×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • জাতীয় শিক্ষানীতি 2 : সুরঞ্জন দাস

    4thPillars ব্যুরো | 05-08-2020

    জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) 2020 নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। এই শিক্ষানীতিতে কতটা উপকৃত হবে পড়ুয়ারা? বিশ্বের শিক্ষা মানচিত্রে কি উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিতে পারবে ভারত? জনপরিসরে এই সংক্রান্ত যে প্রশ্নগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো নিয়েই  www.4thPillars.com ধারাবাহিক আলোচনা করেছে। মঙ্গলবার আলোচনার দ্বিতীয় দিনে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অধ্যাপক সুরঞ্জন দাস। তিনি তাঁর বক্তব্যে নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে যেমন কিছু আশার কথা শুনিয়েছেন, পাশাপাশি কিছু আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেছেন।



    1) নতুন শিক্ষানীতিতে মার্কিনি ধাঁচের স্পষ্ট ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। আমেরিকায় 4 বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রমের পর পিএইচডি কিংবা গবেষণার সুযোগ দেওয়া হয়। দু'বছরের এমফিল আসলে ব্রিটিশ শিক্ষানীতির অঙ্গ। তবে, ব্রিটিশ বা মার্কিন— যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক, পঠনপাঠন যেন ঠিক হয়।

    2) 4 বছর ব্যাচেলার্স ডিগ্রির পর পিএইচডি করতে গেলে মাঝে 2 বছরের ইনটেনসিভ কোর্স রাখা হোক। নইলে গবেষণা করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়বে ছাত্রছাত্রীরা।

    3) সেমেস্টার সিস্টেমের তুলনায় অ্যানুয়াল সিস্টেমে ছাত্রছাত্রীরা বেশি পড়ত। গভীরভাবে কোনও বিষয়কে জানতে পারত।

    4) চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই যারা কোর্সটি থেকে বেরিয়ে আসবে, তাদের যে শংসাপত্র দেওয়া হবে, তার কতটা মূল্য থাকবে?

    5) প্রান্তিক স্তরের যে সমস্ত পড়ুয়া জীবনে দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, তাদেরও কিন্তু এবার স্নাতক স্তরে অতিরিক্ত এক বছর পড়াশোনা করতে হবে। এতে তারা অসুবিধায় পড়বে না তো?

    6) অনার্স থাকবে নাকি মার্কিন ধাঁচেই মেজর এবং মাইনর হিসাবে কোর্সগুলিকে ভাগ করা হবে, প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে তা নিয়েও।

    7) চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রমের বাইরেও অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানকে 5 বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্স করাবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই অসামঞ্জস্যে বিভ্রান্তি বাড়তে পারে।

    8) কোভিড মহামারীর এই পরিস্থিতিতে এখনই এই নীতি রূপায়ন করার মতো পরিকাঠামো নেই।

    9) লিবেরাল আর্টস এবং বেসিক সায়েন্সের সমন্বয়ে যে মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেম গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে তা ইতিবাচক বলেই মনে হয়েছে।

    10) নয়া যে শিক্ষা কাঠামোর কথা বলা হচ্ছে, তা যথার্থ ভাবে রূপায়ণ করা না গেলে, কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা বাড়তে পারে। নীতিশিক্ষা আয়োগের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সেটা কীভাবে গঠিত হবে, কারা তার সদস্য হবেন, এসব বলা হয়নি। ফলে ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে।

    11) নতুন শিক্ষানীতিতে যশপাল কমিটির অনেকগুলি প্রস্তাবকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। একটিই নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে উচ্চশিক্ষার ভার দেওয়া হচ্ছে। একক সংস্থা ভাল, কিন্তু দেখতে হবে বহুমাত্রিকতা যেন লঙ্ঘিত না হয়।

    12) দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান এবং পরিকাঠামো সমান নয়। তাই, দিল্লি থেকে সর্বভারতীয় কোনও নীতি নির্ধারিত হতে পারে না।

    13) নতুন নীতিতে ভাষা শিক্ষার সুযোগ আছে। কিন্তু ভাষার মাধ্যম হিসাবে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে ইংরাজি মাধ্যম স্কুলগুলো যাবে কোথায়? সরকার পোষিত বিদ্যালয় এবং ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলির পাঠ্যক্রম কি আলাদা হবে?

    14) বুনিয়াদি স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান ভাল উদ্যোগ। কিন্তু, উচ্চশিক্ষাতেও মাতৃভাষায় জোর দিলে পড়ুয়াদের মুশকিল। কারণ, অধিকাংশ বই, জার্নালই ইংরাজি ভাষায় লেখা। ভিয়েতনামের মতো ব্যাপকভাবে অনুবাদ প্রক্রিয়া না করে, মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।

    15) মাল্টিডিসিপ্লিনারি কিংবা একক বিষয়বস্তু নিয়ে চর্চা করা প্রতিষ্ঠান— দু'য়েরই প্রয়োজনীয়তা আছে।

    16) বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দরজা খুলে দিয়ে অতীতে কোনও লাভ হয়নি। মাথায় রাখতে হবে তারাও ব্যবসায়িক স্বার্থে এই দেশে আসবে। তাছাড়া হার্ভার্ড আমেরিকা আর হার্ভাড ইন্ডিয়ার গুরুত্ব কি সমান হবে?

    17) সরকারি স্কুলের ক্রম অবনতির জন্যই বেসরকারি স্কুলগুলোর এই রমরমা। বেসরকারি স্কুলগুলো এখন ভাল পারফর্ম করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধিকার দিতে হবে, ক্ষমতা দিতে হবে, তাদের পরিকাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে।

    18) একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই যে, পড়ুয়াদের বাজার অর্থনীতির উপযোগী করে তোলার জন্যই কি উচ্চশিক্ষা? নাকি বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং তার সমাধানসূত্র খুঁজে বার করার জন্য উচ্চশিক্ষা? এটা ভেবে দেখা উচিত।

    19) নয়া শিক্ষানীতিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের মান অনুসারে 3 ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। কিন্তু এতে প্রান্তিক কলেজগুলো আরও প্রান্তিক অবস্থায় যাবে। ইতিমধ্যেই সুনাম অর্জন করা প্রতিষ্ঠানগুলি আরও উন্নতি করবে। এতে বৈষম্য বাড়বে।

    20) সার্বিকভাবে এই নয়া নীতির কিছু ইতিবাচক দিক আছে। তবে তার যথাযথ রূপায়ণ করতে হবে। অনেকগুলো প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। যেমন শিক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটিতে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব কি থাকবে? তবে 34 বছর পর যে শিক্ষানীতি নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবা হচ্ছে, জনপরিসরে এটা নিয়ে চর্চা হচ্ছে— এটা একটা ভাল দিক।

     


    4thpillars ব্যুরো - এর অন্যান্য লেখা


    সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই শাস্তি পেতে হচ্ছে। বিশেষ উদ্দেশ্য থেকেই ইউএপিএ আইনে বদল আনা হয়েছে।

    কলকাতার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের চোখে কেমন সেই লকডাউন চিত্র, আসুন দেখে নেওয়া যাক।

    লকডাউন আর আনলকের তামাশার মানেটা কী?

    সর্বভারতীয় কৃষক আন্দোলনের নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করছেন, ভোটে তার কী প্রভাব পড়তে পারে?

    পরিবেশ রক্ষা করতে হলে তার অঙ্গ মানুষকেও বাঁচতে হবে।

    পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফা ভোটের দিনই বাংলাদেশে মন্দিরে মন্দিরে পূজারত মোদী।

    জাতীয় শিক্ষানীতি 2 : সুরঞ্জন দাস-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested