×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • পিছন দিকে দ্রুত এগোচ্ছে মোদীর ভারত

    সোমনাথ গুহ | 13-05-2022

    নিজস্ব ছবি

    সদ্য প্রকাশিত 2022 সালের বিশ্ব অসাম্য রিপোর্ট (World Inequality Report) অনুযায়ী আয় ও সম্পদের নিরিখে ভারত এখন চূড়ান্ত অসাম্যের দেশ। ভারতের জনসংখ্যার নিম্নতর অর্ধাংশের আয় মোট আয়ের মাত্র 13 শতাংশ; উচ্চবিত্ত 10 শতাংশের হাতে জাতীয় আয়ের 57 শতাংশ, এবং শিখরের এক শতাংশ অতি সচ্ছল অবুর্দপতিদের কব্জায় 22 শতাংশ। 1995 থেকে 2001-এর মধ্যে মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানিদের মতো ধনীদের সম্পদ 10 শতাংশ করে প্রতি বছরে বেড়েছে। এ-তো সামান্য মাত্র! বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়ে তাঁদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ধনপতিদের থেকেও চমকপ্রদ। ফ্রান্সের World Inequality Lab সারা পৃথিবীর অগ্রগণ্য অর্থনীতিবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়ে এই World Inequality Report প্রকাশ করে। ভারতবিরোধী চক্রান্ত বলে এই ধরনের রিপোর্টকে নস্যাৎ করা যায় না।

     

    অক্সফ্যাম (Oxfam)- এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সময়ে বিদ্যুৎ সংবহন, গ্যাস সরবরাহ, জাহাজ ও বিমানবন্দর বেসরকারীকরণের কারণে গৌতম আদানির সম্পদ অভূতপূর্ব ভাবে আট গুণ বেড়েছে। ব্যক্তিগত সম্পদের বৃদ্ধির ফলস্বরূপ জাতীয় সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কল্যাণমূলক প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ অবশ্যম্ভাবী ভাবে কমছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্গতি আরও বাড়াচ্ছে। 1980 সালে ব্যক্তিগত সম্পদ জাতীয় সম্পদের তুলনায় ছিল 290 শতাংশ, যা 2020 সালে বেড়ে হয়েছে 555 শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের লাগামছাড়া বৃদ্ধি বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। নারীদের মধ্যে অসাম্যের বৃদ্ধি আরও প্রকট। শ্রম থেকে মোট জাতীয় আয়ের তা মাত্র 18 শতাংশ, বিশ্বের গড়ের প্রায় অর্ধেক! 

    অসাম্য, ক্ষুধা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সমস্ত মাপকাঠির নিরিখে ভারত অতলস্পর্শী খাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট, যা মূলত ফ্যাসিবাদের রূপে আত্মপ্রকাশ করছে, তা সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এবং সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই সংকটের সঙ্গে যে গভীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পাঁকে অনিবার্য ভাবে দেশ ও সমাজ নিমজ্জিত হচ্ছে, তা আমাদের নজরের, চেতনার আড়ালে থেকে যায়। উপরে আমরা ক্রমবর্ধমান অসাম্যের প্রকট রূপ প্রত্যক্ষ করেছি। এর সঙ্গে গত বছরের ক্ষুধার সূচক, সাম্প্রতিক প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর মার্কিন কমিশনের রিপোর্টের ওপর আলোকপাত করলে, এই সংকটের তীব্রতার কিছুটা আভাস আমরা পেতে পারি।

     

     

    ভারতের মানুষ খেতে পাচ্ছে না

    অসাম্য যে সমাজে এত প্রকট, সেখানে অবশ্যম্ভাবী ভাবে আরও বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে তলিয়ে যাবে, অধিকতর মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাবে। 2021-এর ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’ অনুযায়ী ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান 116টি দেশের মধ্যে 101 নম্বর স্থানে। আফগানিস্তান ছাড়া প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ, যেমন পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ভারতের চেয়ে উন্নত। গত কয়েক বছর ধরে এই রকমটাই হয়ে আসছে। 2019-117টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল 102, 2020-তে 107টি দেশের মধ্যে ছিল 94। এই সমীক্ষা চারটি মাপকাঠির ভিত্তিতে সমীক্ষা হয়: (1) খাদ্য বিশেষ করে ক্যালোরি-যুক্ত খাদ্যের সহজলভ্যতা। এটি খাদ্য বন্টন ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। এই মাপকাঠিটি সমস্ত বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (2) চাইল্ড ওয়েস্টিং, অর্থাৎ যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সের একটি শিশুর দৈর্ঘ্যের তুলনায় ওজন কম। (3) চাইল্ড স্টান্টিং, অর্থাৎ পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী খর্বাকৃতি। (4) শিশুমৃত্যুর হার (পাঁচ বছরের নীচে)। গত দেড় দশকে এই মাপকাঠি গুলোতে ভারত যে উন্নতি করেনি এমনটা কিন্তু নয়। যেমন 2006-এ ভারতের স্কোর ছিল 37.4, যেটা 2012-তে 28.8-এ নেমে আসে (স্কোর যত কম হবে, তত ভাল)। তারপর থেকে উন্নতি অত্যন্ত ধীর, 2021-এ স্কোর 27.5। দেখা যাচ্ছে ক্ষুধা নির্ণয় করার তিনটি কারণ হচ্ছে শিশুর স্বাস্থ্যজনিত। গর্ভবতী মায়ের যত্নের অভাবের কারণে শিশুর অকালমৃত্যু, রুগ্নতা, খর্বতা। অন্তঃসত্ত্বা মা সুষম খাদ্য, পুষ্টিকর খাদ্য পান না, বসবাসের জন্য পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পান না, যা অনিবার্য ভাবে শিশুকে জন্ম থেকে দুর্বল করে, তার বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।

    সরকারের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHs-5)-র পঞ্চম রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য রীতিমতো ভয়ঙ্কর। সেটা থেকে জানা যাচ্ছে 6 থেকে 23 মাস বয়সের মোট শিশুর 10 শতাংশ-এরও কম জন সুষম খাদ্য পায়। এই কারণে শিশুদের মধ্যে ওয়েস্টিং ও স্টান্টিংয়ের সমস্যা প্রবল। বলাই বাহুল্য সামগ্রিক ভাবে সমস্যাটা ক্ষুধার। বহু মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছচ্ছে না, পৌঁছলেও তা অপর্যাপ্ত, কিংবা যথেষ্ট পুষ্টিকর নয়।

     

    আরও পড়ুন:‘বং বং’-রা গড় বাঁচালেও ‘পাপ্পু’ সেই তিমিরেই!

     

    দারিদ্র চিরকালই ভারতবর্ষের ভূষণ।1951 থেকে 1975-এর মধ্যে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা 47 শতাংশ থেকে 56 শতাংশ হয়ে গিয়েছিল (পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাবে যাঁদের ক্রয় ক্ষমতা দু’ ডলারের কম, তাঁরা গরিব)। কিন্তু তারপর থেকে দারিদ্র কমতে থাকে, এবং 2019-এর গ্লোবাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইনডেক্স-এ দেখা যায় 2006 থেকে 2016-র মধ্যে ভারতে 27 কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার ওপরে উঠে এসেছে। তৎকালীন সময়ে গরিবির বিরুদ্ধে এরকম সাফল্য বিরল।

     

    2019 থেকে আবার ছবিটা পালটে যায়। ‘ডাউন টু আর্থ’ পত্রিকায় প্রকাশিত রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই বছর দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা ছিল জনসংখ্যার 28 শতাংশ, যা বিশ্বব্যাপী মহামারীর প্রবল ধাক্কায় 35 শতাংশে পৌঁছে যায়। গ্রামীণ ভারতে ভয়ঙ্কর সঙ্কট দেখা যায়। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসে। অসংঘটিত ক্ষেত্রে বহু মানুষ কাজ হারান, যা তাঁরা বিশ্বব্যাপী মহামারীর পরে আর ফিরে পাননি, কিংবা ফিরে পেলেও কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। ‘গাঁও কানেকশন’-এর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়ে 35 শতাংশ পরিবার বহু দিন অনাহারে থেকেছে এবং 38 শতাংশ মাঝে মধ্যে অর্ধাহারে থেকেছে। তাঁদের হিসাবে 17 শতাংশ গরিব মানুষের কোনও রেশন কার্ড নেই, যার অর্থ তাঁরা কোনও সরকারি সাহায্য পাননি। অসাম্য সূচক থেকে আমরা জানি এই একই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বিত্তশালী 1 শতাংশ মানুষের আয় এবং সম্পদ কিন্তু উল্লস্ফিত হয়েছে।

