন পুলিশ কি সত্যিই কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের যোগ্য? তাঁদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পরিচালনার মাপকাঠিটা কী?
গ্রিন পুলিশের নিয়োগ শাসক দলের ইচ্ছাধীন। হোমগার্ড-এর পদ ফাঁকা থাকলেও সেই পদে নিয়োগ হচ্ছে না। কনস্টেবল নিয়োগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। শুধু এন্তার গ্রিন পুলিশ নিয়োগ হচ্ছে। এই গ্রিন পুলিশদের আবার কাউকে কাউকে কয়েক বছর কাজ করার পরে হোমগার্ড পদে উন্নীত করা হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে 2008 সালে সিভিক পুলিশ ভলিন্টিয়ার ফোর্স বা গ্রিন পুলিশের সৃষ্টি। সৃষ্টির সময় থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ছিল। গ্রিন পুলিশ নিয়োগের কাজের মধ্যে একটা রাজনৈতিক ভাবনা তৎকালীন পৌর প্রশাসনের ছিল, আজও আছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্যের বাইরে থেকে কারা আসছেন, কোথায় হোটেল, রিসর্ট ভাড়া করে থাকছেন, সেই সব তথ্য কেন পুলিশ সঠিক ভাবে পাচ্ছে না, সেই প্রসঙ্গে গ্রিন পুলিশের ভূমিকার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, গ্রিন পুলিশ থাকতে পুলিশের কাছে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য কেন আসছে না? উল্টোদিকে এবার বিধানসভা নির্বাচনের 72 ঘণ্টা আগে বুথের ধারেকাছে গ্রিন পুলিশের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। কাজেই, গ্রিন পুলিশের রাজনৈতিক অবস্থান বংলার মানুষের কাছে জলের মতোই পরিষ্কার।
রাজ্য সরকার কেন এই গ্রিন পুলিশ দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করাচ্ছে? কেন রাস্তায় অমানবিক, অসাধু আচরণ করেও এই গ্রিন পুলিশরা পার পেয়ে যাচ্ছে? এর উত্তর হচ্ছে, এই গ্রিন পুলিশ হচ্ছে সরকারের কাছের মানুষ, দলের সমর্থক, কিছু ক্ষেত্রে নেতা ঘনিষ্ঠও বটে। সরকারি অঙ্গুলহেলনেই এদের গ্রিন পুলিশের কাজ পাওয়া। সরকার ও গ্রিন পুলিশের এই কাছাকাছি অবস্থানের জন্যই প্রকাশ্য রাজপথে আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়েও গ্রিন পুলিশ রেহাই পেয়ে যায়। কারণ তাঁদের মাথায় প্রশাসনের হাত রয়েছে। প্রশাসন তাঁদের আড়াল করছে। পরিবর্তে রাজ্য সরকার তথা শাসক দলকে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় সাহায্য করছে এরাই। এদের কোনও প্রশিক্ষণ সেই অর্থে হয় না।
আরও পড়ুন: পটকা ফাটিয়ে কি আর ভারত ভাঙা যায়?
কেন সরকার সঠিক নিয়োগ পদ্ধতিতে কনস্টেবল নিয়োগের বদলে এই গ্রিন পুলিশ দিয়ে কাজ করাচ্ছে? কেন থমকে রয়েছে হোমগার্ড পদে নিয়োগ? কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন জয়েন্ট কমিশনারের মতে, এভাবে যদি শাসক দলের ইচ্ছেতে গ্রিন পুলিশ নিয়োগ চলতে থাকে, তাহলে সমাজে তার নেতিবাচক ছাপ পড়া খুব স্বাভাবিক। গ্রিন পুলিশের চাকরি স্বীকৃত নয়, আইনের দৃষ্টিতে তাঁরা স্বেচ্ছাসেবক, সরকারি কর্মীই নয়। সরকার এদের দায় নেয় না। তাই যথেচ্ছাচার করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছে গ্রিন পুলিশ।
খড়গপুর আইআইটির অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ভার্গব মৈত্রর বক্তব্য, ‘কোনও রকম প্রশিক্ষণ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে গ্রিন পুলিশদের যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা উচিত নয়। সরকার চাইলে আমরা গ্রিন পুলিশের প্রশিক্ষণের জন্য একটা পাঠক্রম তৈরি করে দিতে পারি। আমরা অন্তত এমন কিছু প্রশিক্ষককে তৈরি করে দিতে পারি, যাঁরা গ্রিন পুলিশদের প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রশিক্ষণ ছাড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা মানে ওই গ্রিন পুলিশ নিজের ও পথে যাঁরা যানবাহন চালাচ্ছেন তাঁদের এবং পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন।'
কলকাতায় সার্কাসের তাঁবু উধাও। একসময় শহরে শীতের বার্তা নিয়ে আসত এই সার্কাসের তাঁবু।
ভূত চতুর্দশীকে কেন্দ্র করে নানা ধর্মীয় রীতি সংস্কারের মধ্যে উৎসবের আদলেও একটা গা-ছমছমে ভাব এখনও রয়েই
নোটবন্দির পাঁচ বছর পার। এখনও মানুষের ভরসা নগদ লেনদেনেই।
সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে চতুর্থ শ্রেনির কর্মীর অভাবে সময়মতো সাফসুতরো করে স্কুল খোলা নিয়ে সংশয়।
প্রকৃতির ক্যানভাসে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মণীশ মিত্রের দেবী মঙ্গলকাব্য
পুজোর সময় পুরসভার গাফিলতির ফলেই কলকাতায় ডেঙ্গু সংক্রমণের বিপদ বাড়ল?