বাংলায় ভোটের বাদ্যি বেজে উঠেছে। বাম-ডান সব পক্ষই তাদের মতো করে রাজনৈতিক অস্ত্রে শান দিচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই রাজ্য রাজনীতির বিরোধী পরিসরটি দখল করে নিয়েছে বিজেপি। শুধু রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ক্রমে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে বিজেপি এবং সংঘ প্রভাবিত বিভিন্ন শাখা সংগঠন। রাজ্যের বিজেপি বিরোধী দলগুলি রাজনৈতিক ভাবে বিজেপিকে মোকাবিলা করার কথা বলছে। তবে এ ব্যাপারে তারা কতটা আন্তরিক, বেশ কিছু ঘটনাক্রমে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়ে একটি নাগরিক মঞ্চ গড়ে তোলার প্রস্তাব গৃহীত হল সম্প্রতি। 4 জানুয়ারি, উত্তর কলকাতার ভারত সভা হলে প্রায় 300 জন মানুষের উপস্থিতিতে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় না থেকে, বিজেপি বিরোধী একটি বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তোলাই মূল উদ্দেশ্য ছিল উদ্যোক্তাদের। ভর্তি সভাঘরে সর্বসম্মতিক্রমে পথচলা শুরু করল বিজেপি বিরোধী এই অরাজনৈতিক মঞ্চ।
এই মঞ্চের অভিভাবক হিসাবে সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক আন্দোলনের কর্মী, অধ্যাপক সুজাত ভদ্র, সমাজকর্মী কুশল দেবনাথ, কস্তুরী বসু প্রমুখ। সভাপতিমণ্ডলীর তরফে সভার শুরুতেই খসড়া প্রস্তাবনা এবং মঞ্চের দাবি সনদ পাঠ করা হয়। সেগুলি লিখিত আকারে সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যেও বিতরণ করা হয়। সভার উদ্যোক্তারা যেহেতু প্রথম থেকেই দাবি করেছিলেন, খোলামেলা পরিবেশে, গণতান্ত্রিক উপায়ে মঞ্চের পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারিত হবে, সেহেতু খসড়া প্রস্তাবনা নিয়ে বহুক্ষণ আলাপ-আলোচনা চলে। সভায় উপস্থিত প্রত্যেক সদস্যই অবশ্য মঞ্চের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের প্রশ্নে সহমত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন একটি মঞ্চ— যা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিজেপি এবং সঙ্ঘের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে— গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন।
এই মঞ্চের পোশাকি নাম রাখা হয়েছে ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’। ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে মঞ্চের স্লোগান হবে— ‘নো ভোট টু বিজেপি’। বিজেপি এবং সঙ্ঘের রাজনীতির বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে জনতার দোরে দোরে যাবেন মঞ্চের সদস্যরা। আপাতত স্থির হয়েছে, আগামী 10 মার্চ, কলকাতায় মঞ্চের তরফে একটি বড় কর্মসূচি পালিত হবে। এ ছাড়া জেলায় জেলায়, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কো-অর্ডিনেশন কমিটি তৈরি করে, বিজেপি বিরোধী বার্তা ভোটমুখী রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
মঞ্চের সাংগঠনিক গঠনশৈলিতেও গণতান্ত্রিক আবহ বজায় রাখা হয়েছে। সভায় উপস্থিত অনেকেই খসড়া প্রস্তাবনা এবং দাবিসনদের বেশ কিছু অংশে পরিমার্জন এবং সংশোধনের প্রস্তাব রেখেছেন। যেমন, ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দটি দিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বিজেপির বিপদ সম্পর্কে কতটা অবহিত করা যাবে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সভাপতিমণ্ডলীর তরফে সুজাত ভদ্র অবশ্য তাঁর জবাবি বক্তব্যে জানিয়েছেন, ‘মঞ্চ সচেতনভাবেই বিজেপি শব্দের আগে ফ্যাসিস্ট শব্দটি ব্যবহার