মডেল মাত্রেই তার আকার আছে, কিন্তু আকার থাকলেই কোনও কিছুকে মডেল বলতে হবে, এমন কিন্তু নয়। ছোটবেলায় মডেল বলতে স্কুলে ওয়ার্ক এডুকেশনের মডেল, ম্যাগাজিন কভারে ছাপানো রোল মডেল...এগুলোকেই জানতাম। আর একটু বড় হয়ে চিত্রশিল্পীর মডেল, স্মার্টফোন কিংবা ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মডেল এসব। কিন্তু এখন তো দেখছি মডেল পুরোটাই বিমূর্ত এক বিষয়। নেতা বলে দিয়েছেন, বাংলাকে গুজরাত বানাবেনই বানাবেন। কেননা, গুজরাতই নাকি ‘মডেল’। হরষে-বিষাদে আমাদের এই বাংলার ওপর মডেল চাপিয়ে দেওয়ায় অবশ্য খামতি নেই। এর আগে লন্ডন মডেল হয়েছিল। কতবার এমনও হয়েছে যে, মেলার গোল নাগরদোলা দেখে স্বপ্ন দেখেছি, হাওড়া ব্রিজের ধারে বনবন করে লন্ডন আই ঘুরে চলেছে। বাস্তবে ততটাও অবশ্য হয়নি, অন্তত এখনও অবধি। এখন আবার যা অবস্থা, হৃদি টেমসের জলে ভেসে যাওয়ার আগেই, সবরমতীর জলে ডুব দিয়ে দিল বলে!
এবার এই বাংলা যদি দেশের অন্যত্র কোথাও মডেল হয়, তাহলে কিন্তু খুব বিপদ। এই মডেলের বৈশিষ্টের মধ্যে আছে সবেতেই রাজনীতির অনুষঙ্গ টেনে আনা, কেউ মারা গেলে বা কিছু পুরস্কার টুরস্কার পেলে তার গান, কবিতা চালিয়ে পাড়া মাত করে ফেলা, আর সবকিছুতেই দলিল দস্তাবেজ পড়ে ফেলে বেশ সিধুজ্যাঠা টাইপ একখান ভাবমূর্তি তৈরি করা। হাতের কাছে কিছু না পেলে কাগজের ঠোঙা কিংবা ফুল পঞ্জিকা পড়ে ছিবড়ে করে ফেলাও এই মডেলের লোকজনের অন্যতম কাজ। তা আমিও এমন কিছু দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখলাম সামাজিক মানোন্নয়ন, পরিকাঠামো নির্মাণের মতো বেশ কিছু ক্ষেত্রে গুজরাতের গ্রাফ বাংলার থেকে অনেক বেশি ম্যাড়মেড়ে। সেই গুজরাত মডেল তবে বাংলায় আনা হবে কেন শুনি? স্ট্যাচু অফ ইউনিটির মতো ইয়াব্বড় একটা মূর্তি এখানে নেই বলে? কেন, শ্যামবাজার পাঁচমাথায় নেতাজির মূর্তি কিংবা কলেজ স্কোয়ারের বিদ্যাসাগরের মূর্তি ছোট বলে কি সেগুলো এতটাই হেলাফেলার বিষয়?
অবশ্য, সেই নেতার দিকেও যুক্তির পাল্লা কম ভারী নয়। গুজরাত মডেলের সপক্ষে মত রাখা লোকজনের প্রশ্ন, বাংলা মডেল কি দেশ চালানোর মতো একটাও সুশাসক দিতে পেরেছে? বাংলার কেউ লালকেল্লায় উঠে পাকিস্তানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে পেরেছে? পারবে কীকরে, রবীন্দ্রসন্ধ্যায় গান শুনে সময় কাটিয়ে, আর বিদেশে গিয়ে বিদেশিনীকে বিয়ে করে কয়েকটা নোবেল পেলেই কি আর দেশোদ্ধার হবে? আবার বড়াই করে বলে এটা নাকি সম্প্রীতির মাটি। কীসের আর সম্প্রীতি? এত যে ম্লেচ্ছ বিধর্মীগুলো পালে পালে, দলে দলে বাংলায় এসে ভিড় করছে, তাদের শায়েস্তা করা হবে কবে? এটাই যদি হত গুজরাত মডেল, এমন ওষুধ পড়ত যে, বেচারা কুতুবউদ্দিন আনসারিরা হাঁউমাঁউ করে কেঁদে প্রাণভিক্ষার জন্য অনুরোধ করত। গুজরাত মডেলের কুশীলবরা অবশ্য খুব দয়ালু। তাই এমন কিছু করে ক্ষমা চাইলে, আপসরফায় অবশ্যই কিছু রেহাই মিলবে। কুচক্রীরা সারাক্ষণ গুজরাত মডেলকে গাল পাড়লেই বা, উন্নয়ন বলতে দেশবাসী তো গুজরাতকেই বোঝে। এই উন্নয়নের স্রোতে নর্মদা তীরে কিছু গ্রাম ডুববে, বিদেশি অতিথির সম্মানে বস্তির সামনে পাঁচিল উঠবে, ডাংগুলি খেলতে না জানা নেতাপুত্তুরও ক্রিকেট দল নির্বাচনে আখাম্বা নাক গলাবে, বড় বড় পদে গুজরাত ক্যাডারের আমলারা বসবে। মডেল তো এমনই ফিচারস-ময় হওয়া উচিত!
মডেল কি শুধু গুজরাতেই আবদ্ধ? মডেল হিসাবে উত্তরপ্রদেশও কিন্তু এখন জোর টক্কর দিচ্ছে। ‘বাংলাকে গুজরাত বানাবো’ বলা নেতার সতীর্থই উত্তরপ্রদেশ বানানোর ডাক দিয়েছিলেন, এই কিছুকাল আগেই। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলার জন্য কোন মডেলটা বেশি জুতসই হবে, তা নিয়ে ওনাদের নিজেদের মধ্যেও দ্বিধাদন্দ্ব রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ মডেলে ওই দুমদাম এনকাউন্টার করে দেওয়ার পদ্ধতিটা বেশ জনপ্রিয়। এখানে অনেকেরই মত, আইনি ঝুটঝামেলায় না গিয়ে সোজা ‘ঠোক দো’ স্টাইলে অপরাধীকে শায়েস্তা করা হোক। তাছাড়া, এই যে শীত পড়তেই গন্ডা গন্ডা নীল-সাদা রঙা প্রমোদ উদ্যানে যুগলদের ভিড় বাড়ছে, প্রগতিশীল কবির প্রেমের দুই চরিত্রের নাম হচ্ছে আসিফ আর কমলা, এসব কতদিন সহ্য করা যায়? তাই, একটা অংশের মত, মডেল হোক উত্তরপ্রদেশই। যেখানে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়লেই মুচলেকা লিখে বিয়ে করে ফেলতে হবে আর অন্য ধর্মে প্রেম করলে...স্বয়ং যোগী বলে দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’ হয়ে যাবে।
মডেল নিয়ে আলোচনায় একটা বিষয় কিন্তু লক্ষণীয়। বাংলার সবকটা মডেলই কিন্তু পশ্চিম দিকে অবস্থিত। লন্ডন সুদূর পশ্চিম আর গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ নিকট পশ্চিম। মডেলের উদগাতারা আবার অনেকেই স্বামী বিবেকানন্দের বিশাল বড় সব অনুগামী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পয়ঃপ্রণালী সবকিছুই বিবেকানন্দর নামে বানাতে চান। তা এই বিবেকানন্দ যে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন, পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ না করতে, তা কি তারা ভুলে গেলেন, অ্যাঁ?
আমেরিকা আবারও দেখিয়ে দিল এই দেশটা যেমন জর্জ ওয়াশিংটনের, তেমনই জর্জ ফ্লয়েডেরও
সোশাল মি়ডিয়া আর রাজনীতিতে রামের একচ্ছত্র আধিপত্য় হরণ করে এবার আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণ!
সঙ্গীতের মহাকাশে ধ্রুবক হয়েই থাকবেন সন্ধ্যা-তারা।
দলের বাইরে বহু চালচোর ছিলই, ভোটের পর দেখা গেল দলের ভিতরেও বহু চালচোর আছে!
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে নেমে আসলে দু'টো মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে।
প্যালেস্টাইনে আবারও নরমেধ যজ্ঞে কতটা নজর দিতে পারবে মহামারীতে বিপর্যস্ত দুনিয়া?