    সংখ্যালঘু দলিত ও আদিবাসীরা ক্ষুধায় বেশি কষ্ট পাচ্ছে

    তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গাঁও কানেকশনের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত থেকেছে মুসলিম, খ্রিষ্টান এবং দলিত ও আদিবাসী পরিবার। অসাম্য ও ক্ষুধার এই তীব্র প্রকোপের সময়ই গরিব মানুষের ওপর নেমে এসেছে ধর্ম, লিঙ্গ, জাতপাত ভিত্তিক নিপীড়ন। সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ প্রশাসনের পরিবর্তে হিন্দু বাহুবলী সেনাদের রাজ কায়েম হয়েছে। মুসলিম সমাজকে সমস্ত রকম ভাবে পদানত করা শুরু হয়ে গেছে।

    কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় বকলমে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেখানে মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরতে পারেন না, নানা অজুহাতে হিন্দু ধর্মস্থান ও অন্যান্য বাণিজ্য কেন্দ্রে মুসলিমদের ব্যবসা করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, হালাল মাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মসজিদে নমাজের সময় মাইক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, খোলা জায়গায় নমাজ পড়া বন্ধ করা হয়েছে, খোদ রাজধানীতে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত মুসলিমদের গণহত্যা, মুসলিম নারীদের গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীর সময় দেশ জুড়ে যা ঘটে গেল তা অভূতপূর্ব। খরগোন, জহাঙ্গিরপুরীর মতো জায়গায় গেরুয়াবাহিনী নিজেরা দাঙ্গা বাঁধাল এবং তারপর মুসলিম বাসিন্দাদের দোষী সাব্যস্ত করে বুলডোজার দিয়ে এঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল। বিশ্বব্যাপী মহামারীতে বিপর্যস্ত গরিব মানুষ রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট প্রবল পরাক্রমশালী সংঘীদের ধর্মীয় উন্মাদনার শিকার হচ্ছেন।

    রাষ্ট্র, সরকার খোলাখুলি ভাবে এঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এত মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মহাত্মা গান্ধীর নিজের শহর পোরবন্দরের 600 জন মুসলিম জেলে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য গুজরাত হাই কোর্টের অনুমতি চেয়েছে। গোসাবারা মুসলিম জেলে সমিতির অভিযোগ সরকার একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষদের কোনও সুবিধা দিচ্ছে না। লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গোসাবারা বন্দরে নোঙর করতে দেওয়া হচ্ছে না। সমিতি আবেদনে জানিয়েছে, তাঁরা কোনওদিনও রাষ্ট্রবিরোধী কোনও কাজকর্মে যুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও চূড়ান্ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

    বঞ্চনার খবর প্রকাশ করতে গেলেও নেমে আসছে রাষ্ট্রের নিপীড়ন

    এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশানাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ ভারতকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করার জন্য ‘কান্ট্রি অফ পার্টিকুলার কনসার্ন’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এই রিপোর্ট বলছে 2021 সালে ভারত সমালোচনার যাবতীয় স্বর, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এবং যাঁরা এঁদের ওপর অত্যাচারের খবর প্রকাশ্যে আনছেন তাঁদের, ইউএপিএ, রাষ্ট্রদ্রোহ ইত্যাদি নিপীড়নমূলক আইন দ্বারা দমন করছে। উদাহরণস্বরূপ তাঁরা ফাদার স্ট্যান স্বামীর বিয়োগান্তক পরিণতি ও কাশ্মীরের মানবাধিকার কর্মী খুরাম পারভেজের গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করেছেন। রিপোর্ট ইউএপিএ-র লাগামছাড়া ব্যবহার, লাভ জিহাদ ও ধর্মান্তকরণ-বিরোধী আইন কাজে লাগিয়ে যে ভাবে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। 

    কাপ্পান সিদ্দিকির কথা স্মরণ করুন। তিনি কিন্তু কোনও প্রতিবাদ করতে হাথরাস যাননি, তিনি সেখানে গিয়েছিলেন খবর সংগ্রহ করতে। অথচ তাঁকে পিএফআই-এর (পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া, এটা কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন নয়) সদস্য দেগে দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ও ইউএপিএ-তে ফাঁসিয়ে দেওয়া হল। আজ প্রায় আঠারো মাস তিনি বিনা বিচারে কারাবন্দি হয়ে আছেন।

     

    বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’ বলাটাও আজ যথেষ্ট নয়; বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েই নানা প্রশ্ন উঠছে। 2021 সালে সাংবাদিক চেন্নাকেশাভালু, অবিনাশ ঝা, মণীশ কুমার সিং, সুলভ শ্রীবাস্তব, তামিলনাড়ু, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে মদ, গাঁজা, চোরাকারবারির চক্র ফাঁস করতে গিয়ে আততায়ীর দ্বারা খুন হয়েছে। দেখা গেছে এই সময়ে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু কাশ্মীর, বিহার, ত্রিপুরা, আসামে প্রায় সর্বত্র যেখানে বিজেপি ক্ষমতায় আছে সাংবাদিক নিগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ (RSF) সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক তৈরি করেছে, তাতে ভারতের স্থান 180টি দেশের মধ্যে 1502016-য় ভারতের স্থান ছিল 133, 2021-142। রিপোর্ট জানাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর যে সব প্রভাবশালী ও বিত্তশালী পরিবারগুলি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের সঙ্গে একটা মোলায়েম আঁতাত গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুকেশ আম্বানি, যিনি 70টি মিডিয়া সংস্থার মালিক এবং যাদের সম্মিলিত দর্শক সংখ্যা 80 কোটি। আরএসএফ জানাচ্ছে, কোভিড নিয়ন্ত্রণ করার অজুহাতে সরকার ও তার বশংবদেরা “যে সব সংবাদ সংস্থা বিশ্বব্যাপী মহামারী সংক্রান্ত সরকারি ভাষ্যের বিরোধিতা করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমার গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছে।” ভারতকে তাঁরা সাংবাদিকদের জন্য অন্যতম বিপজ্জনক দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।   

    পশ্চিমের দেশগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের এই অধোগমনের সমীক্ষা/রিপোর্ট প্রকাশ করে খালাস। ‘গুজরাট ফাইলস’ খ্যাত রানা আয়ুব সরকারের আরোপিত নানা স্বেচ্ছাচারী বিধিনিষেধ টপকে ইতালির পেরুজাতে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক উৎসবে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে তথাকথিত উন্নত দেশগুলির এই ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আর যিনি আয়ুবের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, তিনি সমস্যাটাকে শুধুমাত্র সাংবাদিকতার গন্ডির মধ্যে আটকে রাখেন। পশ্চিমি দেশগুলি রিপোর্ট ছাপাবে, একটু আধটু সতর্ক করবে, ব্যাস, ওইটুকুই! ফ্যাসিবাদের ব্যাধি কিন্তু সমাজের সর্বস্তরে গ্যাংগ্রিনের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ইংরাজিতে একটা কথা আছে, IT’S NOW OR NEVER; যা কিছু করার তা অবিলম্বে করতে হবে, না হলে তা আর কোনও দিনও করা হয়ে উঠবে না।


    সোমনাথ গুহ - এর অন্যান্য লেখা


    শেষ পর্যন্ত এবারের ভোটে মুসলিম ভোট বাংলায় মমতার ঝুলিতেই যাবে।

    আইনের শাসনের চেয়ে বেশি আইন বহির্ভূত ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে।

    সরকারের থেকে জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা কৃষকের অন্যায্য দাবি নয়, হকের পাওনা

    পীড়নকারী, হত্যাকারী পুলিশের শাস্তি হয়নি কোনও আমলেই।

    UAPA প্রয়োগ করে রাষ্ট্র যে বিচারের নামে যা খুশি করতে পারে, তার উদাহরণ ভারভারা রাও

    গুজরাতে ধর্ষণকারীদের মুক্তি দিয়ে বিজেপি-র স্বাধীনতার অমৃত পান

    পিছন দিকে দ্রুত এগোচ্ছে মোদীর ভারত-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested