×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • সৌধ, স্থাপত্য এবং ইতিহাস: হিন্দুত্বের অস্ত্রাগারে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তীব্র করার অস্ত্র

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 21-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    জ্ঞানবাপী ঘটনায় ভিডিওগ্রাফি সমীক্ষার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে তেহখানার স্তম্ভে ত্রিশূল, পদ্মফুল, ইত্যাদি খোদাই করা আছে। ওজুখানার পুকুরে যেখানে শিবলিঙ্গ পাওয়া গিয়েছে, মতান্তরে ফোয়ারা আছে অর্থাৎ নজরদারি চলছে যেখানে তার উত্তর এবং পশ্চিমের দেওয়ালে পুরনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

     

    হিন্দুত্ববাদীদের মতে পদ্মফুল ইসলামিক স্থাপত্যে থাকতে পারে না। পদ্মফুল যেহেতু বিজেপির প্রতীক, তাই এটা হিন্দু ধর্মেরই চিহ্ন। মুসলিমরা এটা ব্যবহার করতে পারেন না বলেই হিন্দুত্ববাদীদের বদ্ধমূল বিশ্বাস। কিন্তু সেটা তো ঠিক নয়। 

     

    ইতিহাসবিদ এবং ইসলামিক স্থাপত্যের গবেষক সোহেল হাশমি দিল্লিতে তাঁর দেওয়া একটি বক্তৃতায় বলেছেন, ভারতের ইসলামিক স্থাপত্যে বহুল ব্যবহৃত ভারতীয় উপাদানগুলি হল পদ্ম, কল এবং আম পাতা, এছাড়াও অন্যান্য যে উপাদনগুলো ব্যবহৃত হত সর্বজনীনভাবে, তা হল দক্ষিণ ভারতীয় / আদি যন্ত্র / শক্তি চক্র এবং স্বস্তিকের ছয় কোণযুক্ত তারকা। তাই পদ্মফুল বা স্বস্তিক, কিংবা কল মানেই সেটা হিন্দুত্বের চিহ্ন এমনটা নয়।

     

    সোহেল হাশমি আরও বলেছেন, আমাদের দেশে স্থাপত্যের সঙ্গে ধর্মের রং মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। পদ্ম, ত্রিশূলাকৃতি, স্বস্তিক চিহ্ন মানেই সেটা হিন্দুদের। গম্বুজ, মিনার মানেই সেটা মুসলিমদের। এভাবে ভাগ হয় না, করাও যায় না। এটা কেবল পোস্ট কলোনিয়াল হ্যাঙওভার। সোহেল হাশমি এই বিষয়ে বলেন, আমরা হিন্দু স্থাপত্য, মুসলিম স্থাপত্য এবং ব্রিটিশ স্থাপত্য হিসেবে ভাগ করি। কিন্তু শেষটাকে খ্রিষ্টান স্থাপত্য বলি না। কেন বলি না সেটা নিয়ে ভাবিও না। এটা ব্রিটিশরা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। তারা হিন্দু মুসলিম ভাগ করে রাজত্ব করতে চেয়েছিল। তারা চলে গেছে, কিন্তু আমরা তাদের সেই তৈরি করে দেওয়া বিভেদ এখনও বয়ে চলছি। কিন্তু স্থাপত্যের বিভেদ হয় না এভাবে। কোনও চিহ্ন দেখে সেটাকে বিশেষ একটি ধর্মের বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না।

     

    আরও পড়ুন:সাম্প্রদায়িক লড়াইয়ের রণক্ষেত্র এখন কুতুব মিনার

     

    ইসলামিক আর্কিটেকচার বলে স্থাপত্যবিদ্যায় আলাদা একটা ভাগ আছে। এই ইসলামিক আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য বলতে মূলত বোঝায় সমাধি স্তম্ভ, খিলান বা তোরণ এবং মিনার বা মসজিদের চূড়া, তার সঙ্গে কিছু সূক্ষ্ম কাজ।

     

    ভারতের কুতুব মিনার যেহেতু নাম, তাই সেটাকে বদলে বিষ্ণু স্তম্ভ করার কথা তুলছে হিন্দুত্ববাদীরা। কিন্তু তারা বোধহয় ভুলে গেছে কুতুব মিনার আসলে একটি  বিজয় স্তম্ভ। ধর্মের যোগ নেই তার সঙ্গে। সোহেল হাশমির মতে, মিনার মানেই সেটা মুসলিমদের তৈরি করা, এই সরলীকরণ করার অর্থ নেই। কারণ লিনিং টাওয়ার অফ পিসাও তো একটা মিনার, কিন্তু সেটা তো মুসলিমদের তৈরি নয়, ইসলামিক স্থাপত্যও নয়। কিন্তু বিদেশের এসব স্থাপত্যের বিষয়ে আমাদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই। নিজের দেশের ইতিহাস অস্বীকার করে, তা বদলে ফেলাতেই আছে সুখ।

     

     

    ইসলামিক স্থাপত্যের উপর একটি বক্তৃতায় গবেষক এবং লেখক সোহেল হাশমি উদাহরণ দিয়ে বোঝান, আমরা আসলে ভুলে গিয়েছে স্থাপত্যের ধর্ম হয় না। বিদেশে এমন ভাবনা বা ভাগ নেই। খ্রিষ্টান স্থাপত্য, মুসলিম স্থাপত্য বলে ভেদ নেই সেখানে। আছে কেবল সময় অনুযায়ী ভাগ। আছে গথিক, নিও ক্লাসিকাল, ক্লাসিকাল স্থাপত্য। আছে দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন স্থাপত্যের ধরন, যেমন পার্সিয়ান, রাশিয়ান, স্লাভিক, পোর্তুগিজ, প্রভৃতি। অন্যদিকে রোমানরা প্রথম খিলান তৈরি করে। তারা পরপর খিলান তৈরি করে তার মাঝখান দিয়ে জলের ধারা নিয়ে আসত নদী বা কোনও উঁচু জলাশয় থেকে। গম্বুজও কিন্তু প্রথম তাদেরই বানানো। এবং প্রাক ক্যাথলিক যুগের রোমানরা কিন্তু এই সমস্ত কিছু প্রথমবার নির্মাণ করে, সেখানে ধর্মের কোনও স্পর্শ বা ভাবনা ছিল না।

     

     

    প্রথমবার ইহুদীরা গম্বুজকে ধর্মীয় কারণের জন্য ব্যবহার করে। সবার শেষে ব্যবহার করে মুসলিমরা। অর্থাৎ গম্বুজ মানেই সেটা ইসলামিক স্থাপত্য সেই ধারণা যে ভুল এখান থেকেই প্রমাণিত। পৃথিবীর সব থেকে বড় গম্বুজ হচ্ছে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা। আরেকটি গম্বুজাকৃতি স্থাপত্যের উদাহরণ হল ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হল। কিন্তু এই দু'টো স্থাপত্যকে তো ইসলামিক স্থাপত্য বলা হয় না। তাহলে ভারতের বিভিন্ন স্থাপত্যকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন কেন উঠছে বারবার?

     

    গম্বুজ যদি মুসলিমদের স্থাপত্যের অন্যতম ক্রাইটেরিয়া হয়ে থাকে তাহলে তো সব মসজিদেই সেটা থাকত। কিন্তু চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালওয়েশিয়া এমনকি আমাদের দেশের কাশ্মীর (একমাত্র হজরত বাল মসজিদ ছাড়া) কিংবা কেরলের কোনও মসজিদে গম্বুজ দেখা যায় না।

     

    সোহেল হাশমি বলেছেন, ভারতে ইসলামিক স্থাপত্যের প্রাথমিক উদাহরণগুলিতে পদ্মের মোটিফের পুনরাবৃত্তি ঘটে। কোথাও পদ্ম ফুল ফুটেছে আবার কিছু জায়গায় কুঁড়ি। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এগুলি এমন মোটিফ, যা স্থানীয় পাথরের রাজমিস্ত্রিদের দ্বারা খোদাই করা হয়েছিল, যারা স্মৃতিস্তম্ভের দরজা, স্তম্ভ এবং সোপানগুলিকে অলঙ্কৃত করার জন্য পরিচিত নকশাগুলি ব্যবহার করেছিল। সমাধি কমপ্লেক্স এবং অন্যান্য ভবনগুলিতে মোটিফটি দৃশ্যমান।

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    ভাল-খারাপ দুই’ই আছে, তবু ই-বুকেই অভ্যস্ত হচ্ছেন পাঠক

    বেহালা আর রাজ্যের দক্ষিণের অংশ আবার যুক্ত হল খাস কলকাতার সঙ্গে

    কলোরাডো নদীর জল প্রতি 1 ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে 9.3 শতাংশ কমে যাচ্ছে।

    কার্গিল যুদ্ধের নায়ক বিক্রম বাত্রার জীবনের নানান গল্প তুলে ধরেছে শের শাহ।

    ফ্লিপকার্ট জানায় যে নাগাল্যান্ড ভারতের বাইরে বলে সেখানে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব না।

    স্মরণকালের মধ্যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকায় গরম বাড়ছে নজিরবিহীনভাবে!

    সৌধ, স্থাপত্য এবং ইতিহাস: হিন্দুত্বের অস্ত্রাগারে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তীব্র করার অস্ত্র-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested