দেশ জুড়ে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গণ বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হচ্ছে। প্রতিবাদের প্রধান কারণ, এই আইন দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র পাল্টে দিয়ে বকলমে একটা তথাকথিত হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির পথে নিশ্চিত পদক্ষেপ। একইসঙ্গে নতুন এই আইনের মূল ভিত্তিই একটি ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষভাব না থেকে, ইসলাম বিদ্বেষ থেকে। এতে শুধু দেশের ২০ কোটি মুসলমানরাই আহত হননি, বহু হিন্দু, খ্রিষ্টান, জৈন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানুষও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন দেশের নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্রের ছাত্র, গবেষক, শিক্ষকরা। ইউরোপ আমেরিকার বহু শহরের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ও সমাজকর্মীরা প্রতিবাদে সোচ্চার। আজ রাজধানী দিল্লিসহ গোটা দেশে বহু শহরে মানুষ রাস্তায় নেমেছে প্রতিবাদ জানাতে।
অসমে এই আইনের বিরুদ্ধে আগেই আগুন জ্বলেছে, তা এখনও নেভার লক্ষণ নেই। তাদের দাবি অবশ্য এই আইনের বলে অসমে বহিরাগত হিন্দু ও অন্যদেরও প্রবেশ করতে দিলে চলবেনা। সরকার গন্ডগোল থামাতে সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করেছে, ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ করেছে। সবমিলিয়ে আমরা সেখানে কাশ্মীরেরই পুনরাবৃত্তি দেখছি। মাত্র একদিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জোর গলায় বলতে শুনেছি, গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিবাদ তো হবেই। কিন্তু সরকারের এই কথা যে প্রকৃত মনোভাবের প্রতিফলন নয়, তা আজকের বিভিন্ন দমন-পীড়ন মূলক ব্যবস্থা থেকেই প্রমাণিত। গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে সভা, মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ। কর্নাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুতে জায়গায় জায়গায় ১৪৪ ধারা। খোদ রাজধানীর বহু জায়গাতেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ ও আধা সামরিকবাহিনী বন্দুক উঁচিয়ে রয়েছে। তারা যে নিছক কাঠপুতুল হয়ে থাকতে আসেনি,তার প্রমাণ কদিন আগেই দিল্লির জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড়ের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উপর নৃশংস হামলায় পাওয়া গেছে। আজ বহু বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ব্যাঙ্গালুরুতে রামচন্দ্র গুহের মতো ইতিহাসবিদ এবং দিল্লিতে যোগেন্দ্র যাদবের মতো পরিচিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীও রয়েছেন। গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে ও অন্যত্র বিক্ষোভ সহিংস হলেও পরে অহিংস প্রতিবাদই প্রধান ধারা হয়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও সরকারের কাজে বোঝা যাচ্ছে, অমিত শাহের ওসব নেহাৎ কথার কথা। সরকার চরম অসহিষ্ণু। তারা বিরুদ্ধ মত শুনতে মোটেই আগ্রহী নয়। তাই ব্রিটিশ শাসকের মতোই স্বাধীন দেশের সরকারও এ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি, নাগরিক আইন লাগু করতে দেবেন না বলে ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথে নেমেছেন। শিল্পী সাহিত্যিক সমাজকর্মীরাও পিছিয়ে নেই। বাম ও কংগ্রেস রাস্তায় নেমেছে। সাধারণ মানুষও যোগ দিচ্ছেন। অর্থাৎ সংসদে সংখ্যাধিক্যের জোরে বিজেপি সরকার যখন সংবিধানকেই লঙ্ঘণ করে চলেছে, তখন প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ করবে, এটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই হচ্ছে। গণতন্ত্র মানে যে শুধুই কিছু সংখ্যা এবং আইনসভায় বহুমত থাকার জোরে যা খুশি করা যায় না, এই প্রতিবাদ আন্দোলন সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আচরণের সঙ্গে অনেকেই ১৯২০-৩০ এর দশকের জার্মানির হিটলারের কার্যকলাপের সাদৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে আইন করে ইহুদিদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া দিয়ে শুরু করে শেষ হয়েছিল ৬০ লক্ষ ইহুদি নিধন যজ্ঞের মাধ্যমে। এখানে বিজেপি সরকারও মুসলমান বিদ্বেষকে সেভাবেই আইনি প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে আটক করা হয়েছে। আরও আটক করার জন্য রাজ্যে রাজ্যে তৈরি হচ্ছে ডিটেনশন সেন্টার। অসমের গোয়লপাড়া জেলায় তৈরি হচ্ছে দেশের মধ্যে বৃহত্তম ডিটেনশন সেন্টার। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স রিপোর্ট করেছে, এদের অনেকেরই নাম বাদ গেছে এনআরসি তালিকা থেকে। এদের আশঙ্কা, আগামী দিনে এদেরও আটক হতে হবে নিজের হাতে তৈরি বন্দীশালায়। ইতিহাস বলছে, জার্মানির কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা বন্দীদের মৃতদেহ কবর দিতে ট্রেঞ্চ খোঁড়ার কাজ দেওয়া হত আর একদল বন্দীকে। অবধারিতভাবে পরে তাদেরও ওইভাবে মেরে কবর দেওয়া হত। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলে গোয়লপাড়ার ডিটেনশন সেন্টারের অনাগরিক শ্রমিকদের আশঙ্কা অমূলক নাও হতে পারে।
এই সমূহ সামাজিক রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষের একজন গান্ধী, একজন রবীন্দ্রনাথের বড্ড প্রয়োজন ছিল। তাঁদের অবর্তমানে এখন অনেক মানুষের উপর দায়িত্ব বর্তিয়েছে তাঁদের উত্তরাধিকার বহন করার। সেই দায়িত্ব যৌথভাবে ভারতের মানুষ পালন করতে পারল কিনা, ইতিহাস তার বিচার করবে। আইন অমান্য আন্দোলন ও কারাবরণ তার প্রথম ধাপ। যেতে হবে অনেক অনেক পথ।
কৃষিজ পণ্যের পাইকারি বাজারও এখন বন্ধ। ফলে, চাষি তাঁর ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না।
বাম কংগ্রেস আইএসএফ মোর্চার সমাবেশে মানুষের রাজনৈতিক দাবি শোনা গেল না।
সল্টলেক, লেকটাউন প্রভৃতি উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এলাকা বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত। ছেলে মেয়েরা বিদেশে
দলের ভিতরকার সমালোচনা ও বিরোধী স্বরকে গুরুত্ব দিতে হবে বামপন্থার নতুন দিশার সন্ধানে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাৎসি বাহিনীর ইহুদি গণহত্যা শুরু হয়েছিল ইউক্রেনের এই বাবি ইয়ারেই!
ইতিহাসের পুরনো ক্ষত বাঙালি ভদ্রলোকদের বিজেপি-প্রেমী করে তুলেছে।