×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • প্রহরীর গুলিতে ভোটারের হত্যা গণতন্ত্রের লজ্জা

    বিতান ঘোষ | 13-04-2021

    প্রতীকী ছবি।

    চলো চলো চলো সবে, ভোট দিতে যেতে হবে।' ভোটদানে উৎসাহ বাড়াতে এমনই আবেদন জানিয়ে টেলিভিশন ও রেডিওতে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জোড়পাটকিতে গত 10 এপ্রিল যা ঘটে গেল, তারপর কি সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে কমিশনের এই আবেদনে সাড়া দিতে পারবে? এই প্রশ্ন কিন্তু জনমানসে উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্নটা আরও জোরালো হচ্ছে, কারণ এই ঘটনায় উপযুক্ত তদন্ত করে, ভোটারদের অভয় দেওয়া দূরস্থান, নির্বাচন কমিশন যেভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, তা নজিরবিহীন

     



    শীতলকুচিতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার পরতে পরতে পরস্পরবিরোধিতা দৃশ্যতই স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর নির্বাচন সদনে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের কোনও মিল নেই। বিবেক দুবের পাঠানো রিপোর্টে বলা হচ্ছে, জনৈক কিশোর মৃণাল হক ভোটদানের লাইনে অসুস্থ হয়ে পড়লে, আশেপাশের মানুষরা দৌড়ে আসেন এবং তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। সেইসময় নাকি সিআইএসএফ জওয়ানরা অসুস্থ কিশোরকে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাষাগত সমস্যা থেকে একটা ভুল বোঝাবুঝি হওয়ায় গ্রামবাসীরা সিআইএসএফ জওয়ানদের ঘেরাও করেন, তাই তাঁরাও পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হন। কিন্তু মাথাভাঙা হাসপাতালে শুয়ে আহত মৃণাল হক যন্ত্রণাকাতর মুখে সম্পূর্ণ অন্য বিবরণ দিল। তার কথায় গত 10 এপ্রিল সকালে স্থানীয় বাজারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকরা তাকে বিনা কারণে মারধর করে। সে বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করলেও, উল্টোদিকের কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। গ্রামের মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন। মৃণাল হকের পরিবারেরও দাবি, কেউ কেন্দ্রীয় পুলিশকে ঘেরাও বা মারধর করেনি। সকলেই প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। আচমকাই জনতার বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায় কেন্দ্রের পুলিশ

     



    তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রতিটি ভোটদান কেন্দ্রে নিরবিচ্ছিন্ন ওয়েবকাস্টিং-এর বন্দোবস্ত থাকলেও, শীতলকুচির সংশ্লিষ্ট বুথের কোনও ভিডিও ফুটেজ এখনও অবধি পাওয়া যায়নি। কিন্তু কমিশনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে যে, গ্রামবাসীরা জওয়ানদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই দাবির সপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি কমিশন। এখন প্রশ্ন হল, বুকে গুলি না করে অন্য কোনও উপায়ে কি বিক্ষোভরত জনতাকে শান্ত করা যেত না? এই প্রসঙ্গে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং একদা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার জহর সরকার বলছিলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন একটা ঘটনা। দীর্ঘকাল ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোনও অবস্থাতেই সাধারণ নাগরিকের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয় না। শীতলকুচির ক্ষেত্রেও সিআইএসএফ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে বা অন্য কোনও উপায়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পারত।' সাংবাদিক রজত রায় অবশ্য পুরো বিষয়টিকেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডহিসাবে দেখছেন। তাঁর মতে, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে যাদের রাখা হয়েছে, তারা অতীতে সন্ত্রাসদমন অভিযানে নিযুক্ত ছিলেন। তাই নিরস্ত্র জনতাকে শান্ত করার কৌশল তাদের জানা নেই।তাঁর আরও দাবি, ‘নির্বাচন কমিশন বিশেষ একটি দলের পক্ষে কাজ করছে। শীতলকুচির ঘটনার পরও যেভাবে একটি দলের নেতারা আরও শীতলকুচি করার কথা বলছেন, তাতে সাধারণ নাগরিক ভোটদানে উৎসাহ হারাবেন। অথচ এমন লাগামহীন ভীতিপ্রদর্শনের পরেও কমিশনের নীরবতা আমাদের অনেককেই অবাক করছে।'

     



    আইনজীবী তথা সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও মনে করছেন, সিআইএসএফ আধিকারিকরা এভাবে গুলি চালিয়ে অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক কাজ করেছেন। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘বিজেপি এবং তৃণমূল— এই দু'টি দল এবং দু'টি দলের প্রধান দুই নেতানেত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখছেন, তাতেই রাজ্যে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে।

     



    শীতলকুচি-কাণ্ডে যেভাবে নিহতদের ধর্মপরিচয় নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি শুরু হয়েছে, তাতেও প্রমাদ গুনছেন অনেকে। শীতলকুচি থেকে প্রায় 20 কিলোমিটার দূরের একটি বুথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনাকে শীতলকুচির সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ইতিমধ্যেই নিহতদের দুষ্টু ছেলেবলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।' বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর ইঙ্গিত রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষদের দিকে। কিন্তু, এতে কি সংখ্যালঘু মানুষদের প্রকারান্তরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না? এরপর এই মানুষগুলোকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা না দিতে পারলে, কমিশন কি আর সবাই মিলে ভোট দেওয়া’-র আবেদন করতে পারবে?


    বিতান ঘোষ - এর অন্যান্য লেখা


    এইসব মানুষগুলোর সুরাহা করে দিতে দেশের ‘অর্থমন্ত্রী' নামক এক চরিত্র তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেবেন বলছেন।

    তাঁর মুখে আমরা 'শুনে' চমকে গেল লোকে, করোনা কাল কেটে গেলেও কি থাকবে এই বিনয়?

    শিল্পী মাত্রেই সংশয়ী, সংশয়ী হওয়া মানেই পরশ্রীকাতর হওয়া নয়

    বাপের বাড়ির হালফিলের খবরে বিচলিত মা দুর্গা।

    এই সঙ্কটে দেশের তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা কে, কেমন ভূমিকা নিচ্ছেন

    কাজের সন্ধানে শহরে চলে আসা অপুরা গত সাত-আট মাসে গ্রামে ফিরতে পারেনি। লোকাল ট্রেনে আমার সঙ্গী হল তারা

    প্রহরীর গুলিতে ভোটারের হত্যা গণতন্ত্রের লজ্জা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested