×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদের নতুন ঢেউ

    রাতুল গুহ | 11-04-2022

    প্রতীকী ছবি।

    কৃষক আন্দোলনের ধাক্কা, বাংলার নির্বাচনী পরাজয়ের ‘দুঃসময়’ কাটিয়ে উত্তরপ্রদেশে ভাল ফলের আবার পুরোনো ছন্দে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাপাদাপি শুরু! উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে (UP Election) জয়লাভ অক্সিজেন দিয়েছে সংঘ পরিবার, বিজেপি (BJP)-কে। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দাঁড়িপাল্লায় কাঁটাটা আবার অতি দক্ষিণ দিকে ঝুঁকেছে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলল রাজস্থান থেকে উত্তরপ্রদেশ, দেশের সর্বত্র।

     

    স্থান রাজস্থানের করৌলি, মূলধারার সংবাদে শিরোনামে আসেনি দাঙ্গার সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি। গত 2 এপ্রিল একদিকে ছিল নবরাত্রির প্রথম দিন, অন্যদিকে রমজান মাসের প্রথমদিন। হিন্দুত্ববাদীদের জন্য আদর্শ সময় সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের। স্থানীয় একটি মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হিন্দু ‘ধর্মপ্রাণ’ যুবকদের মিছিল জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখে। এডিজি'র বক্তব্য অনুযায়ী, মসজিদ থেকে পাথর ছোঁড়া হয় মিছিলে এবং তার প্রতিক্রিয়াতেই হিন্দু সংগঠনের মিছিল থেকে আক্রমণ করা হয় মসজিদে। এমন নির্দিষ্ট ঘটনা পরম্পরার কোনও প্রমাণ অবশ্য নেই। আছে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, গ্যারেজ, দোকান। আছে আতঙ্কিত মানুষের জুবুথুবু হওয়া, সর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা অবস্থা।

     

     

    উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শের বিষবৃক্ষ ও তার শিকড় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্তরে স্তরে বিস্তৃত, তারও প্রমাণ পাওয়া গেল করৌলির সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার বাতাবরণে। 14 ও 18 বছরের দুই কিশোরকে ঘটনার দিন রাতে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। রাতভর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ছেলে দু’টি। হাতে পায়ে দগদগে ক্ষত নিয়ে তারা জানায়, পুলিশ কর্মচারীদের একাংশ ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে প্ররোচিত করে, দাঙ্গা পরিস্থিতির জন্য তাদের দোষারোপ করতে থাকে। পুলিশ আধিকারিকরা অবশ্য এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেননি, স্বভাবিক ভাবেই।

     

    সিতাপুর, উত্তরপ্রদেশ। নবরাত্রি উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘ধর্মীয়’ মিছিলে ফের মুসলমান নারীদের ধর্ষণের হুমকি দেন আঞ্চলিক মহান্ত বজরং মুনি দাস। মহান্তের সংখ্যালঘু ও নারী বিদ্বেষী বক্তব্য শুনে উল্লাসে ফেটে পড়ে মিছিল। এটি অবশ্য কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, লাগাতার মুসলমান বিদ্বেষ ও হিন্দুত্বের আস্ফালন সংঘ পরিবারের প্রকল্প মেনেই।

     

    রাজনৈতিক ভাবে যেমন সক্রিয় হিন্দুত্ববাদীরা, সক্রিয় সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতেও। ইতিহাসকে বিকৃত করে ভারতবর্ষের সম্প্রীতি, বৈচিত্র্যকে উপড়ে হিন্দু শ্রেষ্ঠত্বের নতুন বয়ানের নির্মাণ হয়ে চলেছে লাগাতার। কাশ্মীর ফাইলসের মতো প্রোপাগান্ডা ফিল্ম রামনবমীর ঠিক একমাস আগেই কেন প্রকাশিত হল, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কাশ্মীর ফাইলসের মতো হিন্দুত্বের প্রকল্প আসলে গেরুয়া বাহিনীর ‘মরাল বুস্ট আপ’-এর জন্যই।

     

    রাজস্থান হোক কিংবা উত্তরপ্রদেশ এমনকি ‘সম্প্রীতির বাংলা’, সর্বত্র প্রকট গৈরিকীকরণের প্রভাব। মহল্লায় বস্তিতে আদিবাসী পল্লীতে, সমাজের তলা থেকে নিবিড়ে চলছে তার নির্মাণ। গতকালের  রামনবমীর উদযাপন আরও একবার জানান দিয়ে গেল আরএসএস-এর শাখাপ্রশাখার বিস্তার, তার সামাজিক অস্তিত্ব। এলাকায় এলাকায় অস্ত্র মিছিলে হিন্দুরাষ্ট্রের আগমনী বার্তা স্পষ্ট। রামনবমীতে আমিষ খাওয়া নিয়ে আগেই বিজেপি নেতারা ফতোয়া জারি করেছিলেন। কাল রাতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাবেরী হস্টেলে চলল এবিভিপি-র জোরজুলুম। মাংস খাওয়ার ‘অপরাধে’ আক্রমণ নামে ছাত্রছাত্রীদের ওপর। একদিকে সমাজের তলা থেকে হিন্দুত্বের বুনন, অন্যদিকে মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রগুলিতে পরিকল্পিত  আক্রমণ – দু’য়ের মিশ্রণে ভারতবর্ষে বহুত্ব, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার সার্বিক ধারণাকে খণ্ডন করে এগোচ্ছে বাবরি ভাঙা রথের চাকা। সভ্যতার এই সংকটে কোন পথে সম্ভব গৈরিক দৈত্যের মোকাবিলা, উত্তর অজানা আজও।

     


    রাতুল গুহ - এর অন্যান্য লেখা


    শাসকবিরোধী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলি প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করলেন নির্মল মাজি

    সরাসরি ধর্মের জিগির না তুলে অর্থনৈতিক শোষণ এবং বঞ্চনার মাধ্যমে ভারতের মুসলিম সমাজকে দুর্বল করার চেষ্

    বেকারত্বে জীর্ণ দেশের যৌবন, বিক্ষুব্ধ কর্মপ্রার্থীরা পথে নামছেন দেশের নানান প্রান্তে

    দারাং জেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যা ও উচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে রয়েছে একাধারে জমির অধিকারের প্রশ্ন

    মানিকতলা খালপাড়ের ঝুপড়ির ছেলেমেয়েরা সামিল হল মাতৃভাষা দিবসের প্রভাতফেরিতে।

    ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে গীতার শ্লোক, মোদীজির মহৎ কীর্তি।

    দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদের নতুন ঢেউ-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested