‘শিক্ষার আলো নাকি / ঘরে ঘরে জ্বলবে, / আমাদের ঘর নেই, / সে কথা কে বলবে’। সূর্য'র হাতে একটা গোলাপি কাগজের পোস্টারে আঁকাবাঁকা হরফে লেখা কথাগুলো।
সূর্য ওঠে গড়িয়াহাট ব্রিজের তলায়, ঘুম থেকে ওঠে। গড়িয়াহাটে ব্রিজের তলার তাদের অস্থায়ী জীবন, সঙ্কট সেই জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। ব্রিজের নীচের ঝুপড়িতে বাস শ্রাবণী, গুল্লুরা ‘গড়িয়াহাট সংহতি ইস্কুল’-এ পড়ে দাদা দিদিদের কাছে। সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে রেডিওতে যখন ভেসে আসছে রাষ্ট্রনেতাদের ‘দেশপ্রেম’-এর বাণী, তখন গড়িয়াহাটের ঝুপড়িবাসী ছেলেমেয়ের দল ছবি আঁকছে রাস্তায়, কাগজে। কেউ লিখছে, “শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার”, কেউ বা কল্পনায় ভর করে ছবি আঁকছে না যাওয়া স্কুল বাড়িটার। প্রাক মহামারী সময় থেকেই স্কুলছুটের তালিকায় সূর্য, গুল্লুদের নাম। সংবিধানের পাতাতেই আটকে “The right of children to free and compulsory education act”। বাস্তবে বিপন্ন শৈশব ,বিপন্ন শিক্ষার অধিকার। বঞ্চনাটা ছিলই, দীর্ঘ দু’বছরের লকডাউন ফাটলটা আরও চওড়া করল।
দক্ষিণ কলকাতায় যাদবপুর থানার পিছনে বেঙ্গল ল্যাম্প বস্তির অনিমেষ, স্নেহারা স্কুলে যেত লকডাউনের আগে। সরকারের উদাসীনতায় স্কুলে আজও তালা, অনেকেই ভুলেছে প্রাথমিক অক্ষর জ্ঞান। আজকাল ওরা নিজেরাই দল বেঁধে লেখাপড়া করতে বসে নিয়ম করে। গত 26 জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে যখন বিরাট ট্যাবলোতে বৈদিক ঋষি গৈরিক শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন, করতালি পড়ছে মুহূর্মুহূ; ঠিকই তখন পতাকা উড়ছিল বস্তিতে। নিপীড়িত দেশবাসীর নিশান। বেঙ্গল ল্যাম্পের পড়ুয়ারা চর্চা করছিল সংবিধানে লিখিত শিক্ষার অধিকার নিয়ে। ক্লাস 5 -এর স্নেহা রঙ পেনসিলে স্কুলবাড়ির ছবি এঁকে লিখছে ‘Reopen School’। এভাবেই 73 তম সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রান্তিক সমাজের পড়ুয়াদের ভাবনায় প্রতিফলিত হল শিক্ষা চেতনা।
হুগলির শ্রীরামপুরের মেলাবাড়ি বস্তির আকাশ, রাখী, কালুরা বাঁশিতে সুর তুললো, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হল বলিদান’, তিন রঙা পতাকা উড়িয়ে বিকেলের আবছা আলোয় লেখা হচ্ছে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সাংবিধানিক অধিকারের কথা। ক্লাসরুম আর ফুলের ছবি আঁকছিল পিউ আর দেবী। পাশেই শ্রমজীবী নারীদের জটলায় কথা চলছিল, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে৷ প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া রাখী, কালুরা। ভগ্নপ্রায় সরকারি স্কুল থেকে যেটুকু শিখেছিল ওরা, তাও ভুলেছে দু'বছরের অনভ্যাসে। তবু, স্মৃতি থেকে অক্ষর টেনে ক্লাস 6 -এর মন্দিরা লিখল, ‘স্কুলে যাব, স্কুল খোলো’। আর যাদের মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল, তাদের কারও বিয়ে পরের মাসে, কেউ গেছে দিনমজুরির কাজে। শিক্ষা জীবন মুছে তাদের এখন ‘শ্রমজীবন’-এর পালা!
আরও পড়ুন: ছাত্র তো শিক্ষকেরই, শাসক যাই করুক
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আজও উত্তর দিতে পারেননি কবে খুলবে পাঠশালার দরজা। অপরিকল্পিত ভাবে শুরু হতে চলেছে দুয়ারে স্কুল। অন্যদিকে, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের বিপুল অংশ দখল করছে প্রাইভেট কোম্পানিগুলি। প্রতিটি পদক্ষেপেই লঙ্ঘিত হচ্ছে শিক্ষার অধিকার। তাই 2022 সালেই সাধারণতন্ত্র দিবসে শহর থেকে মফ:স্বলের প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীরা সমবেত স্বরে জানাল স্কুল খোলার দাবি। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের কথা তবু পৌঁছয় না শাসকের কানের পর্দা ভেদ করে। তাঁরা ব্যস্ত আছেন সাধারণতন্ত্রকে কারাগারে বন্দি করে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়।
সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নয়া ময়দান কুতুব মিনার
মানিকতলা খালপাড়ের ঝুপড়ির ছেলেমেয়েরা সামিল হল মাতৃভাষা দিবসের প্রভাতফেরিতে।
রেলস্টেশনের চাতালে লকডাউনে স্কুলছুট কিশোরী রুকুর জীবন যেন সভ্যতার প্রদীপের তলার পোড়া পিলসূজ।
দারাং জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যা ও উচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে রয়েছে একাধারে জমির অধিকারের প্রশ্ন
মিথ্যা ভাষ্য, ঘৃণা ভাষণকে হাতিয়ার করে ধর্ম সভায়, নির্বাচনে মঞ্চে সঙ্ঘ, বিজেপি।
শাসকবিরোধী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলি প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করলেন নির্মল মাজি