ইতিহাস অনেক সময় বড় নির্মম রসিকতা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের হাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ নিহত হয়। ইউক্রেন যেহেতু রাশিয়ার একেবারে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এবং তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত, তাই যুদ্ধের শুরুতেই জার্মান সেনাবাহিনী ইউক্রেন দখল করে। 1941 সালের 22 জুন যুদ্ধ শুরুর পরে সেপ্টেম্বর মাসের 18 তারিখেই জার্মানরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করে। তারপরেই হিটলারের নির্দেশে হিমলারের কুখ্যাত এসএস (SS) বাহিনীর ডেথ স্কোয়াড পৌঁছে যায় সেখানে। 29 এবং 30 সেপ্টেম্বর তারা কিয়েভের যাবতীয় ইহুদিদের (নারী, পুরুষ ও শিশু সমেত) জড়ো করে কিয়েভ শহরের উত্তর প্রান্তের এক খোলা জায়গায়। বাবি ইয়ারে (Babi Yar)। তখন সেটা ডাঙা জমি ও খাদে ভর্তি। এসএস বাহিনী তাদের সব জামাকাপড় খুলিয়ে নগ্ন করে খাদের ধারে দাঁড় করিয়ে মেশিনগান চালিয়ে হত্যা করে খাদে ফেলে দেয়। ওই দু’দিনে সেখানে অন্তত 34,000 ইহুদিকে খুন করা হয়। নাৎসিদের ইহুদিনিধন যজ্ঞের (holocaust) গ্যাস চেম্বার তখনও চালু হয়নি। মনে করা হয়, বাবি ইয়ারেই হিটলারের ইহুদি গণহত্যা পর্বের সূচনা হয়েছিল।
তার পরের দু’ বছরে সেখানে নাৎসিরা নিয়মিত গণহত্যার আসর বসিয়েছিল। আনুমানিক হিসাবে শুধু বাবি ইয়ারেই নাৎসিরা অন্তত এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। নিহতদের মধ্যে রাশিয়ান, জিপসিরাও ছিল, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠই ইহুদি। 1943 সালের সেপ্টেম্বরে জার্মান সেনাবাহিনী যখন রাশিয়া থেকে পশ্চাদপসরণ শুরু করে, তখন দ্রুত গণহত্যার প্রমাণ লোপের জন্য অন্য বন্দিদের দিয়ে মাটি খুঁড়িয়ে সব মৃতদেহ বার করে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সাক্ষী না রাখতে ওই বন্দীদেরও মেরে ফেলে। তবুও 15 জন পালাতে পেরেছিল, তাই অনেক তথ্য যুদ্ধের পরে সামনে আসে। এই বাবি ইয়ারের কথা ইলিয়া এরেনবুর্গের ‘ঝড়’ উপন্যাসে এবং আরও অনেকের লেখায় আছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে ইতিহাসের বিচিত্র পরিহাস
যুদ্ধের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কো, স্তালিনগ্রাদ (এখন ভলগোগ্রাদ), লেনিনগ্রাদ (এখন সেন্ট পিটার্সবুর্গ) সহ বিভিন্ন শহরে যুদ্ধের স্মারক গড়ে তোলা হলেও বাবি ইয়ার কিন্তু উপেক্ষিতই থেকে যায়। তার কারণ, হিটলারের মতো প্রকাশ্যে না হলেও সোভিয়েত জমানাতেও জার আমলের মতোই রাশিয়ার সমাজে প্রবল ইহুদিবিদ্বেষ ছিল। সাধারণ মানুষেরা যে দল বেঁধে ইহুদি নির্যাতন করত, তার বহু নজির রাশিয়ার ইতিহাসে আছে। গোগোলের ‘তারাস বুলবা’ উপন্যাস বা সোভিয়েত আমলের অস্ত্রভস্কির ‘How the Steel was Tempered Pogrom’ বই তার প্রমাণ।
1961 সালে সোভিয়েত সরকার বাবি ইয়ারে স্মারক তৈরির বদলে একটা স্টেডিয়াম নির্মাণের চেষ্টা করে। তখন জনপ্রিয় তরুণ কবি ইভতুশেঙ্কো ‘বাবি ইয়ার’ নামে একটা কবিতা লিখে প্রতিবাদ করেন। কবিতাটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়। খ্যাতনামা রুশ মিউজিক কমপোজার শোসতাকোভিচ ওই কবিতাতে সুরারোপ করে সেটা তাঁর 13th Symphony-choral part হিসাবে ব্যবহার করেন। এজন্য দু’জনেই সরকারের কাছে ভর্ৎসিত হন। অবশেষে 1974 সালে সেখানে একটা 50 ফুট উঁচু স্মৃতিস্মারক বসানো হয়। কিন্তু ইহুদিরা অনুল্লিখিতই থেকে যায়। 1991 সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে ইউক্রেন স্বাধীন হলে তখন সেই স্মারকের গায়ে ইহুদিদের পরিচয় উৎকীর্ণ করা হয়।
এখন টিভিতে দেখছি রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণে সেই বাবি ইয়ার স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গণের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত। কিয়েভের প্রধান টিভি টাওয়ার রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাতে ভেঙে পড়েছে। তার পাশেই বাবি ইয়ার। সেখানেও গোলা পড়ে একটা বন্ধ মিউজিয়ম ও সিনাগগ ক্ষতিগ্রস্ত।
খোদ রাজধানীর বহু জায়গাতেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে
CAA-এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন আর পাঁচটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মত নয়। এই লড়াই সংবিধান বাঁচানোর লড়াই
কৃষিজ পণ্যের পাইকারি বাজারও এখন বন্ধ। ফলে, চাষি তাঁর ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না।
তীজন বাঈ ও তাঁর উত্তরসূরী সীমা ঘোষের পাণ্ডবাণী মহাভারতের গল্পই বলে
বলশেভিক বিপ্লবের পর ধর্মের পীড়নের ইতিহাসের চাকা ঘুরে গিয়ে এখন ধর্মকে ব্যবহার করেই রুশজাতীয়তাবাদউস্ক
করোনা মহামারীর সুবাদে ভারতের শহর ও গ্রামের মানুষ নতুন আর একটা কথার সঙ্গে পরিচিত হল - লক ডাউন।