করছে। কারণ ভারতের আর কোনও দলের প্রতি এই খারাপ বিশেষণটি ব্যবহার করা চলে না। অন্যান্য দলগুলির অনেক দোষগুণ থাকলেও, তাদের তুলনায় বিজেপি যে কতটা ভয়ানক— তা বোঝাতেই মঞ্চের এই পরিকল্পনা।' কিন্তু ‘নো ভোট টু বিজেপি’ মানে তো বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আর্জি জানানো। তবে মঞ্চের সদস্যরা মানুষকে কাকে ভোট দিতে বলবেন? এ ব্যাপারে মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক, চিত্রপরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের মত হল, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে যে অঞ্চলে যে দল শক্তিশালী, সেই দলকে ভোট দেওয়ার কথা বলা যেতে পারে।' তবে এ বিষয়ে আগামী কয়েকদিনেই মঞ্চের তরফে সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
সভায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাগরিক আন্দোলন, সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত হয়েছিলেন। বীরভূম থেকে আসা বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সমীরুল ইসলাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে গোটা বীরভূম জেলায় এই বিজেপি-বিরোধী প্রচারকে ছড়িয়ে দেবেন। জাতীয় বাংলা সম্মেলনের তরফে অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার কথা জানান। অনেক বক্তার গলাতেই আক্ষেপের স্বর, রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ বিজেপির রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। অন্যদিকে বিরোধী বাম-কংগ্রেসও এখন ছত্রভঙ্গ। এই অবস্থায় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষকে বিজেপির বিরুদ্ধে এক হওয়ার ডাক দিয়েছে মঞ্চ। মঞ্চের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কস্তুরী বসু জানালেন, ‘বিজেপিকে শুধু বাংলায় ক্ষমতা দখল থেকে আটকালেই চলবে না, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হওয়া থেকেও আটকাতে হবে।' তাঁর আশঙ্কা, রাজ্যের দ্বিতীয় প্রধান দল হিসাবে উঠে এলেও বিজেপি উত্তর ভারতের মতো এখানেও দাঙ্গার রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক বিভাজনে মদত জোগাতে পারে।
কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের তরফে সভা ডাকা না হলেও, যে ভাবে এত মানুষ গত 4 জানুয়ারি ভারত সভা হলে এই অরাজনৈতিক মঞ্চের ডাকে সমবেত হয়েছিলেন, তাতে আপ্লুত সভার উদ্যোক্তারা। তাঁরা প্রত্যয়ী, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষ সমবেত হচ্ছেন।' তবে তাঁরা এখানেই থামছেন না। আগামী 6 মার্চ, বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের পরবর্তী কর্মসূচি এবং অবস্থান স্পষ্ট করতে চলেছেন মঞ্চের সদস্যরা। শহরভিত্তিক কর্মসূচিতে আবদ্ধ না থেকে এবার গ্রামেও পৌঁছতে চায় এই মঞ্চ। অরাজনৈতিক এই মঞ্চের রাজনৈতিক দাবি (ক্ষেত্রবিশেষে অনুরোধ) একটাই। ‘No Vote To BJP—বিজেপিকে একটিও ভোট নয়।'
জীবনের সায়াহ্নে এসে পরিচিত মানুষদের শঠতা, কৃতঘ্নতায় আঘাত পেয়েছিলেন বিদ্যাসাগর।
সেনেগালকে সারা বিশ্ব চিনত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, ক্ষুধাপীড়িত দেশ বলে
বাপের বাড়ির হালফিলের খবরে বিচলিত মা দুর্গা।
দুর্বল, প্রায় অনিচ্ছুক নেতৃত্বের পক্ষে নানা রাজ্যের সম্ভাবনাময় তরুণ নেতাদের কংগ্রেসে ধরে রাখা কঠিন।
শিল্পী মাত্রেই সংশয়ী, সংশয়ী হওয়া মানেই পরশ্রীকাতর হওয়া নয়
এ দেশে যারা এখনও হিন্দু-মুসলিম মিলনের কথা বলে তারাই সিকিউলার। এটা সেক্যুলারের অপভ্রংশ রূপ।