×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • আহ ... ফয়েজ

    সঞ্চারী সেন | 10-01-2020

    ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ

    “অওর ভি দুখ হ্যায় জমানে মে মুহব্বত কে সিওয়া

    রাঁহতে অওর ভি হ্যাঁয় ওয়সল কী রাহত কে সিওয়া

    মুঝসে পহলী সি মুহব্বত মেরে মেহবুব না মাঙ্গ......”

    প্রেম বিনা দুনিয়ায় দুঃখ আছে আরো, মিলনের সুখ ভিন্ন হর্ষ অন্যতর,

    আমার কাছে আগের সে প্রেম চেওনা প্রিয়তমা

     

    অমৃতসরের এম এ ও (মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল) কলেজের এক লাজুক মুখচোরা অধ্যাপক ছিলেন আপনি ফয়েজ, কেন যে দুনিয়ার লোকের দুঃখদুর্দশার কথা মাথায় আনতে গেলেন! সে জন্যেই তো প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে এমন লাইন লিখতে হল! এক সাহিত্যরসিক এলিট পরিবারে জন্মে (শোনা যায় ইকবালের সাহিত্যগোষ্ঠীর অন্তর্গত ছিলেন আপনার পিতা), ইংরেজি এবং আরবিতে এম এ পাশ করে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না আপনার অথচ এ কবিতা লেখার কিছুদিন আগেই আপনি লিখেছিলেন ‘হসিনা এ খয়াল সে’ (মানসপ্রতিমা কে) নামের কবিতায়: “দাও আমায় পূরিত অধর অমল কপাল অপূর্ব দু’চোখ তোমার/ রঙের অতল গভীরে ডুবে যাই আরও একবার।”

     

    শুধু এমনটাই লিখে গেলে হয়তো খুশি হতেন অনেকেই, কিন্তু সে বান্দা আপনি নন। নরম কলমে লেখা হলেও ক্রমে বড়ই প্রতিবাদী হয়ে উঠছিল আপনার কবিতা। তবে আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই কারণ আপনি যাঁকে গুরু মানতেন, যাঁর কবিতার পংক্তি অনুসারে নিজের প্রথম বই এর নাম রেখেছিলেন ‘নকশ এ ফরিয়াদি’ বা ফরিয়াদির মুখ, সেই গালিবও তো চিরকাল চলতি হাওয়ার বিপরীতে হেঁটেছেনএ প্রসঙ্গে বলি, আপনার ‘দস্ত এ সাবা’ বা মৃদু বাতাসের হাত নামের বইটির ভূমিকায় (১৯৫২ সালে পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল জেলে বসে লেখা) আপনি বলছেন, ‘এককালে গালিব বলেছিলেন, যে সাহিত্যদৃষ্টি বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন করতে পারে না, সেটি কোনও দৃষ্টিই নয়, নিতান্তই বালখিল্য একটি বস্তু। গালিব একালে জন্মালে হয়ত তাঁকে শুনতে হত যে তিনি সাহিত্য কিংবা শিশুদের অবমাননা করেছেন।

     

    কিমাশ্চর্যম, একেবারে ঠিক ভেবেছিলেন আপনি ফয়েজ, শুধু সেকালের পাকিস্তানেই নয় একালের হিন্দুস্তানেও তো আপনাকে একই রকম অভিযোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আসলে মৌলবাদী এবং একনায়কেরা সব দেশে সব কালে একই রকম। নাৎসি আমলে ব্রেখ্টকে দেশান্তরিত হতে হয়েছিল, কমিউনিস্ট হবার ‘অভিযোগের’ কারণে চ্যাপলিনও মার্কিন মুলুক ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, আপনিও স্বদেশে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেননি। পাক সরকারের বিরোধিতার অভিযোগে দু’টি পৃথক মামলায় জেলও খেটেছেন দু’বার। তবে আপনাকে পুরোদস্তুর পাকিস্তানি বলে মানতে আপত্তি আছে, কারণ আপনার জন্ম দেশভাগের অনেক আগে, পড়াশোনার কাজ এদিকেও আপনি করেছেন।

     

    জীবনকাহিনী শুনিয়ে আপনার বিরক্তি উত্‍পাদন করব না, কিন্তু কী জানেন আমাদের অনেকের কাছে এখনও উর্দু কবিতা নিতান্তই সুরা নারী এবং নবাবী বিলাস। তাই যখন এই প্রজন্ম আপনার কবিতা সুরে গেয়ে ঘন তমসার বিরুদ্ধে লড়াই করে, আবারও নিষেধের মুখোমুখি হতে হয় আপনাকে, তখন চমকে উঠে ভাবি যাঁরা একজন স্বীকৃত বামপন্থীকে পরধর্মদ্বেষী বলে, তাঁদের ঠিক কোন বিশেষণে ভূষিত করলে ঠিক হয়। কাবার মূর্তি হিন্দু দেবদেবীর হয় কোন ঐতিহাসিক ভিত্তিতে? আর একজন কবি যা লেখেন, সেটাই কি লেখেন? তাহলে রূপকের অর্থ কী? বনলতা সেনের চোখ কী তবে কাকের বাসার মত দেখতে ছিল?

     

     অপরিসীম ক্রোধ সম্বরণ করতে আপনার সেই অনিবার্য পংক্তিগুলিরই আশ্রয় নিই-

     “কথা বলো

     ক্ষণিক হলেও অনেক এই সময়

     ভাষা শরীর মরে যাবার আগে

     সত্য আজও বেঁচে আছে বলে

    বলেই ফেলো যা কিছু আছে বলবার

     

    হম দেখেঙ্গে

    -ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ

    হম দেখেঙ্গে

    লাজিম হ্যায় কে হম ভি দেখেঙ্গে

    উয়ো দিন কে জিসকা ওয়াদা হ্যায়

    যো লোহ্ এ অজল পে লিখা হ্যায়

    জুলম র সিতম কে কোহ্ এ কিরাঁ

    রুই কী তরহ্ উড় যায়েঙ্গে

    হম্ মহকুমোঁ কে পাওঁ তলে

    যব ধরতী ধড়ধড় ধড়কেগী

    অওর অহল্ এ হুকম্ কে সর উপর

    বিজলি কড়কড় কড়কেগী

    হম দেখেঙ্গে

    যব অরজ্ এ খুদা কে কাবে সে

    সব বুত্ উঠ্ওয়ায়ে যায়েঙ্গে

    হম অহল্ এ সফা মরদুদ এ হরম

    মসনদ পে বিঠায়ে যায়েঙ্গে

    সব তাজ উছালে যায়েঙ্গে

    সব তখত গিরায়ে যায়েঙ্গে

    হম দেখেঙ্গে

    বস্ নাম রহেগা আল্লা কা

    যো গায়ব ভি হ্যায় হাজির ভি

    যো মনজর ভি হ্যায় নাজির ভি

    উঠেগা অন্ অল্ হক কা নারা

    যো ম্যায় ভি হুঁ অওর তুম ভি হো

    অওর রাজ করেগী খলক্ এ খুদা

    যো ম্যায় ভি হুঁ অওর তুম ভি হো

    হম দেখেঙ্গে

    লাজিম হ্যায় কে হম ভি দেখেঙ্গে

    হম দেখেঙ্গে !!!

     

     

    দেখবো আমরা

    (ভাষান্তর- সঞ্চারী সেন)

    দেখবো আমারা

    দেখবোই

    আমরাও দেখবো

    দেখবো সে দিন

    আমার শপথ যার

    লেখা আছে মহাকালের শিলাপটে

    সেই দিন

    উত্পীড়নের মহা গিরিরাজ

    উড়ে যাবে খড়কুটো হয়ে

    পদানত আমাদের পায়ের তলায়

    পৃথিবী হবে স্পন্দিত আর

    শাসনের মাথার ওপর

    নিক্ষিপ্ত হবে বাজ

    প্রচণ্ড গর্জনে

    তখন

    মহামহিম ঈশ্বরের বেদীমূল থেকে

    উত্পাটিত হবে মূর্তি আর

    আমরা, অমল জনগণ

    সকল পবিত্রতা হতে নির্বাসিত জনগণ

    শাসনভার নেব হাতে

    যখন সব মুকুট পড়বে খসে আর

    সকল সিংহাসন হবে চূর্ণ

    আমরা দেখবো যখন

    রইব শুধু ঈশ্বর

    অপ্রকাশ্য ও প্রকাশমান ঈশ্বর

    দৃশ্য ও দর্শক ঈশ্বর

    মন্দ্রিত হবে ধ্বনি

    সোহং, সে আমি

    আমি সত্য

    সে আমি সে তুমিও

    সে সম্রাট অমৃতের সন্তান

    সে আমি সে তুমিও


    দেখবো আমরা দেখবোই আমরাও

    দেখবো !!!

     


    সঞ্চারী সেন - এর অন্যান্য লেখা


    প্রেম তা সে যে রূপেই হোক, কেবলমাত্র বাঁচাতে পারে এই দেশকে। ঋষি তাঁর অন্তিম ট্যুইটে এমন কথাই লিখেছিলে

    সত্যি এবারে চৈত্র বড়ই অবহেলায় গেল।

    শাসন, শুধু শাসনই। দেশভক্ত-দেশদ্রোহী, হিন্দু-মুসলমান, মন্দির-মসজিদের রাজনীতির ওপর সজোরে ঘা।

    বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে কুচ্ছো করবার প্রবণতা তো বাঙালির আজকের নয়।

    অমৃতসরের এম এ ও (মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল) কলেজের এক লাজুক মুখচোরা অধ্যাপক ছিলেন আপনি ফয়েজ।

    বাংলায় ভোটবাক্স ভরাতে বাংলার সাহিত্যিকদের লেখাকেই ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করছেন রাজনীতিকরা।

    আহ ... ফয়েজ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested