5 সেপ্টেম্বর প্রতিবাদী সাংবাদিক, সম্পাদক, অনুবাদক এবং অকুতোভয় সমাজকর্মী গৌরী লঙ্কেশের তৃতীয় প্রয়াণ দিবস। ঠিক তিন বছর আগে রাত্রি আটটায় গৌরী যখন নিজের বাড়ির সামনে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, পেছন থেকে আততায়ীর চার চারটি গুলি তাঁর শীর্ণ ও নিরীহ শরীরটাকে রক্তাক্ত ও নিথর করে দিয়েছিল। সেই কালো রাতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কর্নাটক ও দেশের সাম্প্রদায়িকতা ও অসহিষ্ণুতা বিরোধী অন্যতম এক কণ্ঠস্বর। এই হত্যার তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি হয়। কয়েক মাস বাদে তাঁরা পরশুরাম ওয়াঘমোর নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে, যিনি স্বীকার করেন যে গৌরীকে তিনিই হত্যা করেছিলেন। তিনি বলেন যে, তাঁকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসা হয় এবং বেলগাবি নামক একটি জায়গায় বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার তিনি দাবি করেন, তিনি জানতেনই না কাকে হত্যা করছেন। তাঁকে শুধু বলা হয় ধর্মকে বাঁচাতে কাউকে মারতে হবে, এক ‘দুর্জন’কে। বিশেষ তদন্তকারী দল আরও 18 জনকে গ্রেপ্তার করে এবং 9325 পাতার চার্জশিট দাখিল করে। এঁদের অনেকেই গোয়ার একটি সংগঠন ‘সনাতন সংস্থা’র সঙ্গেযুক্ত। কিন্তু আদালতে বিচার এখনও অধরা। পরশুরামের স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও এঁদের আদৌ শাস্তি হবে কিনা সেটার কোনও নিশ্চয়তা নেই। একঝাঁক দুঁদে আইনজীবী এঁদের হয়ে মামলা লড়ছেন; তাঁদের অভিযোগ এই হত্যাকাণ্ডে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে।
গৌরীর হত্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগে আরও তিনজন একই রকম প্রতিবাদী এবং অনমনীয় সমাজকর্মীকে ‘দুর্জন’ হওয়ার কারণে এক এক করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুক্তিবাদী ও লেখক নরেন্দ্র দাভোলকারকে 2013 সালে পুণেতে হত্যা করা হয়।জনপ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ও লেখক গোবিন্দ পানাসারে, 2015-র ফেব্রুয়ারি মাসে মুম্বাইয়ে খুন হন এবং প্রখ্যাত কন্নড় গবেষক ও লেখক এম.এম.কালবুর্গি পাঁচ মাস বাদে কর্ণাটকের ধারওয়ারে নিজের বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। কোনও খুনেরই এখনও কিনারা হয়নি। প্রতিটি হত্যার পর- বিশেষ করে গৌরীর- একটি বিশেষ মতবাদের বিকৃতমনস্ক মানুষদের উল্লাস, অশালীন মন্তব্য সমাজমাধ্যমে উপচে পড়ে। সেটা থেকে শুধুমাত্র আন্দাজ করা যায় কে বা কারা এই সব ঘটনায় যুক্ত।
গৌরীর জীবনে পরিষ্কার দু’টি ভাগ আছে।1985 থেকে 2000 সাল অবধি তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। সর্বভারতীয় পত্রিকা ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ও ‘সানডে’তে কাজ করেছেন, দিল্লিতে ইটিভি নিউজের চিফ অফ ব্যুরোও ছিলেন। এই সময় তাঁর লেখালেখির বিষয় ছিল মূলত সাবেকি সাংবাদিকতা। এগুলোর মধ্যে ‘সানডে’ পত্রিকায় লেখা ‘নাগরাজ: দ্য ব্যাঙ্গালোর স্ট্র্যাংলার’ রীতিমতো রোমহর্ষক। তাঁর পরিচিতদের কথায় এই সময় তিনি রাজনীতি নিয়ে অত মাথা ঘামাতেন না। 2000 সালে তাঁর পিতা পি.লঙ্কেশের মৃত্যুর কারণে তাঁর জীবন একটি নির্ণায়ক মোড় নেয়। লঙ্কেশ ছিলেন ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’র অদম্য,আপসহীন সম্পাদক এবং সাহিত্য অ্যাকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত একজন বরেণ্য লেখক। পিতার মৃত্যুর কারণে পত্রিকের দায়িত্ব রাতারাতি জ্যেষ্ঠকন্যা গৌরীর উপর বর্তায়। গৌরী তখন অনেকটাই অপ্রস্তুত; এক তো তাঁর সুপ্রতিষ্ঠিত পিতার স্থানাভাব পূরণ করা; যেটাঅনেকেই অসম্ভব মনে করেছিলেন এবং ধরেই নিয়েছিলেন যে পত্রিকে বন্ধ হয়ে যাবে! দ্বিতীয়ত কন্নড় ভাষায় তিনি ছিলেন রীতিমতো দুর্বল। স্কুল কলেজে তিনি কোনওদিনই কন্নড় গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করেননি। তাঁর নিজের কথায় ভাগ্যবশত কিংবা শিক্ষকদের করুণায় তিনি কোনওরকমে পাস করে গেছেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নিজের মাতৃভাষায় এতটাইপারদর্শী হয়ে উঠলেন যে, অন্যের লেখার প্রুফও দেখা শুরু করলেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ, সম্পাদকীয় পলিসিতে তিনি তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন তো বটেই, আরও আগ্রাসী হয়ে উঠলেন। নব্বইয়ের দশক থেকেই কর্নাটকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ডালপালা মেলতে শুরু করে। নতুন শতাব্দীর শুরুতে তা সমাজজীবনের গভীরে প্রোথিত হয়, সমাজবাদীএবং ক্ষীণকায় বাম রাজনীতি তখন প্রায় অস্তমিত।
এই পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিন পরেই তিনি উদুপির ‘অষ্ট মাধব মঠ’-এর লেনদেনের উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এই আটটি মন্দির হিন্দু ধর্মের দ্বৈত ধারার সাধক মাধাবাচার্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। একটি মন্দিরের দায়িত্বে ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী এক সাধু, যিনি আবার ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদের’ সদস্য। লেখাটি পত্রিকেতে ছাপানোর পরেই ভিএইচপি এবং বজরং দল সর্বত্র তাণ্ডব শুরু করে দেয়। বিভিন্ন স্টল থেকে তারা লঙ্কেশ পত্রিকের সাম্প্রতিক সংখ্যা বলপূর্বক কেড়ে নেয় এবং প্রকাশ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। উদুপি শহরে বজরং দল ও ভিএইচপির নেতারা সভা করে এবং পুলিশের উপস্থিতিতে এই ধরনের লেখা থেকে বিরত থাকতেপত্রিকের সম্পাদক এবং লেখকদের রীতিমতো হুমকি দেয়। প্রকাশ্যে পত্রিকের উপর হামলা এবং নেতাদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য সত্ত্বেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। লঙ্কেশ পত্রিকের উদুপির প্রতিনিধি কে.ফণীরাজ ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠান, যেটি তিনি হুবহু একই ভাবে প্রকাশিত করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই গৌরী বুঝিয়ে দেন তিনি কারও হুমকিতে ভয় পাওয়ার পাত্রী নন।
2002 থেকেই বিজেপি প্রকাশ্যে ঘোষণা করে যে তারা কর্ণাটককে গুজরাটে পরিণত করবে এবং বাবাবুদানগিরি সুফি তীর্থক্ষেত্রকে দক্ষিণের অযোধ্যা বানাবে। এই প্রচেষ্টা রুখতে সমস্ত সংগঠন মিলে ‘কর্ণাটক কমু সৌহার্দ বেদিকে’ (KKSV) নামক একটি ঐক্যমঞ্চ গড়ে তোলে। গৌরী এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। পত্রিকে-তে সংঘ পরিবারকে আক্রমণ করে নিয়মিত লেখা ছাপা হয়। এখানে এই সুফি তীর্থক্ষেত্র নিয়ে একটু বলা দরকার। হজরত দাদা হায়তআরব থেকে এখানে এসেছিলেন। শূদ্র, দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষ তাঁর মানবতাবাদী বাণীতে প্রভাবিত হন। এঁরা দত্তাত্রেয়- যাঁকে বিষ্ণুর অবতার মনে করা হয়- তাঁর ভক্ত ছিলেন। দাদা হায়তকে এঁরা দত্তাত্রেয়র অবতার মনে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাঁর হিন্দু নামকরণ করেন, বাবা বুদান। কালে কালে এই পুণ্যস্থান হিন্দু-মুসলিম উভয়েরই তীর্থক্ষেত্রহয়ে ওঠে। রানি চেন্নাম্মা যেমন এখানে অর্থদান করেছেন, টিপু সুলতানও এখানে জমি দান করেছেন। বিজেপি এখানে ব্রাহ্মণ পুরোহিত নিয়োগ এবং আশেপাশের সব গোরস্থান ধ্বংসকরার দাবি জানায়। এটিকে পুরোপুরি হিন্দু ধর্মস্থান করার জন্য তারা ব্যগ্র হয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে KKSV চিকমাগালুরে বিশাল জমায়েত করে। গৌরী সেখানে গিরিশ কারনাড সহ আরও অনেক বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যান। পুলিশের বাধা টপকে তিনি হাজারো সমর্থক নিয়ে জনসভায় সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়ে যান এবং গ্রেপ্তার হন। তিনি আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন এবং প্রবল জনপ্রিয় হয়ে যান। মাত্র দু’বছরে কেতাবি সাংবাদিক থেকে হিন্দুত্ববাদ-বিরোধী এক সক্রিয় অ্যাক্টিভিস্টে রূপান্তরিত হন গৌরী। কিন্তুধর্মনিরপেক্ষতাসম্পর্কে তাঁর ভাবনা কখনওই একমুখী ছিল না। মৌলবাদী দেওবন্দ মুসলিমদের আপত্তির কারণে সলমান রুশদিকে যখন জয়পুর সাহিত্য উৎসবে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হয় তখন‘সব মৌলবাদ ভ্রান্ত’ নামক একটি নিবন্ধে তিনি লিখছেন- “এক শ্রেণীরমোল্লা ইসলামকে অপমান করার দায়ে রুশদির মাথা দাবি করছে। আবার আরএসএস-এর কাল্লাড়কা প্রাভাকার ভাট (উপকূলীয় কর্ণাটক অঞ্চলের দক্ষিণ কন্নড়ের নেতা) বক্তব্য রাখছেন যে, মুসলিম ছেলেদের মেরে ফেলা ন্যায্য, কারণ তারা রাস্তায় হিন্দু মেয়েদের সাথে ছিনালি করে। এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎটা কী? যদি একটাকে আমরা নিন্দা করি অন্যটাও কি সমান নিন্দাযোগ্য নয়?”
2005 সালে তিনি নক্সালদের মূলধারার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। তিনি মনে করতেন তাঁদের কিছু দাবি ন্যায্য। সরকার এবং নক্সালদের মধ্যে দৌত্য করার জন্য ‘সিটিজেন্স ইনিশিয়েটিভ ফর পিস’ (CIP) গড়ে ওঠে, যাতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ভুয়ো সংঘর্ষে নক্সাল নেতা সাকেত রাজনের মৃত্যুর ফলে এই প্রচেষ্টা সাময়িক ভাবে ব্যাহত হয়। অপর দিকে তাঁর এই উদ্যোগের কারণে তাঁর ভাই ইন্দ্রজিৎ, যিনি ছিলেন পত্রিকের আইনত মালিক এবং প্রকাশক, তাঁর সঙ্গে মতবিরোধ হয়। গৌরী ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং ‘গৌরী লঙ্কেশ পত্রিকে’ শুরু করেন। 2007 সালে বিজেপি কর্ণাটকে ক্ষমতায় আসে এবং গৌরী ও তাঁর পত্রিকে হয়ে ওঠে সরকারের মুখ্য সমালোচক। পত্রিকে হয়ে ওঠে দলিত, আদিবাসী, নারী আন্দোলনের মুখপত্র। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই সব আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরাই তাঁর রিপোর্টার হয়ে ওঠেন। এর ফলে পত্রিকে কঠিন, সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িকতাও জাতপাত বিরোধী অবস্থান নেওয়ার কারণে এর জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে। নিজের অজান্তেই গৌরীর একটি বামপন্থী পরিচয় গড়ে ওঠে, যদিও তিনি কোনওদিন কোনও সংস্থার সঙ্গে সাংগঠনিক ভাবে যুক্ত হননি বা সদস্যপদও নেননি। 2013 সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরে আসার পর গৌরী এবং CIP নক্সালদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নতুন করে শুরু করে।দু’জন মাওবাদী নেতা হিংসার পথ ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। এই সাফল্য তাঁর ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করে।
2014-য় বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর গৌরীর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কণ্ঠস্বর আরও তীক্ষ্ণ ও জোরদার হয়ে ওঠে। দাদরিতেমহম্মদ আকলাখের হত্যার পর মিডিয়া যখন এটাকে প্রান্তিক, উগ্র সংগঠনের কার্যকলাপ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন গৌরী এই ঘটনার জন্য সরাসরি দলের উচ্চতম নেতৃত্বকে দায়ী করেন। 9 নভেম্বর ‘ব্যাঙ্গালোর মিরর’-এ একটি লেখায় এই নেতৃত্বকেই তিনি দাদরির নৃশংস ঘটনার মূল কুশীলব বলে অভিহিত করেন। তাঁর অভিযোগ অকাট্য; বিভিন্ন নেতানেত্রীর সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বিষাক্ত বাক্যবাণ উচ্চতম নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়। নোটবন্দি নিয়েও তাঁর সমালোচনা একইভাবে ক্ষুরধার। 30 নভেম্বর পত্রিকের একটি লেখায় তিনি লেখেন, “আদপে কালো টাকার বিরুদ্ধে মোদী কোনও সার্জিকাল স্ট্রাইক করেননি। তিনি যেটা করেছেন সেটা হচ্ছে, অসহায় মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছেন।”
কে.ফণীরাজ, যিনি তাঁর প্রিয় সম্পাদককে ‘আক্কা’ (দিদি) বলে সম্বোধন করতেন তিনি গৌরীর রূপান্তর সুন্দর ভাবে একটি বাক্যে ফুটিয়ে তোলেন। “2000 সালে কর্ণাটকে তিনি একজন সাংবাদিক হয়ে আবির্ভূত হন, 2003 সালে তিনি হয়ে ওঠেন একজন সাংবাদিক-সমাজকর্মী এবং 2015-র মধ্যে তিনি হয়ে যান সমাজকর্মী-সাংবাদিক।”এই পনেরো বছরে দেশব্যাপী তাঁর পরিচিতি গড়ে ওঠে। কানহাইয়া কুমার, জিগ্নেশ মেবানি, উমর খালিদের মতো তরুণ নেতারা তাঁর বিভিন্ন আন্দোলনে সহযোগিতা করেন। মানবাধিকার কর্মী তিস্তা শেতলওয়াড়ের সঙ্গে বিশেষ সখ্যগড়ে ওঠে তাঁর। গৌরীর হত্যার পর শোক মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা যাঁরা তাঁকে ‘আম্মা’ নামে ডাকতেন, মধ্যবয়স্করা যাঁদের কাছে তিনি ছিলেন ‘গৌরী ম্যাডাম’, তাঁরা অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিস্তা বক্তব্য রাখার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
ফণীরাজ লিখছেন, গৌরী হত্যার একদিন পরে ব্যাঙ্গালোর থেকে 600 কিমি দূরে তালেগুপ্পা নামক একটি গ্রামে পূর্ণিমা নামে চল্লিশের কাছাকাছি এক মহিলা, একা,এই হত্যার প্রতিবাদে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে গ্রামের বাজারে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখান থেকে 21 কিমি হেঁটে তিনি তালুক শহর সাগরে পৌঁছন এবং সেখানেও একাই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পূর্ণিমা আঁকতে জানেন এবং তাঁর একটি খামার আছে, যেটা থেকে তাঁর জীবিকা নির্বাহ হয়। তাঁর কোনওদিনও গৌরীর সঙ্গে দেখা হয়নি। ফণীরাজ লিখছেন, তাঁর জেদ আমাকে বিস্মিত করে। “আমি গৌরীকে জানতাম, কিন্তু পূর্ণিমা তাঁকে আরও ভাল জানত”।
-------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র:-
দ্য ওয়ে আই সি ইট— আ গৌরী লঙ্কেশ রিডার (সম্পাদনা-চন্দন গৌড়া)
আমার প্রতিবাদের ভাষা- গৌরী লঙ্কেশ (অনুবাদ- সজল রায়চৌধুরী এবং সোমনাথ গুহ)
গুজরাতে ধর্ষণকারীদের মুক্তি দিয়ে বিজেপি-র স্বাধীনতার অমৃত পান
বিচারব্যবস্থার সরকারের অনুগত হয়ে পড়াটাই ভয়ঙ্কর বিপদ
পীড়নকারী, হত্যাকারী পুলিশের শাস্তি হয়নি কোনও আমলেই।
হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিহাসের পাঠক্রমে শুধু কল্পিত সুপ্রাচীন হিন্দু অতীতেরই কথা।
দেশের গরিব মানুষের খাবার নেই, দুর্বলের অবস্থা আরও খারাপ, সেই খবর প্রকাশেও বাধা
শাসকের সদ্ভাবনা অসম্ভব, সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞাই অপ-প্রযুক্তি দমনের পথ।